আজ ৬ ডিসেম্বর মরমি কবি হাসন রাজার মৃত্যুদিন। তিনি নিজে পড়াশোনা বেশি করতে পারেননি, কিন্তু সবার আধুনিক শিক্ষা পাওয়া জরুরি মনে করতেন। মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করে লিখেছেন হাসন রাজার প্রপৌত্র ও হাসন-গবেষক সামারীন দেওয়ান।
সামারীন দেওয়ান

হাসন রাজা যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেন তখন মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন ছিল না। এমনকি বাংলায় পড়াও ছিল দুঃসাধ্য। তখন অবস্থাপন্ন মুসলিম সমাজে আরবি, ফারসি শিক্ষার রেওয়াজ ছিল। নিজবাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে পারিবারিক ঐতিহ্যস্বরূপ হাসন রাজা তাঁর প্রাথমিক জীবনে ফারসি, বাংলা এবং আরবি ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। সৈয়দপুর নিবাসী আদম খা নামে এক মৌলবি সাহেব ছিলেন বাগদাদী কায়দা এবং কুরআনুল-করিম পাঠের শিক্ষক। সঙ্গে সঙ্গে ফারসি ও উর্দু শিক্ষারও সুযোগ ছিল।
বাংলা শিক্ষার জন্যে একজন পন্ডিতও ছিলেন। আগেই বলা হয়েছে ছেলেবেলায় তাঁর বাবা তাঁকে সিলেটের একটি মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার জন্যে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর মা চেয়েছিলেন জমিদারি পরিচালনার দলিলপত্রাদি বিষয়ে দ্রুত জ্ঞান আহরণ করা। তাই মাদ্রাসায় লেখাপড়ার বছর তিনেক পরই আবার তিনি সুনামগঞ্জে ফিরে আসেন। তিন-চার বছরের মাদ্রাসা শিক্ষার পর তাঁর পড়ালেখায় অতৃপ্তিই রয়ে গেল।
এতদসত্ত্বেও অল্প বয়সে হাসন রাজা কবিতা ও গান লেখার মধ্য দিয়ে কাব্যসৃষ্টি শুরু করেন। বিশেষত পাখি-পশু ও মানুষকে নিয়ে তিনি ত্রিপদী ছড়া লিখেছেন তাঁর ‘সৌখিন বাহার’ নামক গ্রন্থে। তাঁর সম্পর্কে যে ক’জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য পাওয়া যায় তারমধ্যে তাঁরই কনিষ্ঠ পুত্র আফতাবুর রাজার মন্তব্য উল্লেখযোগ্য, ‘আমি আমার পিতা-সাহেবকে তাহার ৫০ হইতে ৬৮ বৎসর বয়স পর্যন্ত কাছ থেকে দেখিয়াছি। তিনি ঘরে বসিয়া বইপত্র পড়িতে অভ্যস্থ ছিলেন। বিশেষত তাঁহার ৬০ বছর বয়সে একদিন আমার নজরে আসিল তিনি কলকাতারই প্রকাশিত একটি বাংলা খবরের কাগজ পড়িতেছেন। এখন স্মরণে আসিতেছে যে, পত্রিকাটি নাম ছিল বন্দে-মাতরম।’
লেখক ও ঐতিহাসিক সৈয়দ মুর্তজা আলী লিখেছিলেন, ‘হাসন রাজা ছিলেন স্বভাব কবি। নশ্বর জগতের ভোগ-বিলাসের উর্ধ্বে ছিল তার দৃষ্টি। বিষয় বৈভবের মধ্যে থেকেও তিনি অনেকটা নির্লিপ্ত জীবনযাপন করে গেছেন।
হাসন রাজার জীবনে শিক্ষাকে ঘিরে তাঁর চিন্তা, ধ্যান-ধারণা কিংবা প্রেরণার উর্দ্ধে মরমি কবি-খ্যাতি আর সুনাম উপচে ওঠে। শিক্ষার অভাব-অনুভব থাকা সত্ত্বেও ‘প্রথম থেকেই তার একটি নিমগ্ন ও নির্মোহ কবিচিত্ত ছিল, যার আলিঙ্গনে সমস্ত রস তার হৃদয়ে সঞ্চিত হয়েছে এবং বিবর্ণ হয়েছে তার পরিমণ্ডল।’

এ প্রসঙ্গে কলকাতার লেখক ও গবেষক অমিয়শঙ্কর চৌধুরী লেখেন, ‘তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যাবার সুযোগ মোটেই পাননি। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যে সবারই অবশ্য কর্তব্য তা তিনি মুক্ত কণ্ঠে ঘোষণা করতেন।’ আবু আলী সাজ্জাদ হোসেইন লিখেছিলেন ‘১৮৭৭ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠার পরপরই মরমী কবি হাসন রাজা কর্তৃক সুনামগঞ্জে হাসন এম.ই. স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনৈক প্রমদা রঞ্জন আচার্যকে ঢাকা থেকে এ স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক করে আনা হয়।’
এই স্কুল প্রতিষ্ঠায় হাসন রাজা জমি ও অর্থ সরবরাহ করেন। ৯ বছর স্কুলটি চলার পর ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘গোল্ডেন জুবিলী উৎসব উদ্যাপন’ করা হয়। সেই সময় সিলেটের প্রথম ডেপুটি কমিশনার মি. এ.এল. ক্লে হাসন রাজাকে অনুরোধ করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন মিডিল ইংলিশ স্কুল’টির ওপর একটি পরিপূর্ণ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠান। হাসন রাজা এতে রাজি হলে ‘সুনামগঞ্জে এ উপলক্ষে বিরাট উৎসবের আয়োজন করা হয়। জুবিলী উৎসব চিরদিন স্মরণ রাখার জন্যেই সুনামগঞ্জে জুবিলী হাইস্কুল স্থাপন করা হয়।’
কলকাতার লেখক প্রভাতচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন, ‘সুনামগঞ্জের জুবিলী হাই স্কুলের নতুন বাড়ি তৈরির জন্যেও তিনি বিস্তর জমি দান করেছিলেন।’ এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে তাঁর মাইনর স্কুলটিকেই জুবিলী হাই স্কুলে উন্নিতকরণে হাসন রাজার অবদান ছিল। ব্রিটিশ শাসকদের প্রতিষ্ঠিত ও বর্ধিত ‘সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুল’ এর পেছনে যে মূলত হাসন রাজার শিক্ষা প্রসারের একটি তীব্র অভিপ্রায় জড়িত ছিল তা স্পষ্টত বুঝা যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর জুবিলী স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজকরা এ স্কুলের সাথে হাসন রাজা জড়িত থাকার প্রসঙ্গটি একেবারে এড়িয়ে যান। কোন হীনমন্যতার কারণে নিজেদের গর্বিত ইতিহাস ঐতিহ্যকে অসম্মান করার প্রবনতা পরিলক্ষিত হয়।
গবেষক এডওয়ার্ড ইয়াজজিয়ান হাসন রাজাকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘হাসন রাজার গান শুনে আমার মনে প্রশ্ন জাগল—এমন কম শিক্ষিত একজন মানুষ এত গভীর দার্শনিক ভাবনা কোথায় পেলেন? সাধারণত এ ধরনের জ্ঞান আসে তিন উৎস থেকে: গুরু বা মুরশিদের কাছে শিক্ষালাভ, বইপত্র থেকে অর্জিত জ্ঞান, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আত্ম-উপলব্ধি।’
আর এজন্য বলতে হয় হাসন রাজার দার্শনিক চিন্তাধারার পেছনে যে স্পৃহা গভীরভাবে কাজ করেছিল তার সাক্ষর সুস্পষ্টভাবে জুবিলী হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে রয়েছে। হাসন রাজার হাত ধরে সুনামগঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার নতুন যুগের সূচনা।
হাসন রাজার ভাবনা ছিল এলাকার মানুষ শিক্ষায় এগিয়ে যাক। শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ছিল বলেই হাসন রাজা পারিবারিক জীবনে নিজ পুত্রগণ এবং ভাতিজাদেরকে পড়াশোনা করানোর জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। প্রথম ভাতিজা আবুল হোসেইন, দ্বিতীয় ভাতিজা আজিজুর রাজা এবং নিজ দ্বিতীয় পুত্র হাসিনুর রাজাকে হাইকোর্টের উকিল নূর উদ্দিনের শ্বশুরের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। ১৮৮৬ সালে নিজ পুত্র দেওয়ান গনিউর রাজাকে সিলেট দরগা মহল্লায় গভর্ণমেন্ট স্কুলে ভর্তি করা হয় বোন সঈফা বানুর তত্ত্বাবধানে। গনিউর রাজার ১৪ বছর বয়সে ঢাকায় পাঠানো হয় পড়াশুনার উদ্দেশ্যে।
এতে খুবই স্পষ্ট বুঝা যায় যে হাসন রাজা নিজে পড়ালেখা না করলেও তার বংশধরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলার একটি প্রবল ইচ্ছা ও চেষ্টা ছিল। এছাড়া পরিবারের বাইরে হাসন রাজা অসংখ্য স্থানীয় ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যান। সেটা বহু লেখকের লেখায় উল্লেখ রয়েছে।
লেখক: হাসন রাজার প্রপৌত্র ও হাসন-গবেষক

হাসন রাজা যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেন তখন মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন ছিল না। এমনকি বাংলায় পড়াও ছিল দুঃসাধ্য। তখন অবস্থাপন্ন মুসলিম সমাজে আরবি, ফারসি শিক্ষার রেওয়াজ ছিল। নিজবাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে পারিবারিক ঐতিহ্যস্বরূপ হাসন রাজা তাঁর প্রাথমিক জীবনে ফারসি, বাংলা এবং আরবি ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। সৈয়দপুর নিবাসী আদম খা নামে এক মৌলবি সাহেব ছিলেন বাগদাদী কায়দা এবং কুরআনুল-করিম পাঠের শিক্ষক। সঙ্গে সঙ্গে ফারসি ও উর্দু শিক্ষারও সুযোগ ছিল।
বাংলা শিক্ষার জন্যে একজন পন্ডিতও ছিলেন। আগেই বলা হয়েছে ছেলেবেলায় তাঁর বাবা তাঁকে সিলেটের একটি মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার জন্যে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর মা চেয়েছিলেন জমিদারি পরিচালনার দলিলপত্রাদি বিষয়ে দ্রুত জ্ঞান আহরণ করা। তাই মাদ্রাসায় লেখাপড়ার বছর তিনেক পরই আবার তিনি সুনামগঞ্জে ফিরে আসেন। তিন-চার বছরের মাদ্রাসা শিক্ষার পর তাঁর পড়ালেখায় অতৃপ্তিই রয়ে গেল।
এতদসত্ত্বেও অল্প বয়সে হাসন রাজা কবিতা ও গান লেখার মধ্য দিয়ে কাব্যসৃষ্টি শুরু করেন। বিশেষত পাখি-পশু ও মানুষকে নিয়ে তিনি ত্রিপদী ছড়া লিখেছেন তাঁর ‘সৌখিন বাহার’ নামক গ্রন্থে। তাঁর সম্পর্কে যে ক’জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য পাওয়া যায় তারমধ্যে তাঁরই কনিষ্ঠ পুত্র আফতাবুর রাজার মন্তব্য উল্লেখযোগ্য, ‘আমি আমার পিতা-সাহেবকে তাহার ৫০ হইতে ৬৮ বৎসর বয়স পর্যন্ত কাছ থেকে দেখিয়াছি। তিনি ঘরে বসিয়া বইপত্র পড়িতে অভ্যস্থ ছিলেন। বিশেষত তাঁহার ৬০ বছর বয়সে একদিন আমার নজরে আসিল তিনি কলকাতারই প্রকাশিত একটি বাংলা খবরের কাগজ পড়িতেছেন। এখন স্মরণে আসিতেছে যে, পত্রিকাটি নাম ছিল বন্দে-মাতরম।’
লেখক ও ঐতিহাসিক সৈয়দ মুর্তজা আলী লিখেছিলেন, ‘হাসন রাজা ছিলেন স্বভাব কবি। নশ্বর জগতের ভোগ-বিলাসের উর্ধ্বে ছিল তার দৃষ্টি। বিষয় বৈভবের মধ্যে থেকেও তিনি অনেকটা নির্লিপ্ত জীবনযাপন করে গেছেন।
হাসন রাজার জীবনে শিক্ষাকে ঘিরে তাঁর চিন্তা, ধ্যান-ধারণা কিংবা প্রেরণার উর্দ্ধে মরমি কবি-খ্যাতি আর সুনাম উপচে ওঠে। শিক্ষার অভাব-অনুভব থাকা সত্ত্বেও ‘প্রথম থেকেই তার একটি নিমগ্ন ও নির্মোহ কবিচিত্ত ছিল, যার আলিঙ্গনে সমস্ত রস তার হৃদয়ে সঞ্চিত হয়েছে এবং বিবর্ণ হয়েছে তার পরিমণ্ডল।’

এ প্রসঙ্গে কলকাতার লেখক ও গবেষক অমিয়শঙ্কর চৌধুরী লেখেন, ‘তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যাবার সুযোগ মোটেই পাননি। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যে সবারই অবশ্য কর্তব্য তা তিনি মুক্ত কণ্ঠে ঘোষণা করতেন।’ আবু আলী সাজ্জাদ হোসেইন লিখেছিলেন ‘১৮৭৭ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠার পরপরই মরমী কবি হাসন রাজা কর্তৃক সুনামগঞ্জে হাসন এম.ই. স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনৈক প্রমদা রঞ্জন আচার্যকে ঢাকা থেকে এ স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক করে আনা হয়।’
এই স্কুল প্রতিষ্ঠায় হাসন রাজা জমি ও অর্থ সরবরাহ করেন। ৯ বছর স্কুলটি চলার পর ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘গোল্ডেন জুবিলী উৎসব উদ্যাপন’ করা হয়। সেই সময় সিলেটের প্রথম ডেপুটি কমিশনার মি. এ.এল. ক্লে হাসন রাজাকে অনুরোধ করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন মিডিল ইংলিশ স্কুল’টির ওপর একটি পরিপূর্ণ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠান। হাসন রাজা এতে রাজি হলে ‘সুনামগঞ্জে এ উপলক্ষে বিরাট উৎসবের আয়োজন করা হয়। জুবিলী উৎসব চিরদিন স্মরণ রাখার জন্যেই সুনামগঞ্জে জুবিলী হাইস্কুল স্থাপন করা হয়।’
কলকাতার লেখক প্রভাতচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন, ‘সুনামগঞ্জের জুবিলী হাই স্কুলের নতুন বাড়ি তৈরির জন্যেও তিনি বিস্তর জমি দান করেছিলেন।’ এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে তাঁর মাইনর স্কুলটিকেই জুবিলী হাই স্কুলে উন্নিতকরণে হাসন রাজার অবদান ছিল। ব্রিটিশ শাসকদের প্রতিষ্ঠিত ও বর্ধিত ‘সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুল’ এর পেছনে যে মূলত হাসন রাজার শিক্ষা প্রসারের একটি তীব্র অভিপ্রায় জড়িত ছিল তা স্পষ্টত বুঝা যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর জুবিলী স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজকরা এ স্কুলের সাথে হাসন রাজা জড়িত থাকার প্রসঙ্গটি একেবারে এড়িয়ে যান। কোন হীনমন্যতার কারণে নিজেদের গর্বিত ইতিহাস ঐতিহ্যকে অসম্মান করার প্রবনতা পরিলক্ষিত হয়।
গবেষক এডওয়ার্ড ইয়াজজিয়ান হাসন রাজাকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘হাসন রাজার গান শুনে আমার মনে প্রশ্ন জাগল—এমন কম শিক্ষিত একজন মানুষ এত গভীর দার্শনিক ভাবনা কোথায় পেলেন? সাধারণত এ ধরনের জ্ঞান আসে তিন উৎস থেকে: গুরু বা মুরশিদের কাছে শিক্ষালাভ, বইপত্র থেকে অর্জিত জ্ঞান, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আত্ম-উপলব্ধি।’
আর এজন্য বলতে হয় হাসন রাজার দার্শনিক চিন্তাধারার পেছনে যে স্পৃহা গভীরভাবে কাজ করেছিল তার সাক্ষর সুস্পষ্টভাবে জুবিলী হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে রয়েছে। হাসন রাজার হাত ধরে সুনামগঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার নতুন যুগের সূচনা।
হাসন রাজার ভাবনা ছিল এলাকার মানুষ শিক্ষায় এগিয়ে যাক। শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ছিল বলেই হাসন রাজা পারিবারিক জীবনে নিজ পুত্রগণ এবং ভাতিজাদেরকে পড়াশোনা করানোর জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। প্রথম ভাতিজা আবুল হোসেইন, দ্বিতীয় ভাতিজা আজিজুর রাজা এবং নিজ দ্বিতীয় পুত্র হাসিনুর রাজাকে হাইকোর্টের উকিল নূর উদ্দিনের শ্বশুরের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। ১৮৮৬ সালে নিজ পুত্র দেওয়ান গনিউর রাজাকে সিলেট দরগা মহল্লায় গভর্ণমেন্ট স্কুলে ভর্তি করা হয় বোন সঈফা বানুর তত্ত্বাবধানে। গনিউর রাজার ১৪ বছর বয়সে ঢাকায় পাঠানো হয় পড়াশুনার উদ্দেশ্যে।
এতে খুবই স্পষ্ট বুঝা যায় যে হাসন রাজা নিজে পড়ালেখা না করলেও তার বংশধরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলার একটি প্রবল ইচ্ছা ও চেষ্টা ছিল। এছাড়া পরিবারের বাইরে হাসন রাজা অসংখ্য স্থানীয় ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যান। সেটা বহু লেখকের লেখায় উল্লেখ রয়েছে।
লেখক: হাসন রাজার প্রপৌত্র ও হাসন-গবেষক

আজ ৮ ডিসেম্বর জন লেননের মৃত্যুদিন। দুনিয়া কাঁপানো ব্যান্ড বিটলস-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য লেনন ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী, লেখক ও শান্তিকর্মী। ‘ইমাজিন’ তাঁর বিখ্যাত গান। এই গানে তিনি কোন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন? কেন গানটি আজও এত প্রাসঙ্গিক?
৩ ঘণ্টা আগে
বর্তমান বিশ্বে সাহসী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যাঁর নাম সবার আগে আসে, তিনি নোম চমস্কি। ৭ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন। একদিকে তিনি আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের স্থপতি, অন্যদিকে শোষিতের পক্ষে দাঁড়ানো এক অকুতোভয় যোদ্ধা। খুঁজে দেখা যাক আধুনিক সময়ের অন্যতম প্রধান চিন্তক ও জনবুদ্ধিজীবী নোম চমস্কির বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম।
৪ ঘণ্টা আগে
শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়। যদিও ইতিহাসের পাতায় কচুরিপানা নিয়ে খুব কমই লেখা হয়েছে, কিন্তু কচুরিপানার অবদান অস্বীকার কোনো উপায় নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবল বারুদ আর রক্তের ইতিহাস নয়। এটি ছিল বাংলার মাটি, জল ও প্রকৃতির এক সম্মিলিত সংগ্রাম।
৫ ঘণ্টা আগে
‘আমরা বর্ষার অপেক্ষায় আছি… তাঁরা পানিকে ভয় পায়, আর আমরা হচ্ছি জলের রাজা। প্রকৃতি হবে আমাদের দ্বিতীয় বাহিনী।’ নিউইয়র্ক টাইমসের খ্যাতিমান সাংবাদিক সিডনি শনবার্গের ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছিলেন এক বাঙালি অফিসার।
৫ ঘণ্টা আগে