leadT1ad

রাশিয়া ও চীনের সমর্থনের জোরে ‘কঠোর না হতে’ মাদুরোকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ফ্লোরিডার পাম বিচে তার মার-এ-লাগো ক্লাবে বক্তব্য রাখছেন। ছবি: এপি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে নতুন করে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, মাদুরোর জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হলে তা হবে একটি ‘বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত’। ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ চাপের কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়া ও চীন।

সোমবার ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। এ সময় তার পাশে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, গত চার মাস ধরে কারাকাসের ওপর চলমান চাপ আরও বাড়তে পারে।

মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানোই কি লক্ষ্য কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, সেটি হতে পারে। তবে সিদ্ধান্তটি মাদুরোর ওপরই নির্ভর করছে। তিনি বলেন, মাদুরোর জন্য সরে দাঁড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কী হয়, তা সময়ই বলে দেবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, মাদুরো যদি কঠোর অবস্থান নেন, তাহলে সেটিই হবে তার শেষবারের মতো ‘কঠোর হওয়ার’ সুযোগ।

এই হুমকির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ভেনেজুয়েলার একটি তেলবাহী জাহাজ ধাওয়া করে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এটি একটি ‘ডার্ক ফ্লিট’-এর অংশ, যা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।

ট্রাম্প বলেন, জাহাজটি ধরা পড়বে। তিনি জানান, কোস্ট গার্ড ইতোমধ্যে ভেনেজুয়েলার দুটি জাহাজ ও প্রায় ৪০ লাখ ব্যারেল তেল জব্দ করেছে। এসব তেল বিক্রি করা, সংরক্ষণ করা বা কৌশলগত মজুতে ব্যবহার করা হতে পারে। জাহাজগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই থাকবে বলে তিনি জানান।

মাদুরোর পাল্টা প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের বক্তব্যের জবাবে মাদুরো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ট্রাম্পের উচিত নিজের দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার দিকে মনোযোগ দেওয়া। ভেনেজুয়েলাকে হুমকি দেওয়া তার জন্য কোনো সমাধান নয়।

মাদুরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের অভ্যন্তরীণ বিষয় সামলালে এবং বিশ্বে দায়িত্বশীল আচরণ করলে সবার জন্যই তা ভালো হতো।

ভেনেজুয়েলার গুরুত্বপূর্ণ তেল খাতকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযান চলছে এমন এক সময়ে, যখন দেশটির আশপাশে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই উপস্থিতির লক্ষ্য মাদক পাচার দমন। এর অংশ হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় সাগরে মাদক বহনকারী সন্দেহে বহু নৌযানে হামলা চালানো হয়েছে।

সমালোচকরা এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এসব অভিযানে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

ট্রাম্পের বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানায়, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি সন্দেহভাজন নৌযানে হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির দাবি, তাদের বিপুল তেলসম্পদ দখলের উদ্দেশ্যেই যুক্তরাষ্ট্র মাদুরো সরকার উৎখাত করতে চায়। তারা মার্কিন জাহাজ জব্দের ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ভেনেজুয়েলার অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক ডাকা হয়। রাশিয়া ও চীন এ অনুরোধ সমর্থন করে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিলের সঙ্গে ফোনালাপে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এসব কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক নৌপরিবহনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। রাশিয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার সরকার ও জনগণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মার্কিন অবরোধ ও চীনের অবস্থান

চীনও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির পরিপন্থী এবং অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করে, এমন সব পদক্ষেপের বিরোধিতা করে চীন।

লিন জিয়ান আরও বলেন, ভেনেজুয়েলার স্বাধীনভাবে উন্নয়ন করার অধিকার রয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতাও তাদের বৈধ অধিকার। ভেনেজুয়েলার ন্যায্য অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার অবস্থানকে চীন সমর্থন করে।

এদিকে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মাদুরোর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠ করেন। চিঠিটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশে লেখা। এতে সতর্ক করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ বিশ্বব্যাপী তেল ও জ্বালানি সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

চিঠিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলা শান্তির পক্ষেই রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিজের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সম্পদ রক্ষায় দেশটি প্রস্তুত।

একই সঙ্গে এতে সতর্ক করে বলা হয়, এই আগ্রাসন শুধু ভেনেজুয়েলাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। ভেনেজুয়েলার জ্বালানি বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অবরোধ ও জলদস্যুতার প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক তেল ও জ্বালানি বাজারে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা বাড়বে এবং লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চলসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলো এর বড় ভুক্তভোগী হবে।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত