leadT1ad

তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কীভাবে দেখছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে তারেক রহমান ঢাকায় পৌঁছেছেন। ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় ১৭ থেকে ১৮ বছর পর দেশে ফিরেছেন। দীর্ঘদিন তিনি লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তাঁর দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে একটি বড় রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এই নির্বাচনে বিএনপি শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনৈতিক গতি আরও বাড়াবে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে প্রতীকী ও ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে তুলে ধরেছে। তারা মনে করছে, এটি শেখ হাসিনার পরবর্তী বাংলাদেশে বিরোধী রাজনীতির পুনরুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

আল জাজিরা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা জানিয়েছে, বিএনপি তাঁর জন্য বড় ধরনের সংবর্ধনার আয়োজন করে। এতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের উপস্থিতির পরিকল্পনার কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের পক্ষ থেকেও এই প্রত্যাবর্তনকে প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তাঁর এই প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ছাত্র–নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে গত বছর শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান ঘটে। ওই ঘটনার পর বিএনপি নতুন করে রাজনৈতিক গতি ফিরে পাচ্ছে।

১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে মূলত খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দুই দলের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে এসেছে। এর মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারছে না। ফলে এবারের নির্বাচনে বিএনপি প্রভাবশালী অবস্থানে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০০৮ সাল থেকে তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলায় সাজা হয়েছিল। এর মধ্যে অর্থপাচার এবং শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগসংক্রান্ত মামলাও ছিল। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর আদালত তাঁকে এসব মামলায় খালাস দেন। এতে তাঁর দেশে ফেরার পথে থাকা আইনি বাধা দূর হয়।

এই প্রত্যাবর্তন এমন এক রাজনৈতিক রূপান্তরের সময় ঘটছে, যা এখনো ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার এই সময়টি পরিচালনা করছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর গণতান্ত্রিক বৈধতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আসন্ন নির্বাচনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরেছেন। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি আগামী বছরের নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে তারেক রহমান দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রয়টার্স তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। রয়টার্সের খবরের শিরোনাম করেছে— ‘নির্বাচনের আগে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমান’।

তাঁর দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির অন্তত ৫০ লাখ সমর্থককে একত্র করার লক্ষ্যকে রয়টার্স শক্তি প্রদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও বিচ্ছিন্ন সহিংসতার আশঙ্কার কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের ডিসেম্বরের এক জরিপে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পেতে পারে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। দলটি নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতার হুমকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন প্রায় ১৭ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার এই মুসলিম-প্রধান দেশটি একটি সংবেদনশীল নির্বাচনী সময় পার করছে। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এই নির্বাচনকে স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি মোড় পরিবর্তনের সময় পার করছে। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির শান্তিপূর্ণভাবে জনসমর্থন সংগঠিত করার সক্ষমতার পরীক্ষা। একই সঙ্গে এটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তারা কতটা গ্রহণযোগ্যভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে পারে।

সরকার অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে হামলা এবং বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে সামগ্রিকভাবে নিরপেক্ষ ও তথ্যভিত্তিক সুর লক্ষ করা যায়। তারা মূলত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিএনপির রাজনৈতিক গতি এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার চ্যালেঞ্জের দিকগুলো তুলে ধরেছে। অতীতের দুর্নীতির অভিযোগের কথা কিছু প্রতিবেদনে এসেছে। তবে সেগুলো বাতিল হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। বড় কোনো গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়নি।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোও তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে তথ্যভিত্তিকভাবে উপস্থাপন করেছে। দ্য হিন্দু ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তাঁর দেশে ফেরার তারিখ, সংবর্ধনার আয়োজন এবং নির্বাচনী কৌশলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে। তারা তারেক রহমানের মামলায় খালাস পাওয়া এবং বিএনপির এগিয়ে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছে। কিছু প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটও ইঙ্গিত আকারে এসেছে। সামগ্রিকভাবে এসব প্রতিবেদনের ভাষা পর্যবেক্ষণধর্মী।

পাকিস্তানি গণমাধ্যমেও বিষয়টি সরল ও তথ্যনির্ভরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ডন ও জিও নিউজ তারেক রহমানের দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান এবং তাঁকে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তুলে ধরেছে। তারা তাঁকে একটি রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসেবে উল্লেখ করেছে। আসন্ন নির্বাচনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও প্রতিবেদনে এসেছে। দ্য ডন বলেছে, নির্বাচনের আগে প্রায় ১৭ বছর নির্বাসনের পর ফিরে এলেন বাংলাদেশের শীর্ষ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত নেতা।

সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিএনপির ভেতরে এটি বিজয়ী প্রত্যাবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একই সঙ্গে এটি দলটির সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে এই ঘটনাকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের বিষয়ে সতর্কতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত