হাসান মামুন

গণঅভ্যুত্থানের পর মাঠে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে, তার মধ্যে বিএনপির জনসমর্থন সবচেয়ে বেশি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় যাবে বলে ধারণা সবচেয়ে জোরদার। অথচ দলটির সক্রিয় শীর্ষ নেতা এতদিন ছিলেন দেশে অনুপস্থিত। গণঅভ্যুত্থানের পরও এক বছরের বেশি সময় তাঁকে দলের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে ‘ভার্চুয়ালি’। দায়ের সব মামলা ও রায় থেকে অব্যাহতি লাভের পরও তিনি ফিরতে দেরি করায় নানান জল্পনা ডালপালা মেলেছিল। তাঁর দলেও ছিল অস্বস্তি। সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের সদুত্তর জোগাতে পারছিলেন না তাঁরা।
২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভেতর দিয়ে এ অধ্যায়ের অবসান হলো।
আমরা এক সময় হয়তো জানতে পারব, এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের বাধা ছিল—এমনকি স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও। এ যুগে এসব ঢেকে রাখা তো সহজ নয়। তবে তারেক রহমান দেশে ফেরার পর এ প্রশ্নই বেশি করে আলোচিত হবে যে, রাজনীতিতে এর প্রভাব কী ও কতখানি।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে ইতোমধ্যে। রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে এর সঙ্গে এবার গণভোটও হবে। গণভোটে বিএনপির অবশ্য অত আগ্রহ ছিল না। গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের আগ্রহ ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চাইছিলেন তারা। এর আগে কিছু ‘জরুরি সংস্কার’। বিএনপির নিজেরই ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। গণভোটে ‘না’ জয়যুক্ত হলেও ক্ষমতায় গেলে তারেক রহমানের বিএনপিকে নিজ থেকে দেওয়া এ প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে।
তাঁর মা খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর জনাব রহমানের পরিপূর্ণ নেতৃত্বে থাকাকালেই বিএনপি ওই সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এর প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে থাকলেও তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘সহমত ভাই’রা এ নিয়ে করছিলেন হাস্যপরিহাস। ভাবখানা এমন ছিল যে, বিএনপি তো আর কখনও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে ঘটা করে সংস্কার কর্মসূচি দেওয়ার কী অর্থ!
আমরা তো দেখলাম, গণঅভ্যুত্থানের পর বিশেষ করে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দীর্ঘ আলোচনা হলেও এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি তেমন নেই। এজন্য আবার বিএনপিকে দায়ী করেছে সংস্কারে অতিউৎসাহীরা। চটজলদি আর ব্যাপক সংস্কারে না হলেও গণভোটে অবশ্য সম্মত হয়েছে বিএনপি। হালে গণভোটের প্রশ্ন আবার চাপা পড়েছে সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে আসায়। গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য তো নির্বাচন হতেই হবে। আর সত্যি বলতে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই দেশে ফিরেছেন তারেক রহমান। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ না হলেও তিনি ফিরতেন। সুযোগ থাকলে আরও আগেই ফিরতেন তারেক রহমান।
বিমান থেকে নেমেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক সহায়তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জনাব রহমান। অতঃপর নজিরবিহীন গণসংবর্ধনা তিনি পেয়েছেন দলীয় উদ্যোগে। সারা দেশের মানুষ এ ‘ইভেন্ট’ সরাসরি অনুসরণ করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশি আর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও কম অনুসরণ করেনি। তারেক রহমানকে ‘ভাবি প্রধানমন্ত্রী’ বলে অভিহিত করা হয়েছে আরও আগেই। এভাবে অভিহিত করে নেতার কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করার রীতিও রয়েছে। তারেক রহমানের বেলায় সেটি ঘটতে শুরু করেছে বললে ভুল হবে না।
দেশে উপস্থিত থেকে তিনি কীভাবে এখন দল সামলাবেন আর নির্বাচন মোকাবিলা করবেন, সে প্রশ্ন অবশ্য আরও নিকটের। নতুন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেও সামলাতে হবে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। দেশে ফিরেই তারেক রহমান জুতা খুলে মাটির স্পর্শ নিয়েছেন। এ যেন মায়ের ‘স্নেহস্পর্শ’ গ্রহণ করা। শব্দটি তিনি ব্যবহার করেছিলেন লন্ডন থেকে দেওয়া সেই ফেসবুক পোস্টে, যেখানে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জটিলতার বিষয়ে প্রথম মুখ খোলেন তারেক রহমান। তাতে বাধার প্রাচীর নড়ে উঠেছিল। মাঠে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা দেশে ফিরবেন; কে তাঁকে আটকাবে? এই সেই দল, যাদের নানান অপকৌশলে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি হাসিনা সরকার। তাই প্রশ্ন উঠেছিল, গণঅভ্যুত্থানের পরেও কি দলটির ক্ষমতায় আসার পথে বিছিয়ে রাখা হয়েছে কাঁটা?
তারেক রহমান ফেরার পর তাঁকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর নেতারা। নিজের মতো করে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কেউ বলেছেন, ইতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজনীতিতে। কেউ বলেছেন, সহাবস্থানের সংস্কৃতি জোরদার হবে; সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়বে। কেউ আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পরিণতিতেই তারেক রহমান ফিরলেন দেশে। তিনি যেন এর প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পদক্ষেপ নেন।
গণসংবর্ধনায় দেওয়া বক্তৃতায় তারেক রহমান যা বলেছেন, তাতে দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে তাঁকে দেখা গেছে সচেষ্ট। গণঅভ্যুত্থানের পর লন্ডন থেকে যে ধারায় বক্তব্য রাখছিলেন, সেটাকেই আরও জোরালো করেছেন তিনি দেশের মাটিতে পা রেখে। এটা যেন ছিল ক্ষমতায় আসার আগেই দেওয়া প্রধানমন্ত্রীসুলভ বক্তৃতা। মাঠে থাকা নানা বর্ণের উগ্রপন্থীরা অখুশি হলেও তাদের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল-মতের শান্তিপ্রিয় মানুষ এতে আশ্বস্ত হয়েছে। বিএনপির সরাসরি সমর্থক না হয়েও অনেকেই ভাবতে শুরু করেছে, তারেক রহমান বুঝি একটা আশ্রয়ের মতো কিছু।
জননেতা তিনিই, যার কাছে তার প্রতিপক্ষের মানুষও নিরাপদ। নিরাপদ তার বক্তব্য ও পদক্ষেপ থেকে। বিপুল জনসমাগমের মধ্যে দেওয়া বক্তৃতায় তারেক রহমান সেই অনুভূতি সঞ্চার করতে পেরেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর যত দিন যাচ্ছিল, ততই কিন্তু মাঠে অনুভূত হচ্ছিল নিরাপত্তাবোধের অভাব। দিনের পর দিন চলে ‘মব ভায়োলেন্স’। অন্তর্বর্তী সরকারকেও এ ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্বিকার কিংবা বিবৃতি দিয়ে দায়সারা অবস্থান নিতে। চলে আবার এর পক্ষে ‘বৈধতা উৎপাদন’। এক মবের কারণে আস্থায় ধস নামে ক্ষুদে উদ্যোক্তা পর্যায় পর্যন্ত। কে কখন কোন অজুহাতে আক্রান্ত হয়, কে জানে! দেশে প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমানের উপস্থিতি কি এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে?
মবের কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পরও যেভাবে হামলা হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দুই মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে, তাতে কি তার বক্তব্যে আস্থা রাখা যায়? পুলিশ শুধু নয়; মাঠে হাজির সেনাদের তরফ থেকেও প্রত্যাশিত সক্রিয় ভূমিকা কি দেখতে পাচ্ছে মানুষ? এ অবস্থায় দেশে ফিরে দেওয়া প্রথম বক্তৃতায় ‘নিরাপদ বাংলাদেশ’ অর্জনের যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারেক রহমান, তাতে বিএনপির ভূমিকার দিকেই আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকবে শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাঁরা এখনও আশা করে আছে, সব দল-মতের নিরপরাধ মানুষ একত্রে বসবাস করতে পারবে। বৈষম্য কতটা দূর হবে জানা নেই; তবে ‘সুযোগের সমতা’ অর্জনের দিকে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব হবে না।
বিএনপির একশ্রেণির নেতা-কর্মীর জন্যও দেশের অনেক স্থানে মানুষের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের পর, নতুন করে। মবের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে; তবে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগই বেশি। এ অবস্থায় তারেক রহমান সাত সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন নানান অভিযোগে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ কম ছিল না। এজন্য দলের সঙ্গে সঙ্গে তারেক রহমানর দুর্নামও কম হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এটাকে ‘ক্যাশ’ করতে স্বভাবতই ভোলেনি। দু-একটি ঘটনায় সরাসরি তাঁর নামে এদের কোনো কোনো অংশ থেকে যে স্লোগান তোলা হয়েছে, তা ছিল অবিশ্বাস্য। বিএনপির একাংশই কিন্তু তৈরি করে দিয়েছে এর প্রেক্ষাপট। তাঁরা মনে করেছিল, দেশে বুঝি নিছক একটা ‘সরকার পরিবর্তন’ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মর্ম তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেনি।
নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই দলের এ অংশটি হয়ে উঠেছে জনাব রহমানের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে দলের জনপ্রিয়তা তারা কতটা কমিয়েছে, কে জানে। মাঠে থাকা প্রতিপক্ষ এখান থেকে কতখানি সুবিধা নিতে পারবে, সেটাও স্পষ্ট নয়। জরিপের ফল ধরে চট করে কিছু বলে দেওয়াও সঙ্গত হবে না। তবে বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোটারের মতিগতি বোঝা ভার। এক সময় বিএনপি ছিল তরুণদের আকর্ষণের কেন্দ্রে। এটা তারেক রহমানের চেয়ে কেউ ভালো জানে না। চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ফল দেখে তাঁর মনের প্রতিক্রিয়াও আন্দাজ করা যায়। তাই আগামী নির্বাচনে শুধু নয়; সরকার গঠনে সক্ষম হলেও একালের তরুণ জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের মতো পদক্ষেপ নিতে হবে জনাব রহমানকে। শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে তাঁদের জন্য চাই উপযুক্ত কাজের সুযোগ। সবাইকে উদ্যোক্তা হতে বলা তো কাজের কথা নয়। কাজের কাজ হলো উদ্যোক্তাদের ভূমিকা রাখতে দেওয়া, যাতে তাঁরা কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর আরও স্থবির হয়ে আসা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিএনপির চিন্তাভাবনা কী, সেটা বেশি করে আসতে হবে ‘উই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’-এর মধ্যে। আর দ্রুতই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে হবে তারেক রহমানকে। এতে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন খাত সংস্কারে বিএনপির অঙ্গীকার যেমন স্পষ্ট করতে হবে; তেমনি অর্থনীতি সংস্কারের দিকনির্দেশনাও গভীরভাবে প্রত্যাশিত। অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও অর্থনীতি সংস্কারে কোনো কমিশন কেন করেনি, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এখন তাদের কাছে সুষ্ঠু আর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনটাই কেবল প্রত্যাশিত। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে ‘অপরিচ্ছন্ন’ কিছু হয়তো করা হবে না; তবে শান্তি-শৃঙ্খলা রজায় রাখতে পারা নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারেক রহমান ও তাঁর দলের কী করণীয়, সেটাও স্পষ্ট নয়।
গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে দেওয়ার প্রশ্নে একমত না হলে সেটা অর্জন করা যাবে বলে মনে হয় না। আর এ ক্ষেত্রে তাদেরই বেশি করে গোলযোগ সৃষ্টির আশংকা, যারা প্রায় নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে রয়েছে। নির্বাচনকে তারা নিত্যনতুন শর্তের সম্মুখীন করছিল। শুধু বিচার আর সংস্কার নয়; আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে হবে বলেও গোঁ ধরেছিল তারা।
সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে ক্ষমতাচ্যুতরাই বাধা নয়। দেশের ভেতর থেকেও বাধা রয়েছে বলে মনে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরকার একটি মহলও এটা হতে দিতে চায় না বলে অভিযোগ কিন্তু দুর্বল হয়নি। দুই মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে হামলার পর একজন বরেণ্য সম্পাদক বলেছেন, এ ধরনের হামলা হতে দেওয়া হয়েছে! নজিরবিহীর ওই ঘটনার পর বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিকরা দলটির অবস্থান দেখতে চেয়েছেন তথ্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। এ অবস্থায় তারেক রহমানকে স্পষ্ট করতে হবে, এ ক্ষেত্রে কোনোরকম ‘কালাকানুন’ আর থাকবে কিনা। ইতোপূর্বে ক্ষমতায় ছিলেন বলে এ ক্ষেত্রে তাদেরও দায় রয়েছে। ক্ষমতায় থেকে ভিন্নমত সহ্য করাটা অনুশীলনেরও বিষয়। দুর্নীতির মনোভাব ত্যাগ করতে না পারলে এ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। আর সন্ত্রাস হলো এর অনিবার্য অনুষঙ্গ।
স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে ১৭ বছর পর দেশে ফেরায় তারেক রহমানকে ঘিরে তার দলে যে আনন্দ-উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সেটাকে দেশের সিংহভাগ মানুষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া তো সহজ নয়। শান্তিপ্রিয় মানুষ সংশয়ে আছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে। তারেক রহমানকে সে ক্ষেত্রে সংশয় ঘোচাতে হবে বলিষ্ঠভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে। নির্বাচনবিরোধী সব অপশক্তি যেন গুটিয়ে যায় দেশজুড়ে এর পক্ষে গড়ে ওঠা আবহ দেখে। ক্ষমতায় যেতে পারলে তিনি কতটা কী করবেন, সেটা মানুষ দেখবে পরে। ভালো কিছুর জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে তারা জানে। সুযোগ পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতাও রয়েছে এ জনগোষ্ঠীর।
গণঅভ্যুত্থানের মতো অসাধারণ সুযোগকে যারা ‘রাজনৈতিক দুর্যোগে’ পরিণত করতে চেয়েছে, তাদের বিপরীতে কাজের ভেতর দিয়ে আরও স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে তারেক রহমানকে। দলের বাইরে গিয়ে জননেতা হওয়ার সেটাই পথ। এ ক্ষেত্রে জনপ্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণেও রাখতে হবে তাকে। ‘বাস্তবায়নযোগ্য অঙ্গীকার’ করতে হবে শান্তি, পুনর্গঠন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী জনতার সামনে। যাদের মধ্যে অশান্তি, বিভাজন ও হঠকারিতার ঝোঁক প্রবল; তাদেরকে বুঝতে চাওয়াও জরুরি। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংলাপের মনোভাব জারি রাখতে হবে। সম্ভাব্য সব পক্ষকে করে তুলতে হবে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী যাত্রার অংশীজন।
কাজটা কঠিন; তা সত্ত্বেও এর ৫০ শতাংশেরও বেশি করতে না পারলে চলবে না।
হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলাম লেখক

গণঅভ্যুত্থানের পর মাঠে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে, তার মধ্যে বিএনপির জনসমর্থন সবচেয়ে বেশি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় যাবে বলে ধারণা সবচেয়ে জোরদার। অথচ দলটির সক্রিয় শীর্ষ নেতা এতদিন ছিলেন দেশে অনুপস্থিত। গণঅভ্যুত্থানের পরও এক বছরের বেশি সময় তাঁকে দলের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে ‘ভার্চুয়ালি’। দায়ের সব মামলা ও রায় থেকে অব্যাহতি লাভের পরও তিনি ফিরতে দেরি করায় নানান জল্পনা ডালপালা মেলেছিল। তাঁর দলেও ছিল অস্বস্তি। সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের সদুত্তর জোগাতে পারছিলেন না তাঁরা।
২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভেতর দিয়ে এ অধ্যায়ের অবসান হলো।
আমরা এক সময় হয়তো জানতে পারব, এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের বাধা ছিল—এমনকি স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও। এ যুগে এসব ঢেকে রাখা তো সহজ নয়। তবে তারেক রহমান দেশে ফেরার পর এ প্রশ্নই বেশি করে আলোচিত হবে যে, রাজনীতিতে এর প্রভাব কী ও কতখানি।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে ইতোমধ্যে। রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে এর সঙ্গে এবার গণভোটও হবে। গণভোটে বিএনপির অবশ্য অত আগ্রহ ছিল না। গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের আগ্রহ ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চাইছিলেন তারা। এর আগে কিছু ‘জরুরি সংস্কার’। বিএনপির নিজেরই ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। গণভোটে ‘না’ জয়যুক্ত হলেও ক্ষমতায় গেলে তারেক রহমানের বিএনপিকে নিজ থেকে দেওয়া এ প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে।
তাঁর মা খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর জনাব রহমানের পরিপূর্ণ নেতৃত্বে থাকাকালেই বিএনপি ওই সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এর প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে থাকলেও তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘সহমত ভাই’রা এ নিয়ে করছিলেন হাস্যপরিহাস। ভাবখানা এমন ছিল যে, বিএনপি তো আর কখনও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে ঘটা করে সংস্কার কর্মসূচি দেওয়ার কী অর্থ!
আমরা তো দেখলাম, গণঅভ্যুত্থানের পর বিশেষ করে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দীর্ঘ আলোচনা হলেও এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি তেমন নেই। এজন্য আবার বিএনপিকে দায়ী করেছে সংস্কারে অতিউৎসাহীরা। চটজলদি আর ব্যাপক সংস্কারে না হলেও গণভোটে অবশ্য সম্মত হয়েছে বিএনপি। হালে গণভোটের প্রশ্ন আবার চাপা পড়েছে সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে আসায়। গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য তো নির্বাচন হতেই হবে। আর সত্যি বলতে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই দেশে ফিরেছেন তারেক রহমান। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ না হলেও তিনি ফিরতেন। সুযোগ থাকলে আরও আগেই ফিরতেন তারেক রহমান।
বিমান থেকে নেমেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক সহায়তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জনাব রহমান। অতঃপর নজিরবিহীন গণসংবর্ধনা তিনি পেয়েছেন দলীয় উদ্যোগে। সারা দেশের মানুষ এ ‘ইভেন্ট’ সরাসরি অনুসরণ করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশি আর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও কম অনুসরণ করেনি। তারেক রহমানকে ‘ভাবি প্রধানমন্ত্রী’ বলে অভিহিত করা হয়েছে আরও আগেই। এভাবে অভিহিত করে নেতার কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করার রীতিও রয়েছে। তারেক রহমানের বেলায় সেটি ঘটতে শুরু করেছে বললে ভুল হবে না।
দেশে উপস্থিত থেকে তিনি কীভাবে এখন দল সামলাবেন আর নির্বাচন মোকাবিলা করবেন, সে প্রশ্ন অবশ্য আরও নিকটের। নতুন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেও সামলাতে হবে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। দেশে ফিরেই তারেক রহমান জুতা খুলে মাটির স্পর্শ নিয়েছেন। এ যেন মায়ের ‘স্নেহস্পর্শ’ গ্রহণ করা। শব্দটি তিনি ব্যবহার করেছিলেন লন্ডন থেকে দেওয়া সেই ফেসবুক পোস্টে, যেখানে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জটিলতার বিষয়ে প্রথম মুখ খোলেন তারেক রহমান। তাতে বাধার প্রাচীর নড়ে উঠেছিল। মাঠে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা দেশে ফিরবেন; কে তাঁকে আটকাবে? এই সেই দল, যাদের নানান অপকৌশলে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি হাসিনা সরকার। তাই প্রশ্ন উঠেছিল, গণঅভ্যুত্থানের পরেও কি দলটির ক্ষমতায় আসার পথে বিছিয়ে রাখা হয়েছে কাঁটা?
তারেক রহমান ফেরার পর তাঁকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর নেতারা। নিজের মতো করে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কেউ বলেছেন, ইতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজনীতিতে। কেউ বলেছেন, সহাবস্থানের সংস্কৃতি জোরদার হবে; সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়বে। কেউ আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পরিণতিতেই তারেক রহমান ফিরলেন দেশে। তিনি যেন এর প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পদক্ষেপ নেন।
গণসংবর্ধনায় দেওয়া বক্তৃতায় তারেক রহমান যা বলেছেন, তাতে দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে তাঁকে দেখা গেছে সচেষ্ট। গণঅভ্যুত্থানের পর লন্ডন থেকে যে ধারায় বক্তব্য রাখছিলেন, সেটাকেই আরও জোরালো করেছেন তিনি দেশের মাটিতে পা রেখে। এটা যেন ছিল ক্ষমতায় আসার আগেই দেওয়া প্রধানমন্ত্রীসুলভ বক্তৃতা। মাঠে থাকা নানা বর্ণের উগ্রপন্থীরা অখুশি হলেও তাদের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল-মতের শান্তিপ্রিয় মানুষ এতে আশ্বস্ত হয়েছে। বিএনপির সরাসরি সমর্থক না হয়েও অনেকেই ভাবতে শুরু করেছে, তারেক রহমান বুঝি একটা আশ্রয়ের মতো কিছু।
জননেতা তিনিই, যার কাছে তার প্রতিপক্ষের মানুষও নিরাপদ। নিরাপদ তার বক্তব্য ও পদক্ষেপ থেকে। বিপুল জনসমাগমের মধ্যে দেওয়া বক্তৃতায় তারেক রহমান সেই অনুভূতি সঞ্চার করতে পেরেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর যত দিন যাচ্ছিল, ততই কিন্তু মাঠে অনুভূত হচ্ছিল নিরাপত্তাবোধের অভাব। দিনের পর দিন চলে ‘মব ভায়োলেন্স’। অন্তর্বর্তী সরকারকেও এ ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্বিকার কিংবা বিবৃতি দিয়ে দায়সারা অবস্থান নিতে। চলে আবার এর পক্ষে ‘বৈধতা উৎপাদন’। এক মবের কারণে আস্থায় ধস নামে ক্ষুদে উদ্যোক্তা পর্যায় পর্যন্ত। কে কখন কোন অজুহাতে আক্রান্ত হয়, কে জানে! দেশে প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমানের উপস্থিতি কি এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে?
মবের কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পরও যেভাবে হামলা হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দুই মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে, তাতে কি তার বক্তব্যে আস্থা রাখা যায়? পুলিশ শুধু নয়; মাঠে হাজির সেনাদের তরফ থেকেও প্রত্যাশিত সক্রিয় ভূমিকা কি দেখতে পাচ্ছে মানুষ? এ অবস্থায় দেশে ফিরে দেওয়া প্রথম বক্তৃতায় ‘নিরাপদ বাংলাদেশ’ অর্জনের যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারেক রহমান, তাতে বিএনপির ভূমিকার দিকেই আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকবে শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাঁরা এখনও আশা করে আছে, সব দল-মতের নিরপরাধ মানুষ একত্রে বসবাস করতে পারবে। বৈষম্য কতটা দূর হবে জানা নেই; তবে ‘সুযোগের সমতা’ অর্জনের দিকে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব হবে না।
বিএনপির একশ্রেণির নেতা-কর্মীর জন্যও দেশের অনেক স্থানে মানুষের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের পর, নতুন করে। মবের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে; তবে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগই বেশি। এ অবস্থায় তারেক রহমান সাত সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন নানান অভিযোগে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ কম ছিল না। এজন্য দলের সঙ্গে সঙ্গে তারেক রহমানর দুর্নামও কম হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এটাকে ‘ক্যাশ’ করতে স্বভাবতই ভোলেনি। দু-একটি ঘটনায় সরাসরি তাঁর নামে এদের কোনো কোনো অংশ থেকে যে স্লোগান তোলা হয়েছে, তা ছিল অবিশ্বাস্য। বিএনপির একাংশই কিন্তু তৈরি করে দিয়েছে এর প্রেক্ষাপট। তাঁরা মনে করেছিল, দেশে বুঝি নিছক একটা ‘সরকার পরিবর্তন’ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মর্ম তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেনি।
নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই দলের এ অংশটি হয়ে উঠেছে জনাব রহমানের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে দলের জনপ্রিয়তা তারা কতটা কমিয়েছে, কে জানে। মাঠে থাকা প্রতিপক্ষ এখান থেকে কতখানি সুবিধা নিতে পারবে, সেটাও স্পষ্ট নয়। জরিপের ফল ধরে চট করে কিছু বলে দেওয়াও সঙ্গত হবে না। তবে বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোটারের মতিগতি বোঝা ভার। এক সময় বিএনপি ছিল তরুণদের আকর্ষণের কেন্দ্রে। এটা তারেক রহমানের চেয়ে কেউ ভালো জানে না। চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ফল দেখে তাঁর মনের প্রতিক্রিয়াও আন্দাজ করা যায়। তাই আগামী নির্বাচনে শুধু নয়; সরকার গঠনে সক্ষম হলেও একালের তরুণ জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের মতো পদক্ষেপ নিতে হবে জনাব রহমানকে। শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে তাঁদের জন্য চাই উপযুক্ত কাজের সুযোগ। সবাইকে উদ্যোক্তা হতে বলা তো কাজের কথা নয়। কাজের কাজ হলো উদ্যোক্তাদের ভূমিকা রাখতে দেওয়া, যাতে তাঁরা কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর আরও স্থবির হয়ে আসা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিএনপির চিন্তাভাবনা কী, সেটা বেশি করে আসতে হবে ‘উই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’-এর মধ্যে। আর দ্রুতই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে হবে তারেক রহমানকে। এতে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন খাত সংস্কারে বিএনপির অঙ্গীকার যেমন স্পষ্ট করতে হবে; তেমনি অর্থনীতি সংস্কারের দিকনির্দেশনাও গভীরভাবে প্রত্যাশিত। অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও অর্থনীতি সংস্কারে কোনো কমিশন কেন করেনি, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এখন তাদের কাছে সুষ্ঠু আর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনটাই কেবল প্রত্যাশিত। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে ‘অপরিচ্ছন্ন’ কিছু হয়তো করা হবে না; তবে শান্তি-শৃঙ্খলা রজায় রাখতে পারা নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারেক রহমান ও তাঁর দলের কী করণীয়, সেটাও স্পষ্ট নয়।
গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে দেওয়ার প্রশ্নে একমত না হলে সেটা অর্জন করা যাবে বলে মনে হয় না। আর এ ক্ষেত্রে তাদেরই বেশি করে গোলযোগ সৃষ্টির আশংকা, যারা প্রায় নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে রয়েছে। নির্বাচনকে তারা নিত্যনতুন শর্তের সম্মুখীন করছিল। শুধু বিচার আর সংস্কার নয়; আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে হবে বলেও গোঁ ধরেছিল তারা।
সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে ক্ষমতাচ্যুতরাই বাধা নয়। দেশের ভেতর থেকেও বাধা রয়েছে বলে মনে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরকার একটি মহলও এটা হতে দিতে চায় না বলে অভিযোগ কিন্তু দুর্বল হয়নি। দুই মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে হামলার পর একজন বরেণ্য সম্পাদক বলেছেন, এ ধরনের হামলা হতে দেওয়া হয়েছে! নজিরবিহীর ওই ঘটনার পর বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিকরা দলটির অবস্থান দেখতে চেয়েছেন তথ্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। এ অবস্থায় তারেক রহমানকে স্পষ্ট করতে হবে, এ ক্ষেত্রে কোনোরকম ‘কালাকানুন’ আর থাকবে কিনা। ইতোপূর্বে ক্ষমতায় ছিলেন বলে এ ক্ষেত্রে তাদেরও দায় রয়েছে। ক্ষমতায় থেকে ভিন্নমত সহ্য করাটা অনুশীলনেরও বিষয়। দুর্নীতির মনোভাব ত্যাগ করতে না পারলে এ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। আর সন্ত্রাস হলো এর অনিবার্য অনুষঙ্গ।
স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে ১৭ বছর পর দেশে ফেরায় তারেক রহমানকে ঘিরে তার দলে যে আনন্দ-উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সেটাকে দেশের সিংহভাগ মানুষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া তো সহজ নয়। শান্তিপ্রিয় মানুষ সংশয়ে আছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে। তারেক রহমানকে সে ক্ষেত্রে সংশয় ঘোচাতে হবে বলিষ্ঠভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে। নির্বাচনবিরোধী সব অপশক্তি যেন গুটিয়ে যায় দেশজুড়ে এর পক্ষে গড়ে ওঠা আবহ দেখে। ক্ষমতায় যেতে পারলে তিনি কতটা কী করবেন, সেটা মানুষ দেখবে পরে। ভালো কিছুর জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে তারা জানে। সুযোগ পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতাও রয়েছে এ জনগোষ্ঠীর।
গণঅভ্যুত্থানের মতো অসাধারণ সুযোগকে যারা ‘রাজনৈতিক দুর্যোগে’ পরিণত করতে চেয়েছে, তাদের বিপরীতে কাজের ভেতর দিয়ে আরও স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে তারেক রহমানকে। দলের বাইরে গিয়ে জননেতা হওয়ার সেটাই পথ। এ ক্ষেত্রে জনপ্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণেও রাখতে হবে তাকে। ‘বাস্তবায়নযোগ্য অঙ্গীকার’ করতে হবে শান্তি, পুনর্গঠন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী জনতার সামনে। যাদের মধ্যে অশান্তি, বিভাজন ও হঠকারিতার ঝোঁক প্রবল; তাদেরকে বুঝতে চাওয়াও জরুরি। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংলাপের মনোভাব জারি রাখতে হবে। সম্ভাব্য সব পক্ষকে করে তুলতে হবে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী যাত্রার অংশীজন।
কাজটা কঠিন; তা সত্ত্বেও এর ৫০ শতাংশেরও বেশি করতে না পারলে চলবে না।
হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলাম লেখক

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন, তাঁর দুটি ছোট মেয়ের আগুনে পুড়ে মৃত্যু—এই ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন দুঃখ নয়; এগুলো হলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার ধারাবাহিক ট্র্যাজেডি।
১ ঘণ্টা আগে
জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। গত ১৭ নভেম্বরের এই রায়ের বিপরীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ অস্পষ্ট ও রহস্যজনক।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দীর্ঘদিন ধরে প্রবীণতান্ত্রিকতার আধিপত্য লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনীতিকে এমন এক বৃত্তে বন্দী করেছিল, যেখানে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তরুণদের প্রবেশাধিকার ছিল খুব সীমিত।
১ দিন আগে
বিটিভি এদেশের মানুষের শৈশব, কৈশোর আর প্রৌঢ়ত্বের চিরসাথী। সাদা-কালো টেলিভিশন সেটের সামনে পুরো পাড়া মিলে বসে নাটক দেখার সেই নির্মল আনন্দ আজও আপ্লুত করে। ৬১ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় বিটিভি দেশের প্রতিটি বাঁকবদলের সাক্ষী।
২ দিন আগে