leadT1ad

ছাত্র নেতৃত্বের এনসিপি কি ভেঙে যাচ্ছে

এনসিপির লোগো। সংগৃহীত ছবি

হঠাৎ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়লেন তাসনিম জারা। জ্যেষ্ঠ এই যুগ্ম আহ্বায়ককে ঢাকা-৯ আসনে দল নির্বাচনের টিকিট দিয়েছিল। পদত্যাগপত্রে জারা ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও এনসিপি সূত্রের খবর, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট নিয়ে অসন্তুষ্টি থেকে জারা পদত্যাগ করেছেন।

শুধু জারা নন, এনসিপির জ্যেষ্ঠ নারী নেতাদের অধিকাংশ জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে জোটের বিরুদ্ধে। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব নাহিদ সারোয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন, যুগ্ম সদস্য সচিব নুসরাত তাবাসসুমসহ কয়েকজন দলকে আগেই নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।

কেমব্রিজে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রিধারী জারাকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল এনসিপির ‘পোস্টার বয়’ বলা হতো। গত ২৫ ডিসেম্বর এনসিপির চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক দল ভুল পথে অভিযোগ করে পদত্যাগ করেছেন। তিনিও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন।

দুজনের পদত্যাগের মধ্যেই শনিবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে স্মারকলিপি দিয়েছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ সদস্য।

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা ও দলীয় মূল্যবোধের আলোকে সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তি-সংক্রান্ত স্মারকলিপি’ শিরোনামের চিঠিতে বলা হয়, স্বাক্ষরকারীরা দলের প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে’ তাদের ‘গভীর উদ্বেগ ও অবস্থান’ সামনে আনতে চান।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলীয় জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে যে আলোচনা সামনে এসেছে, সে বিষয়ে আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের আপত্তি জানাচ্ছি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যায় সহযোগিতা এবং সে সময় সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ প্রশ্নে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও এনসিপির মূল্যবোধের সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন স্বারকলিপিদাতারা।

তারা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের জোট এই নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং আমাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া, দেড় হাজার ব্যক্তির কাছে মনোনয়নপত্র বিক্রি, পরে ১২৫ প্রার্থী ঘোষণা এবং এখন ‘অল্প কিছু আসনের’ জন্য জোটে যাওয়ার বিষয়গুলো ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল’ বলেও মনে করেন এসব নেতারা।

জামায়াতের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক জোটে না যাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার আহ্বানও জানান তারা। এমন প্রেক্ষাপটে সামনে এসেছে– এনসিপি কি ভেঙে যাচ্ছে?

এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা স্ট্রিমকে বলেছেন, নতুন বন্দোবস্ত, নতুন রাজনীতির প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট হয়ে অনেকে এনসিপিতে সামিল হন। সে জন্য অনেকে ব্যবসা, চাকরি এমনকি ক্যারিয়ার পর্যন্ত কুরবান করেছেন। কিন্তু ৩০০ আসনের প্রস্তুতি নিয়ে হঠাৎ করে গোটা ত্রিশেক আসনের লোভে জামায়াতের কাছে বিকিয়ে দেওয়াকে নেতারা ভালোভাবে নিতে পারেননি। দলের সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ উল্লেখ করে তারা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

সামান্তা শারমিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অসহায় এক মোমেন্ট পার করছি! এ কেমন দোলাচল? তীরে এসে তরী ডুবালে এদেশের কী হবে?’ নুসরাত তাবাসসুম লিখেছেন, ‘নীতির চাইতে রাজনীতি বড় না। কমিটমেন্ট ইজ কমিটমেন্ট।’

এনসিপির যুগ্ম সচিব সচিব ডা. মাহমুদা মিতু ফেসবুকে লিখেছেন, জুলাই এমনি এমনি আসেনি। এই নাহিদ ইসলামের থাইয়ের রক্ত জমাট দাগ আমরা ভুলিনি। আমরা নাহিদ ইসলামে বিশ্বাস করি।

জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীন স্ট্রিমকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছেন অনেকে। তারা সবাই আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে অনলাইনে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এসব নেতার বাইরেও অনেকেই জামায়াতের সঙ্গে জোট চান না।

অবশ্য ফেসবুকে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘রাজনীতি লম্বা রেস, দম রাখা এত সহজ না। পছন্দের বাইরে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়!’ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ফেসবুকে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘আমরা একসঙ্গে লড়ব, বাংলাদেশ গড়ব।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত