leadT1ad

১০০টিরও বেশি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন চীনের

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০০
পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোর মধ্যে চীনই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে তার অস্ত্রভাণ্ডার সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করছে। ছবি: রয়টার্স।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের (পেন্টাগন) একটি খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন তার সর্বশেষ তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো এলাকায় ১০০টিরও বেশি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) মোতায়েন করে থাকতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আলোচনায় বসার বিষয়ে বেইজিংয়ের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এতে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

শিকাগোভিত্তিক গবেষণা সংস্থা বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস জানায়, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোর মধ্যে চীনই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে তার অস্ত্রভাণ্ডার সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করছে। তবে বেইজিং এ ধরনের প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। চীনের দাবি, এসব প্রতিবেদন চীনকে ‘কলঙ্কিত’ করার চেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে তৈরি।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারেন। কিন্তু রয়টার্সের দেখা পেন্টাগনের খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন এ ধরনের আলোচনায় আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বা বিস্তৃত কোনো চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন মঙ্গোলিয়া সীমান্তের কাছে নতুন সাইলো এলাকায় ১০০টিরও বেশি কঠিন জ্বালানিচালিত ডিএফ-৩১ আইসিবিএম মোতায়েন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পেন্টাগন আগেও এসব সাইলো এলাকার অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিল। তবে সেখানে কতটি ক্ষেপণাস্ত্র রাখা হয়েছে, সে তথ্য আগে প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে পেন্টাগন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীন প্রতিরক্ষামূলক পারমাণবিক কৌশল অনুসরণ করে। তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মাত্রায় পারমাণবিক শক্তি বজায় রাখে। একই সঙ্গে চীন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ মেনে চলছে বলে দাবি করেছে।

খসড়া প্রতিবেদনে নতুন মোতায়েন করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কংগ্রেসে পাঠানোর আগে প্রতিবেদনের তথ্য পরিবর্তিত হতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীনের পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ছিল ৬০০-র কিছু বেশি। আগের বছরের তুলনায় উৎপাদনের গতি কিছুটা কম ছিল। তবে একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পারমাণবিক সম্প্রসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের ওয়ারহেডের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

চীন দাবি করে আসছে, তারা ‘আত্মরক্ষামূলক পারমাণবিক নীতি’ অনুসরণ করে এবং ‘প্রথম ব্যবহার না করার’ নীতিতে অটল রয়েছে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কথা বলেছেন। তবে তা কীভাবে বা কোন কাঠামোয় করা হবে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে চীন ও রাশিয়াকে নিয়ে নিউ স্টার্ট চুক্তির পরিবর্তে তিন পক্ষের একটি নতুন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

পেন্টাগনের প্রতিবেদনে চীনের সামগ্রিক সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, চীন ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়ার সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এবং দ্বীপটিকে ‘পুনরেকত্রীকরণে’ বলপ্রয়োগের পথ কখনোই নাকচ করেনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তাইওয়ান দখলের জন্য চীন সামরিক বিকল্পগুলো আরও পরিমার্জিত করছে। এর মধ্যে সরাসরি শক্তি প্রয়োগের কৌশলও রয়েছে। প্রয়োজনে চীন তার মূল ভূখণ্ড থেকে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার নটিক্যাল মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালাতে পারে। পর্যাপ্ত মাত্রায় এ ধরনের হামলা হলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশ পেল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ২০১০ সালে স্বাক্ষরিত নিউ স্টার্ট চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে আর দুই মাসেরও কম সময় বাকি। এই চুক্তির আওতায় উভয় দেশ সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৫০টি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং ৭০০টি বাহক ব্যবস্থা মোতায়েন করতে পারে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও জো বাইডেন চুক্তিটির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়েছিলেন। তবে এই চুক্তি আর নতুন করে বাড়ানোর সুযোগ নেই।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে তিন পক্ষের পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংগঠন আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবল বলেন, আরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্র ও কূটনৈতিক সংলাপের অভাব কোনো দেশকেই নিরাপদ করবে না।

Ad 300x250

সম্পর্কিত