স্ট্রিম ডেস্ক

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি এখনো সেখানে আছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তোলে ভারত। বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার খবর প্রকাশ পাওয়ায় এই অভিযোগ আরও জোরালো হয়।
সম্প্রতি সন্ত্রাসীদের গুলিতে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম সারির নেতা শরিফ ওসমান হাদির নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের আশপাশেও বিক্ষোভ হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
এর প্রতিবাদে ভারতে বিক্ষোভ হয়। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশই কূটনৈতিকভাবে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেয়। সংকটের সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক কূটনৈতিক ভাষার সংঘাত থেকে সরাসরি কূটনৈতিক স্থাপনা ঘিরে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রূপ নেওয়া।
বাংলাদেশ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে। অন্যদিকে ভারত নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায়। ভারত তাদের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা ও উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পাশাপাশি ভিসা ও কনস্যুলার সেবা স্থগিতের মতো পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক প্রধান ঘটনাবলী
গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামে ২৭ বছর বয়সী এক হিন্দু পোশাকশ্রমিককে উত্তেজিত জনতা পিটিয়ে হত্যা করে। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হত্যার পর তার মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে। তারা হত্যার বিচার ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি জানায়। একই ধরনের বিক্ষোভ সীমান্তবর্তী কলকাতা, গুয়াহাটি ও শিলিগুড়িতেও অনুষ্ঠিত হয়। শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে এবং কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করে। ভিএইচপি ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে, বিশেষ করে নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ মিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়।
নিরাপত্তাজনিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ২১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামে অবস্থিত ভিসা সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে। এর জবাবে বাংলাদেশ ২৩ ডিসেম্বর থেকে নয়াদিল্লির হাইকমিশন ও আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে সব ধরনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা স্থগিত করে। কর্তৃপক্ষ ‘অনিবার্য পরিস্থিতি’ ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে। শিলিগুড়ির বেসরকারি ভিসা কেন্দ্রটিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারত সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিকবার ঢাকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে। তারা বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় মিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানায়। অপরদিকে, আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করেছে।
এ নিয়ে গত ১০ দিনে প্রণয় ভার্মাকে দ্বিতীয়বার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের ঘটনা ঘটল। আর অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিভিন্ন ঘটনায় এ নিয়ে অন্তত ছয়বার তলব করা হলো প্রতিবেশী দেশটির রাষ্ট্রদূতকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাইকমিশনারের বাসভবনের বাইরে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনা, ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্রে বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে এই উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া ভারতে বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন প্রাঙ্গণের বাইরে সংঘটিত সহিংস বিক্ষোভের বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আর এসব ঘটনার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতেও ভারত সরকারের প্রতি বাংলাদেশ আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতেও এবং ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
ভারত সরকার কী বলছে
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক স্থাপনার সুরক্ষা বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। দিপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ডকে মন্ত্রণালয় ‘ভয়াবহ’ ও ‘বর্বর’ বলে বর্ণনা করেছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
তিনি জানান, ভারত পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে এবং বিষয়টি সরাসরি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নয়াদিল্লির বিক্ষোভ নিয়ে বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করে ভারত বলেছে, সেগুলো বিভ্রান্তিকর প্রচারণা। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০ ডিসেম্বরের বিক্ষোভ ছিল ছোট পরিসরের ও শান্তিপূর্ণ। এতে মাত্র ২০-২৫ জন অংশ নেন। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কোনো নিরাপত্তা লঙ্ঘন ঘটেনি।
ভারত আরও বলেছে, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশে ভারতীয় স্থাপনাগুলোর আশপাশে বিক্ষোভ ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনার কারণে কিছু ভিসা সেবা স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। একই সঙ্গে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করে ভারত।
বর্তমানে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার তলবের বিষয়ে নতুন কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও, সাধারণত ভারত এ ধরনের ঘটনায় সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সুরক্ষা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে থাকে।
বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশ ভারতের ‘পদ্ধতিগত সংখ্যালঘু নিপীড়ন’ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দিপু চন্দ্র দাসের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এতে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আরও প্রশ্ন তুলেছে, নয়াদিল্লির মতো সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায় কীভাবে বিক্ষোভকারীরা তাদের মিশনের এত কাছে যেতে পেরেছে। ভিসা সেবা স্থগিতের সিদ্ধান্তকে তারা ভারতের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাপ্রবাহ দুই দেশের সম্পর্কে নতুন এক সংকট তৈরি করেছে। পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আরও অবনতির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা, কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা এবং ২০২৬ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে সম্ভাব্য নির্বাচন, এই বিষয়গুলোই এখন প্রধান উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। যদিও দুই দেশ যোগাযোগের পথ খোলা রেখেছে, তবে বিক্ষোভ ও অস্থিরতা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বাংলাদেশে ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পর নতুন রাজনৈতিক শক্তিগুলো সামনে এসেছে, যাদের রাজনৈতিক বৈধতার বড় অংশই ভারতবিরোধী অবস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে। নিহত ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির নেতৃত্বাধীন ইনকিলাব মঞ্চ ছিল এর অন্যতম উদাহরণ। একই ধারার সংগঠন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিও (এনসিপি) ভারতের আধিপত্যের তীব্র বিরোধী। দলটির কিছু নেতা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদে সমর্থনের হুমকি দিয়েছেন, যা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিমুখী চাপে পড়েছেন। একদিকে আন্তর্জাতিক মহল শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে দেশের ভেতরে ‘ভারতীয় প্রভাব’ দূর করার দাবি জোরালো হচ্ছে। ভারতের নির্বাচন সংক্রান্ত পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করাও এই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বার্তার অংশ, যা মূলত দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে সার্বভৌমত্ব প্রদর্শনের কৌশল।
কৌশলগত চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক বর্তমানে এক গভীর সংকটের দিকে এগোচ্ছে। অনেকের চোখে এটি ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে সতর্কতা জানানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি শশী থারুর। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার কারণে দুই দেশের সম্পর্কে একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’ তৈরি হতে পারে। এতে ঢাকায় ভারতের কৌশলগত প্রভাব বা ‘স্ট্র্যাটেজিক স্পেস’ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে সংকটের দিকে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার নির্বাসন ও সংখ্যালঘু ইস্যু ঘিরে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক সোহিনী বোস বলেন, সম্পর্কের টানাপোড়েনে আঞ্চলিক বিভিন্ন ফোরামের মধ্যে সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তিনি জানান, এ ধরনের পরিস্থিতি বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা উদ্যোগ ও প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দিতে পারে।
সাবেক কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের ‘কৌশলগত দৃঢ়তা’ এই দূরত্ব আরও বাড়াচ্ছে। তারা পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে জনপরিসরে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
বর্তমান সংকটটি মূলত দ্বিপক্ষীয় হলেও এর প্রভাব আঞ্চলিক পর্যায়ে বিস্তৃত। এটি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা ‘সেভেন সিস্টার্স’ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি ভারতের পুরোনো নিরাপত্তা উদ্বেগকে আবার উসকে দিয়েছে। এতে ভারতকে সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে পারে, যা চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে বিদ্যমান চাপের মধ্যে ভারতের জন্য বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।
পরবর্তী পরিস্থিতি কী হতে পারে
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, স্বল্পমেয়াদে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। তবে মধ্যমেয়াদে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
স্বল্পমেয়াদে বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি চলতে পারে। যেমন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ঘোষিত কর্মসূচিগুলো থেকে নতুন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাণিজ্য ও পর্যটনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশের সম্ভাব্য নির্বাচন সামনে রেখে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়তে পারে।
তবে উত্তেজনা কমার সম্ভাবনার কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দুই দেশ এখনো কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে। নীরব কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ভিসা সেবা পুনরায় চালু করা এবং সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মিশনের সুরক্ষার মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে সমাধান খোঁজা সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন না হলে দুই দেশের সম্পরেক আরও অবনতি হতে পারে। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ ও আঞ্চলিক প্রভাব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, অভিন্ন ইতিহাস, ভৌগোলিক বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা শেষ পর্যন্ত বাস্তববাদী সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সেই সুযোগ তৈরি হতে পারে।
সব মিলিয়ে, পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের এই ধারাবাহিকতা দুই দেশের সম্পর্কে একটি নতুন সংকট নির্দেশ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময় থাকতেই সংলাপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করা না হলে সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটতে পারে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি এখনো সেখানে আছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তোলে ভারত। বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার খবর প্রকাশ পাওয়ায় এই অভিযোগ আরও জোরালো হয়।
সম্প্রতি সন্ত্রাসীদের গুলিতে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম সারির নেতা শরিফ ওসমান হাদির নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের আশপাশেও বিক্ষোভ হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
এর প্রতিবাদে ভারতে বিক্ষোভ হয়। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশই কূটনৈতিকভাবে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেয়। সংকটের সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক কূটনৈতিক ভাষার সংঘাত থেকে সরাসরি কূটনৈতিক স্থাপনা ঘিরে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রূপ নেওয়া।
বাংলাদেশ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে। অন্যদিকে ভারত নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায়। ভারত তাদের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা ও উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পাশাপাশি ভিসা ও কনস্যুলার সেবা স্থগিতের মতো পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক প্রধান ঘটনাবলী
গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামে ২৭ বছর বয়সী এক হিন্দু পোশাকশ্রমিককে উত্তেজিত জনতা পিটিয়ে হত্যা করে। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হত্যার পর তার মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে। তারা হত্যার বিচার ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি জানায়। একই ধরনের বিক্ষোভ সীমান্তবর্তী কলকাতা, গুয়াহাটি ও শিলিগুড়িতেও অনুষ্ঠিত হয়। শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে এবং কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করে। ভিএইচপি ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে, বিশেষ করে নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ মিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়।
নিরাপত্তাজনিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ২১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামে অবস্থিত ভিসা সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে। এর জবাবে বাংলাদেশ ২৩ ডিসেম্বর থেকে নয়াদিল্লির হাইকমিশন ও আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে সব ধরনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা স্থগিত করে। কর্তৃপক্ষ ‘অনিবার্য পরিস্থিতি’ ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে। শিলিগুড়ির বেসরকারি ভিসা কেন্দ্রটিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারত সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিকবার ঢাকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে। তারা বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় মিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানায়। অপরদিকে, আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করেছে।
এ নিয়ে গত ১০ দিনে প্রণয় ভার্মাকে দ্বিতীয়বার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের ঘটনা ঘটল। আর অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিভিন্ন ঘটনায় এ নিয়ে অন্তত ছয়বার তলব করা হলো প্রতিবেশী দেশটির রাষ্ট্রদূতকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাইকমিশনারের বাসভবনের বাইরে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনা, ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্রে বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে এই উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া ভারতে বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন প্রাঙ্গণের বাইরে সংঘটিত সহিংস বিক্ষোভের বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আর এসব ঘটনার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতেও ভারত সরকারের প্রতি বাংলাদেশ আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতেও এবং ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
ভারত সরকার কী বলছে
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক স্থাপনার সুরক্ষা বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। দিপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ডকে মন্ত্রণালয় ‘ভয়াবহ’ ও ‘বর্বর’ বলে বর্ণনা করেছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
তিনি জানান, ভারত পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে এবং বিষয়টি সরাসরি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নয়াদিল্লির বিক্ষোভ নিয়ে বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করে ভারত বলেছে, সেগুলো বিভ্রান্তিকর প্রচারণা। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০ ডিসেম্বরের বিক্ষোভ ছিল ছোট পরিসরের ও শান্তিপূর্ণ। এতে মাত্র ২০-২৫ জন অংশ নেন। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কোনো নিরাপত্তা লঙ্ঘন ঘটেনি।
ভারত আরও বলেছে, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশে ভারতীয় স্থাপনাগুলোর আশপাশে বিক্ষোভ ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনার কারণে কিছু ভিসা সেবা স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। একই সঙ্গে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করে ভারত।
বর্তমানে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার তলবের বিষয়ে নতুন কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও, সাধারণত ভারত এ ধরনের ঘটনায় সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সুরক্ষা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে থাকে।
বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশ ভারতের ‘পদ্ধতিগত সংখ্যালঘু নিপীড়ন’ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দিপু চন্দ্র দাসের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এতে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আরও প্রশ্ন তুলেছে, নয়াদিল্লির মতো সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায় কীভাবে বিক্ষোভকারীরা তাদের মিশনের এত কাছে যেতে পেরেছে। ভিসা সেবা স্থগিতের সিদ্ধান্তকে তারা ভারতের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাপ্রবাহ দুই দেশের সম্পর্কে নতুন এক সংকট তৈরি করেছে। পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আরও অবনতির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা, কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা এবং ২০২৬ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে সম্ভাব্য নির্বাচন, এই বিষয়গুলোই এখন প্রধান উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। যদিও দুই দেশ যোগাযোগের পথ খোলা রেখেছে, তবে বিক্ষোভ ও অস্থিরতা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বাংলাদেশে ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পর নতুন রাজনৈতিক শক্তিগুলো সামনে এসেছে, যাদের রাজনৈতিক বৈধতার বড় অংশই ভারতবিরোধী অবস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে। নিহত ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির নেতৃত্বাধীন ইনকিলাব মঞ্চ ছিল এর অন্যতম উদাহরণ। একই ধারার সংগঠন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিও (এনসিপি) ভারতের আধিপত্যের তীব্র বিরোধী। দলটির কিছু নেতা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদে সমর্থনের হুমকি দিয়েছেন, যা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিমুখী চাপে পড়েছেন। একদিকে আন্তর্জাতিক মহল শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে দেশের ভেতরে ‘ভারতীয় প্রভাব’ দূর করার দাবি জোরালো হচ্ছে। ভারতের নির্বাচন সংক্রান্ত পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করাও এই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বার্তার অংশ, যা মূলত দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে সার্বভৌমত্ব প্রদর্শনের কৌশল।
কৌশলগত চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক বর্তমানে এক গভীর সংকটের দিকে এগোচ্ছে। অনেকের চোখে এটি ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে সতর্কতা জানানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি শশী থারুর। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার কারণে দুই দেশের সম্পর্কে একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’ তৈরি হতে পারে। এতে ঢাকায় ভারতের কৌশলগত প্রভাব বা ‘স্ট্র্যাটেজিক স্পেস’ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে সংকটের দিকে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার নির্বাসন ও সংখ্যালঘু ইস্যু ঘিরে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক সোহিনী বোস বলেন, সম্পর্কের টানাপোড়েনে আঞ্চলিক বিভিন্ন ফোরামের মধ্যে সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তিনি জানান, এ ধরনের পরিস্থিতি বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা উদ্যোগ ও প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দিতে পারে।
সাবেক কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের ‘কৌশলগত দৃঢ়তা’ এই দূরত্ব আরও বাড়াচ্ছে। তারা পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে জনপরিসরে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
বর্তমান সংকটটি মূলত দ্বিপক্ষীয় হলেও এর প্রভাব আঞ্চলিক পর্যায়ে বিস্তৃত। এটি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা ‘সেভেন সিস্টার্স’ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি ভারতের পুরোনো নিরাপত্তা উদ্বেগকে আবার উসকে দিয়েছে। এতে ভারতকে সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে পারে, যা চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে বিদ্যমান চাপের মধ্যে ভারতের জন্য বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।
পরবর্তী পরিস্থিতি কী হতে পারে
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, স্বল্পমেয়াদে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। তবে মধ্যমেয়াদে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
স্বল্পমেয়াদে বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি চলতে পারে। যেমন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ঘোষিত কর্মসূচিগুলো থেকে নতুন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাণিজ্য ও পর্যটনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশের সম্ভাব্য নির্বাচন সামনে রেখে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়তে পারে।
তবে উত্তেজনা কমার সম্ভাবনার কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দুই দেশ এখনো কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে। নীরব কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ভিসা সেবা পুনরায় চালু করা এবং সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মিশনের সুরক্ষার মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে সমাধান খোঁজা সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন না হলে দুই দেশের সম্পরেক আরও অবনতি হতে পারে। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ ও আঞ্চলিক প্রভাব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, অভিন্ন ইতিহাস, ভৌগোলিক বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা শেষ পর্যন্ত বাস্তববাদী সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সেই সুযোগ তৈরি হতে পারে।
সব মিলিয়ে, পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের এই ধারাবাহিকতা দুই দেশের সম্পর্কে একটি নতুন সংকট নির্দেশ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময় থাকতেই সংলাপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করা না হলে সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটতে পারে।

সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবাদ সভাটি বাংলাদেশের সমকালীন সমাজ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
১৯ ঘণ্টা আগে
জাতীয় সঞ্চয়পত্র হলো সরকারের একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। এর বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দেয়। এই মুনাফার হার স্থায়ী নয়। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী তা বাড়ে বা কমে। ডাকঘর ও ব্যাংকের মাধ্যমে এসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হয়। এতে মুনাফা নিশ্চিত থাকে।
১ দিন আগে
সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গুম বা এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স প্রতিরোধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২ দিন আগে
গত কয়েক দিন বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিল ঘটনাবহুল ও উত্তেজনাকর। কূটনীতির শান্ত জল হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে পাল্টাপাল্টি তলব ও কড়া বার্তা আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে। গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
৩ দিন আগে