leadT1ad

শান্তি আলোচনার মাঝেই ইউক্রেনের ওপর ব্যাপক হামলা চালাল রাশিয়া

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

রাশিয়া ৬৫৩টি ড্রোন ও ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনে হামলা চালায়। ছবি: সংগৃহীত।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের ওপর অন্যতম বড় আকারের আকাশ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ হামলা চালানো হয় যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা নিয়ে কিছু অগ্রগতির কথা জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ইউক্রেনের দাবি অনুযায়ী, শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় রাশিয়া ৬৫৩টি ড্রোন ও ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। হামলায় দেশের নানা স্থানে জ্বালানি অবকাঠামো ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইগর ক্লিমেঙ্কো জানান, আক্রমণটি ২৯টি স্থানে আঘাত হানে। এ হামলার কারণে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়। কেন্দ্রটি রাশিয়ার দখলে রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জানায়, ছয়টি বন্ধ রিঅ্যাক্টর ঠান্ডা রাখতে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি, নইলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

জেলেনস্কি বলেন, এই হামলায় লক্ষ্য ছিল জ্বালানি স্থাপনাগুলো। একটি ড্রোন হামলায় কিয়েভের কাছের ফাস্টিভ শহরের রেলস্টেশন ধ্বংস হয়ে যায়। ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, তারা ৫৮৫টি ড্রোন এবং ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। অপরদিকে মস্কোর দাবি, তারা সামরিক শিল্প স্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট জ্বালানি কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে এবং সব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।

জেলেনস্কি জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ ও জারেড কুশনারের সঙ্গে গঠনমূলক ফোনালাপ করেছেন। তবে দুই পক্ষই স্বীকার করে যে প্রকৃত অগ্রগতি নির্ভর করছে রাশিয়ার বাস্তবসম্মত শান্তি-প্রচেষ্টার ওপর।

এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রমে সাফল্য বাড়ছে রাশিয়ার। রুশ বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোকরভস্ক শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশের শহর মিরনোহরাদও ঘেরাওয়ের মুখে। শুধু নভেম্বর মাসেই রুশ বাহিনী প্রায় ৫০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে, যা অক্টোবরে দখল করা ভূমির দ্বিগুণ। রাশিয়া এখন কার্যত লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় পুরোটা এবং খেরসন পর্যন্ত উপকূলীয় অংশের বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সম্মুখভাগে স্থিতাবস্থা থাকলেও রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রগতি ধরে রেখেছে।

আগামী সোমবার লন্ডনে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্মানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ। তারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন।

ম্যাক্রোঁ রাশিয়ার এই উত্তেজনাপূর্ণ পথের সমালোচনা করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, শান্তির জন্য রাশিয়াকে চাপের মুখে রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অব্যাহত পদক্ষেপ নিতে হবে। এর আগে মিয়ামিতে আলোচনার পর গত মঙ্গলবার উইটকফ ও কুশনার মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করলেও কোনো সমঝোতা গড়ে ওঠেনি।

শুক্রবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাস্তব অগ্রগতি তখনই সম্ভব যখন রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ব্যাপারে আন্তরিক অঙ্গীকার দেখাবে এবং উত্তেজনা কমানোর পদক্ষেপ নেবে।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উপপ্রধান কৌঁসুলি জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা শান্তি আলোচনা চলার অজুহাতে বাতিল করা যাবে না। এটি স্থগিত করতে হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত দরকার। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে জবাবদিহির সুযোগ থাকা আবশ্যক।

এ পরিস্থিতিতে পুতিন সামরিক বাহিনীকে শীতকালেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা যুদ্ধের আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত