আল-জাজিরা এক্সপ্লেইনার

মধ্য এশিয়ায় তাজিকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠছে। তাজিক সরকার জানিয়েছে, চলতি মাসে বেশ কয়েকবার অস্ত্রধারী লোক তাদের সীমান্তে ঢুকেছে। তালেবানদের সঙ্গে তাজিকিস্তানের সম্পর্ক আগে থেকেই নড়বড়ে ছিল। এই অনুপ্রবেশের ঘটনা তাজিক-আফগান সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে।
দুশানবে ও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাজিকিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাজিক কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছে। মূলত এই সন্ত্রাসীদের হামলা ও তাজিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ওই অঞ্চলে কর্মরত চীনা নাগরিকরাও আছেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সপ্তাহে সর্বশেষ লড়াইয়ে তাজিকিস্তানের শামসিদ্দিন শোহিন জেলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ‘তিনজন সন্ত্রাসী’ রয়েছে।
তাজিকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের ১,৩৪০ কিলোমিটারের বিশাল সীমান্ত রয়েছে, যার বেশির ভাগ অংশই অরক্ষিত। তাজিকিস্তান শুরু থেকেই আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের বিরোধিতা করে আসছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে কিছুটা কূটনৈতিক যোগাযোগ থাকলেও সীমান্তে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সংঘর্ষের কারণে তালেবানের গ্রহণযোগ্যতা কমছে ও তারা আদৌ নিরাপত্তা বজায় রাখতে সক্ষম কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই সীমান্ত দক্ষিণ তাজিকিস্তান থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তাজিকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক রাষ্ট্রীয় কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মঙ্গলবার ‘একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের তিন সদস্য’ তাজিক ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। কমিটি আরও জানায়, পরদিন সকালে ওই ব্যক্তিদের অবস্থান শনাক্ত করা হয় এবং তাজিক সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে তাদের গুলি বিনিময় হয়। এতে অনুপ্রবেশকারী তিনজনসহ পাঁচজন নিহত হয়।
তাজিক কর্মকর্তারা সশস্ত্র ব্যক্তিদের নাম বা তারা কোন দলের সদস্য তা নির্দিষ্ট করেননি। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ঘটনাস্থল থেকে তিনটি এম-১৬ রাইফেল, একটি কালাশনিকভ অ্যাসল্ট রাইফেল, সাইলেন্সারযুক্ত তিনটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি নাইট-ভিশন স্কোপ ও বিস্ফোরক জব্দ করেছেন।
দুশানবে জানিয়েছে, গত এক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশ থেকে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এমন হামলা চালানো হলো, যাতে তাদের কর্মীরা প্রাণ হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাজিক কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, এসব হামলা প্রমাণ করে তালেবান সরকার তাদের কথা রাখছে না। আন্তর্জাতিকভাবে তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সন্ত্রাসীদের দমন করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ও চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এক বিবৃতিতে তাঁরা তালেবানকে ‘তাজিকিস্তানের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে ও যৌথ সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
এসব হামলার উদ্দেশ্য কী হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি তাজিকিস্তান। তবে হামলাগুলো ওই এলাকায় কর্মরত চীনা কোম্পানি ও নাগরিকদের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
তাজিকিস্তানের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা হলো চীন। দেশটির খনি, অবকাঠামো ও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের বড় ধরনের বিনিয়োগ আছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ৪৭৭ কিলোমিটারের সীমান্তও রয়েছে, যা পামির পর্বতমালার ওপর দিয়ে চীনের সিনচিয়াং অঞ্চলের সঙ্গে মিশেছে।
গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনা কোম্পানি ও নাগরিকদের লক্ষ্য করে দুটি হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে ২৬ নভেম্বর তাজিক-আফগান সীমান্তের দুর্গম খতলন এলাকায় একটি চীনা সোনার খনি কোম্পানিতে বিস্ফোরকভর্তি ড্রোনের হামলায় তিনজন চীনা নাগরিক নিহত হন।
৩০ নভেম্বর দ্বিতীয় হামলায়, একদল বন্দুকধারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন’-এর কর্মীদের ওপর গুলি চালায়, এতে তাজিকিস্তানের দারভোজ জেলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়।
আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের গ্রামগুলো থেকেই এসব হামলার সূত্রপাত হয়েছে দাবি করলেও তাজিক কর্মকর্তারা হামলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেননি।
এদিকে শুধু তাজিকিস্তান নয়, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও আফগান-পাকিস্তান সীমান্তেও চীনা নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
এমন পরিস্থিতিতে দুশানবেতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস তাদের কোম্পানি ও কর্মীদের সীমান্ত এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি, তাজিকিস্তানে চীনা নাগরিক ও তাদের প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাজিক সরকারকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে চীন।
হামলাকারীদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে হামলার ধরন বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এর পেছনে ইসলামিক স্টেট খোরাসানের (আইএসকেপি) হাত রয়েছে। মূলত তালেবান সরকারকে অপমানিত করা বা হেয় প্রতিপন্ন করাই তাদের লক্ষ্য।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, আফগানিস্তানের ভেতরে বিদেশিদের ওপর হামলা করা আইএসকেপির একটি বড় কৌশল।
ইব্রাহিম বাহিসের মতে, তালেবান নিজেকে নিরাপত্তার রক্ষক হিসেবে দাবি করে। কিন্তু বিদেশিদের ওপর হামলা চালিয়ে আইএসকেপি আসলে তালেবানের সেই ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়, যাতে প্রতিবেশী দেশগুলো মনে করে তালেবান নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
গত ২৮ নভেম্বর চীনা কর্মীদের হত্যার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে কাবুল। এই হামলার জন্য তালেবান অজ্ঞাত সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। তাদের দাবি, ওই গোষ্ঠীটির মূল উদ্দেশ্য হলো এই অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ও দেশগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করা। এ বিষয়ে তারা তাজিকিস্তানকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এই সপ্তাহের সংঘর্ষের পর, তালেবানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি বলেছেন, কাবুল ২০২০ সালের দোহা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ওই চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে পর্যায়ক্রমে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আফগানিস্তানকে অন্য দেশে হামলার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার কাবুলের ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমিতে পুলিশ ক্যাডেটদের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাক্কানি বলেন, আফগানিস্তান অন্য দেশগুলোর জন্য কোনো হুমকি নয় এবং সংলাপের দরজা খোলা রয়েছে।
হাক্কানি জানিয়েছেন, তাঁরা যেকোনো অবিশ্বাস বা ভুল বোঝাবুঝি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে চান। তাঁর দাবি, সংঘাতের কঠিন সময় তাঁরা পার করে এসেছেন। সম্পদের অভাব থাকলেও তাঁদের মনোবল অটুট। দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন এতটাই ভালো যে, তালেবান কর্মকর্তারা অস্ত্র ছাড়াই সব জায়গায় যাতায়াত করতে পারেন।
তালেবান জোর দিয়ে বলছে, তাদের মাটি থেকে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কার্যক্রম চালাচ্ছে না। তবে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে, আফগানিস্তানে আইএসকেপি, টিটিপি ও আল-কায়েদাসহ বেশ কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে তাজিক সীমান্তের কাছে উত্তর আফগানিস্তানে সক্রিয় ‘জামাত আনসারুল্লাহ’ নামে আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ একটি তাজিক গোষ্ঠীও রয়েছে।
কয়েক দশক ধরেই তাজিকিস্তান ও তালেবানের সম্পর্ক বেশ সাপে-নেউলে। মূলত আদর্শগত অমিল ও জাতিগত অবিশ্বাসের কারণেই এই শত্রুতা। মধ্য এশিয়ায় তাজিকিস্তানই তালেবানের সবচেয়ে কঠোর সমালোচক। নব্বইয়ের দশকে তাঁরা আহমদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বে তালেবান-বিরোধী জোট ‘নর্দান অ্যালায়েন্স’-এর পক্ষে ছিল।
২০২১ সালে তালেবান যখন পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে, তখন প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র তাজিকিস্তানই তাদের সরকারকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তবে অর্থনৈতিক স্বার্থ ও আইএসকেপি-র মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকি মোকাবিলার প্রয়োজনে ২০২৩ সাল থেকে দুই পক্ষ গোপনে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে গত নভেম্বরে তাজিকিস্তানের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল কাবুল সফর করে। তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর এটিই ছিল এ ধরনের প্রথম সফর।
দুই দেশের সরকারই একে অন্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচারের সমস্যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাজিক-আফগান সীমান্ত ব্যবহার করে আফগানিস্তানের হেরোইন ও মেথামফেটামিন মধ্য এশিয়া হয়ে রাশিয়া ও ইউরোপে পাচার হচ্ছে। দুর্গম এলাকা আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি কম থাকার সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা এই পথ ব্যবহার করে।
বিশ্লেষক বাহিস মনে করেন, সীমান্তে সংঘর্ষের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বেশ চিন্তার বিষয়। এর মাধ্যমে কি নতুন কোনো বড় বিপদের সংকেত পাওয়া যাচ্ছে? তাজিকিস্তানের দাবি অনুযায়ী চীনা নাগরিকদের ওপর হামলার সূত্রপাত হয়েছে বাদাখশান প্রদেশ থেকে। এই এলাকা সামলানো তালেবানের জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তৎপরতা থামাতে তারা বেশ হিমশিম খাচ্ছে।
বাদাখশানে পপি চাষ বন্ধে তালেবানের কঠোর পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। উত্তর আফগানিস্তানের কৃষকরা তালেবানের এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করছে। পাহাড়বেষ্টিত এই দুর্গম এলাকায় পপিই একমাত্র লাভজনক ফসল। বিকল্প উপার্জনের পথ না থাকায় কৃষকরা জীবনধারণের তাগিদে পপি চাষ চালিয়ে যেতে চায়, যা শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নতুন সংকট তৈরি করেছে।
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর কোনো কোনো দেশ নিজেদের স্বার্থ বিবেচনায় সম্পর্ক রাখলেও অন্যদের সঙ্গে তালেবানের দূরত্ব বেড়েছে। তবে এক সময়ের বড় সহযোগী পাকিস্তানের সঙ্গেই এখন তালেবানের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ। ইসলামাবাদের দাবি, তালেবান তাদের মাটিতে ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে। এই বিরোধ গত নভেম্বরে ভয়াবহ রূপ নেয় যখন পাকিস্তান আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বিমান হামলা চালায়। জবাবে তালেবানও পাকিস্তানি সীমান্ত চৌকিগুলোতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে এই সংঘাতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়।
তবে সেই শান্তি টেকসই হয়নি ও এখন দুই দেশই যুদ্ধবিরতি ভাঙার জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করছে। তালেবান পাকিস্তানের সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তান নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পেরে অন্যদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে যখন বৈরিতা বাড়ছে, তখন তালেবান ভারতের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার জন্য তালেবান প্রতিনিধিরা নিয়মিত ভারতে যাচ্ছেন। একসময় ভারত তালেবানের কট্টর বিরোধী হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের দূরত্ব বাড়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত এখন তাদের সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ

মধ্য এশিয়ায় তাজিকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠছে। তাজিক সরকার জানিয়েছে, চলতি মাসে বেশ কয়েকবার অস্ত্রধারী লোক তাদের সীমান্তে ঢুকেছে। তালেবানদের সঙ্গে তাজিকিস্তানের সম্পর্ক আগে থেকেই নড়বড়ে ছিল। এই অনুপ্রবেশের ঘটনা তাজিক-আফগান সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে।
দুশানবে ও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাজিকিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাজিক কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছে। মূলত এই সন্ত্রাসীদের হামলা ও তাজিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ওই অঞ্চলে কর্মরত চীনা নাগরিকরাও আছেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সপ্তাহে সর্বশেষ লড়াইয়ে তাজিকিস্তানের শামসিদ্দিন শোহিন জেলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ‘তিনজন সন্ত্রাসী’ রয়েছে।
তাজিকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের ১,৩৪০ কিলোমিটারের বিশাল সীমান্ত রয়েছে, যার বেশির ভাগ অংশই অরক্ষিত। তাজিকিস্তান শুরু থেকেই আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের বিরোধিতা করে আসছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে কিছুটা কূটনৈতিক যোগাযোগ থাকলেও সীমান্তে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সংঘর্ষের কারণে তালেবানের গ্রহণযোগ্যতা কমছে ও তারা আদৌ নিরাপত্তা বজায় রাখতে সক্ষম কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই সীমান্ত দক্ষিণ তাজিকিস্তান থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তাজিকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক রাষ্ট্রীয় কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মঙ্গলবার ‘একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের তিন সদস্য’ তাজিক ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। কমিটি আরও জানায়, পরদিন সকালে ওই ব্যক্তিদের অবস্থান শনাক্ত করা হয় এবং তাজিক সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে তাদের গুলি বিনিময় হয়। এতে অনুপ্রবেশকারী তিনজনসহ পাঁচজন নিহত হয়।
তাজিক কর্মকর্তারা সশস্ত্র ব্যক্তিদের নাম বা তারা কোন দলের সদস্য তা নির্দিষ্ট করেননি। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ঘটনাস্থল থেকে তিনটি এম-১৬ রাইফেল, একটি কালাশনিকভ অ্যাসল্ট রাইফেল, সাইলেন্সারযুক্ত তিনটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি নাইট-ভিশন স্কোপ ও বিস্ফোরক জব্দ করেছেন।
দুশানবে জানিয়েছে, গত এক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশ থেকে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এমন হামলা চালানো হলো, যাতে তাদের কর্মীরা প্রাণ হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাজিক কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, এসব হামলা প্রমাণ করে তালেবান সরকার তাদের কথা রাখছে না। আন্তর্জাতিকভাবে তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সন্ত্রাসীদের দমন করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ও চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এক বিবৃতিতে তাঁরা তালেবানকে ‘তাজিকিস্তানের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে ও যৌথ সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
এসব হামলার উদ্দেশ্য কী হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি তাজিকিস্তান। তবে হামলাগুলো ওই এলাকায় কর্মরত চীনা কোম্পানি ও নাগরিকদের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
তাজিকিস্তানের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা হলো চীন। দেশটির খনি, অবকাঠামো ও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের বড় ধরনের বিনিয়োগ আছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ৪৭৭ কিলোমিটারের সীমান্তও রয়েছে, যা পামির পর্বতমালার ওপর দিয়ে চীনের সিনচিয়াং অঞ্চলের সঙ্গে মিশেছে।
গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনা কোম্পানি ও নাগরিকদের লক্ষ্য করে দুটি হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে ২৬ নভেম্বর তাজিক-আফগান সীমান্তের দুর্গম খতলন এলাকায় একটি চীনা সোনার খনি কোম্পানিতে বিস্ফোরকভর্তি ড্রোনের হামলায় তিনজন চীনা নাগরিক নিহত হন।
৩০ নভেম্বর দ্বিতীয় হামলায়, একদল বন্দুকধারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন’-এর কর্মীদের ওপর গুলি চালায়, এতে তাজিকিস্তানের দারভোজ জেলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়।
আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের গ্রামগুলো থেকেই এসব হামলার সূত্রপাত হয়েছে দাবি করলেও তাজিক কর্মকর্তারা হামলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেননি।
এদিকে শুধু তাজিকিস্তান নয়, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও আফগান-পাকিস্তান সীমান্তেও চীনা নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
এমন পরিস্থিতিতে দুশানবেতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস তাদের কোম্পানি ও কর্মীদের সীমান্ত এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি, তাজিকিস্তানে চীনা নাগরিক ও তাদের প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাজিক সরকারকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে চীন।
হামলাকারীদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে হামলার ধরন বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এর পেছনে ইসলামিক স্টেট খোরাসানের (আইএসকেপি) হাত রয়েছে। মূলত তালেবান সরকারকে অপমানিত করা বা হেয় প্রতিপন্ন করাই তাদের লক্ষ্য।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, আফগানিস্তানের ভেতরে বিদেশিদের ওপর হামলা করা আইএসকেপির একটি বড় কৌশল।
ইব্রাহিম বাহিসের মতে, তালেবান নিজেকে নিরাপত্তার রক্ষক হিসেবে দাবি করে। কিন্তু বিদেশিদের ওপর হামলা চালিয়ে আইএসকেপি আসলে তালেবানের সেই ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়, যাতে প্রতিবেশী দেশগুলো মনে করে তালেবান নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
গত ২৮ নভেম্বর চীনা কর্মীদের হত্যার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে কাবুল। এই হামলার জন্য তালেবান অজ্ঞাত সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। তাদের দাবি, ওই গোষ্ঠীটির মূল উদ্দেশ্য হলো এই অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ও দেশগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করা। এ বিষয়ে তারা তাজিকিস্তানকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এই সপ্তাহের সংঘর্ষের পর, তালেবানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি বলেছেন, কাবুল ২০২০ সালের দোহা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ওই চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে পর্যায়ক্রমে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আফগানিস্তানকে অন্য দেশে হামলার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার কাবুলের ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমিতে পুলিশ ক্যাডেটদের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাক্কানি বলেন, আফগানিস্তান অন্য দেশগুলোর জন্য কোনো হুমকি নয় এবং সংলাপের দরজা খোলা রয়েছে।
হাক্কানি জানিয়েছেন, তাঁরা যেকোনো অবিশ্বাস বা ভুল বোঝাবুঝি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে চান। তাঁর দাবি, সংঘাতের কঠিন সময় তাঁরা পার করে এসেছেন। সম্পদের অভাব থাকলেও তাঁদের মনোবল অটুট। দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন এতটাই ভালো যে, তালেবান কর্মকর্তারা অস্ত্র ছাড়াই সব জায়গায় যাতায়াত করতে পারেন।
তালেবান জোর দিয়ে বলছে, তাদের মাটি থেকে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কার্যক্রম চালাচ্ছে না। তবে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে, আফগানিস্তানে আইএসকেপি, টিটিপি ও আল-কায়েদাসহ বেশ কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে তাজিক সীমান্তের কাছে উত্তর আফগানিস্তানে সক্রিয় ‘জামাত আনসারুল্লাহ’ নামে আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ একটি তাজিক গোষ্ঠীও রয়েছে।
কয়েক দশক ধরেই তাজিকিস্তান ও তালেবানের সম্পর্ক বেশ সাপে-নেউলে। মূলত আদর্শগত অমিল ও জাতিগত অবিশ্বাসের কারণেই এই শত্রুতা। মধ্য এশিয়ায় তাজিকিস্তানই তালেবানের সবচেয়ে কঠোর সমালোচক। নব্বইয়ের দশকে তাঁরা আহমদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বে তালেবান-বিরোধী জোট ‘নর্দান অ্যালায়েন্স’-এর পক্ষে ছিল।
২০২১ সালে তালেবান যখন পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে, তখন প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র তাজিকিস্তানই তাদের সরকারকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তবে অর্থনৈতিক স্বার্থ ও আইএসকেপি-র মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকি মোকাবিলার প্রয়োজনে ২০২৩ সাল থেকে দুই পক্ষ গোপনে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে গত নভেম্বরে তাজিকিস্তানের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল কাবুল সফর করে। তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর এটিই ছিল এ ধরনের প্রথম সফর।
দুই দেশের সরকারই একে অন্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচারের সমস্যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাজিক-আফগান সীমান্ত ব্যবহার করে আফগানিস্তানের হেরোইন ও মেথামফেটামিন মধ্য এশিয়া হয়ে রাশিয়া ও ইউরোপে পাচার হচ্ছে। দুর্গম এলাকা আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি কম থাকার সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা এই পথ ব্যবহার করে।
বিশ্লেষক বাহিস মনে করেন, সীমান্তে সংঘর্ষের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বেশ চিন্তার বিষয়। এর মাধ্যমে কি নতুন কোনো বড় বিপদের সংকেত পাওয়া যাচ্ছে? তাজিকিস্তানের দাবি অনুযায়ী চীনা নাগরিকদের ওপর হামলার সূত্রপাত হয়েছে বাদাখশান প্রদেশ থেকে। এই এলাকা সামলানো তালেবানের জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তৎপরতা থামাতে তারা বেশ হিমশিম খাচ্ছে।
বাদাখশানে পপি চাষ বন্ধে তালেবানের কঠোর পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। উত্তর আফগানিস্তানের কৃষকরা তালেবানের এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করছে। পাহাড়বেষ্টিত এই দুর্গম এলাকায় পপিই একমাত্র লাভজনক ফসল। বিকল্প উপার্জনের পথ না থাকায় কৃষকরা জীবনধারণের তাগিদে পপি চাষ চালিয়ে যেতে চায়, যা শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নতুন সংকট তৈরি করেছে।
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর কোনো কোনো দেশ নিজেদের স্বার্থ বিবেচনায় সম্পর্ক রাখলেও অন্যদের সঙ্গে তালেবানের দূরত্ব বেড়েছে। তবে এক সময়ের বড় সহযোগী পাকিস্তানের সঙ্গেই এখন তালেবানের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ। ইসলামাবাদের দাবি, তালেবান তাদের মাটিতে ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে। এই বিরোধ গত নভেম্বরে ভয়াবহ রূপ নেয় যখন পাকিস্তান আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বিমান হামলা চালায়। জবাবে তালেবানও পাকিস্তানি সীমান্ত চৌকিগুলোতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে এই সংঘাতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়।
তবে সেই শান্তি টেকসই হয়নি ও এখন দুই দেশই যুদ্ধবিরতি ভাঙার জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করছে। তালেবান পাকিস্তানের সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তান নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পেরে অন্যদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে যখন বৈরিতা বাড়ছে, তখন তালেবান ভারতের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার জন্য তালেবান প্রতিনিধিরা নিয়মিত ভারতে যাচ্ছেন। একসময় ভারত তালেবানের কট্টর বিরোধী হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের দূরত্ব বাড়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত এখন তাদের সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এখন দেশটি নানাভাবে বিভক্ত। অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ এখন মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
১ দিন আগে
ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ খ্রিষ্টান। সংখ্যায় তারা প্রায় মোট ৩ কোটি ২০ লাখ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিপীড়নের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে বড়দিনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের সময় এসব হামলা বেশি দেখা যাচ্ছে।
২ দিন আগে
১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা তারেক রহমান বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরে এসেছেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর ও আশপাশে লাখো নেতাকর্মী জড়ো হন। দেশে-বিদেশে তিনি বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছেন।
২ দিন আগে
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সেই মহাকাব্যিক গণ-অভ্যুত্থান যখন বাংলাদেশের মানচিত্রকে নতুন করে আঁকছিল, তখন রাজপথের ধুলোয় আর বুলেটের শব্দে এক নতুন রাষ্ট্রের প্রসববেদনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
২ দিন আগে