ইমরান নাফিস

রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও তিনজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সুনির্দিষ্ট কারণ হিসেবে কেবল ‘জনস্বার্থ’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর হাদি হত্যা মামলার আসামির জামিন ঘিরে সৃষ্ট জটিলতা, ফেসবুকে আইন উপদেষ্টাকে নিয়ে সমালোচনা এবং স্থানীয় রাজনীতির সমীকরণের বিষয়টি উঠে এসেছে।
গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসে।
নিয়োগ বাতিল হওয়া আইন কর্মকর্তারা হলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ জুলফিকার আলম শিমুল এবং তিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম ইব্রাহিম খলিল, মো. মন্টু আলম ও মোহাম্মদ আইয়ুব আলী।
নিয়োগ বাতিলের তালিকায় থাকা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ জুলফিকার আলম শিমুলকে ঘিরে আলোচনা মূলত একটি নির্দিষ্ট মামলাকেন্দ্রিক। হাদি হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ফয়সালের জামিন ও রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে শেখ জুলফিকার আলম শিমুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে যেভাবে ঘটনাটি উপস্থাপন করা হচ্ছে, বাস্তবতা তার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। একটি নির্দিষ্ট মামলাকে কেন্দ্র করেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানির দিন তিনি স্বল্প সময়ের জন্য আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মামলাটি পরিচালনা করতে পারেন, তবে আদালতের সার্বিক দায়ভার তাঁর ওপরই বর্তায়। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আদালতে ১৫০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত মামলার শুনানি হয়। এর মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য অনুপস্থিত থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
রাষ্ট্রপক্ষের নোট উপস্থাপনসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফয়সালের মামলার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষ থেকে যথানিয়মে নোট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দীর্ঘদিন আগের নোট বা রিসিভ কপি সংরক্ষণের কোনো বাধ্যবাধকতা বা পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। ১০ মাস আগের একটি মামলার নোটের রিসিভ কপি তাৎক্ষণিকভাবে দেখাতে না পারার বিষয়টি প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার ফল।’
জুলফিকার শিমুল আরও দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট মামলায় ‘ফরওয়ার্ডিং’ বা রিমান্ড আবেদনে আসামিকে দুর্ধর্ষ বা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি রিমান্ড শেষে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল না। এসব বিবেচনায় আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন, যা বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই মামলাটি নিয়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাপের মুখে পড়ে আমাকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত একটি মামলাকে কেন্দ্র করে আমাকে “সাইজ” করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি দায়িত্বে থাকলেই সবকিছুকে সন্দেহের চোখে দেখার প্রবণতা ন্যায়বিচারের জন্য উদ্বেগজনক।’
নিয়োগ বাতিল হওয়া সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম ইব্রাহিম খলিল মনে করছেন, তাঁর অব্যাহতির পেছনে রাজনৈতিক অসন্তোষ ও প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে। কারণ দর্শানো ছাড়াই এই সিদ্ধান্তে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ইব্রাহিম খলিল স্ট্রিমকে বলেন, তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহতির কারণ জানতে পারেননি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানতে পেরেছেন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমি কোথায় এবং কী ধরনের অনিয়ম করেছি, সেটি আমাকে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।’
নিয়োগ বাতিলের সম্ভাব্য দুটি কারণের কথা উল্লেখ করেন ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে সম্ভাব্য নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইন উপদেষ্টাকে নিয়ে একটি সমালোচনামূলক পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই পোস্টের জেরে আইন উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অসন্তোষ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া ভোলার একটি রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে কিছু প্রভাবশালী মহলের স্বার্থে আঘাত লাগায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে বলেও তিনি ধারণা করছেন।
নিজেকে সৎ দাবি করে তিনি বলেন, ঢাকার বিভিন্ন আদালতে একাধিক পেশকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কয়েকজন বিচারপতির অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়াসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘আমাকে থামিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো দুর্নীতিকে উৎসাহ দেওয়া। আইনজীবী সমাজে আমি দুর্নীতিবিরোধী হিসেবে পরিচিত। এই অবস্থান থেকেই আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আরেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মন্টু আলমের নিয়োগ বাতিলের বিষয়টিও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি দাবি করছেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন এবং কোনো আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই।
মো. মন্টু আলম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ আইনজীবী। ওকালতি করে জীবিকা নির্বাহ করি। হঠাৎ করেই কেন আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট কারণ জানতে পারিনি।’ শুরুতে সিভিল শাখা এবং পরে ক্রিমিনাল শাখায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি জানান, তিনি শুধু ব্যারিস্টার নওশাদ জমির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যিনি পঞ্চগড় আসন থেকে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এর বাইরে তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা কিছু পোস্ট তাঁর জন্য কাল হয়েছে কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
মন্টু আলম বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো বিতর্কিত পোস্ট দিইনি। তবে বিদায়ী অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে একটি পোস্ট এবং ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দেখতে চাই—এমন একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলাম।’ একজন নাগরিক হিসেবে অব্যাহতির কারণ জানার অধিকার তাঁর রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া নিয়ে আইন ও বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। বিভাগটির সূত্র জানায়, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে চারজনের নিয়োগপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ভিত্তিতেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বোর্ড মিটিং বা আলাদা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়ার পর সলিসিটর কার্যালয়ের মাধ্যমে ওই নিয়োগ বাতিল করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া ও বাতিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টি জড়িত থাকে। রাষ্ট্রপতির পক্ষে সরকার এ–সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই নিয়োগ বাতিলের কারণ দর্শানো বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা সাধারণত মানা হয় না। অতীত অভিজ্ঞতায়ও এমন কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে আরেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ আগস্ট এক আদেশে ৬৬ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৬১ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। নিয়োগ বাতিল হওয়া কর্মকর্তারা ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও তিনজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সুনির্দিষ্ট কারণ হিসেবে কেবল ‘জনস্বার্থ’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর হাদি হত্যা মামলার আসামির জামিন ঘিরে সৃষ্ট জটিলতা, ফেসবুকে আইন উপদেষ্টাকে নিয়ে সমালোচনা এবং স্থানীয় রাজনীতির সমীকরণের বিষয়টি উঠে এসেছে।
গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসে।
নিয়োগ বাতিল হওয়া আইন কর্মকর্তারা হলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ জুলফিকার আলম শিমুল এবং তিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম ইব্রাহিম খলিল, মো. মন্টু আলম ও মোহাম্মদ আইয়ুব আলী।
নিয়োগ বাতিলের তালিকায় থাকা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ জুলফিকার আলম শিমুলকে ঘিরে আলোচনা মূলত একটি নির্দিষ্ট মামলাকেন্দ্রিক। হাদি হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ফয়সালের জামিন ও রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে শেখ জুলফিকার আলম শিমুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে যেভাবে ঘটনাটি উপস্থাপন করা হচ্ছে, বাস্তবতা তার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। একটি নির্দিষ্ট মামলাকে কেন্দ্র করেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানির দিন তিনি স্বল্প সময়ের জন্য আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মামলাটি পরিচালনা করতে পারেন, তবে আদালতের সার্বিক দায়ভার তাঁর ওপরই বর্তায়। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আদালতে ১৫০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত মামলার শুনানি হয়। এর মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য অনুপস্থিত থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
রাষ্ট্রপক্ষের নোট উপস্থাপনসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফয়সালের মামলার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষ থেকে যথানিয়মে নোট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দীর্ঘদিন আগের নোট বা রিসিভ কপি সংরক্ষণের কোনো বাধ্যবাধকতা বা পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। ১০ মাস আগের একটি মামলার নোটের রিসিভ কপি তাৎক্ষণিকভাবে দেখাতে না পারার বিষয়টি প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার ফল।’
জুলফিকার শিমুল আরও দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট মামলায় ‘ফরওয়ার্ডিং’ বা রিমান্ড আবেদনে আসামিকে দুর্ধর্ষ বা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি রিমান্ড শেষে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল না। এসব বিবেচনায় আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন, যা বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই মামলাটি নিয়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাপের মুখে পড়ে আমাকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত একটি মামলাকে কেন্দ্র করে আমাকে “সাইজ” করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি দায়িত্বে থাকলেই সবকিছুকে সন্দেহের চোখে দেখার প্রবণতা ন্যায়বিচারের জন্য উদ্বেগজনক।’
নিয়োগ বাতিল হওয়া সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম ইব্রাহিম খলিল মনে করছেন, তাঁর অব্যাহতির পেছনে রাজনৈতিক অসন্তোষ ও প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে। কারণ দর্শানো ছাড়াই এই সিদ্ধান্তে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ইব্রাহিম খলিল স্ট্রিমকে বলেন, তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহতির কারণ জানতে পারেননি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানতে পেরেছেন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমি কোথায় এবং কী ধরনের অনিয়ম করেছি, সেটি আমাকে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।’
নিয়োগ বাতিলের সম্ভাব্য দুটি কারণের কথা উল্লেখ করেন ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে সম্ভাব্য নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইন উপদেষ্টাকে নিয়ে একটি সমালোচনামূলক পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই পোস্টের জেরে আইন উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অসন্তোষ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া ভোলার একটি রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে কিছু প্রভাবশালী মহলের স্বার্থে আঘাত লাগায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে বলেও তিনি ধারণা করছেন।
নিজেকে সৎ দাবি করে তিনি বলেন, ঢাকার বিভিন্ন আদালতে একাধিক পেশকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কয়েকজন বিচারপতির অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়াসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘আমাকে থামিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো দুর্নীতিকে উৎসাহ দেওয়া। আইনজীবী সমাজে আমি দুর্নীতিবিরোধী হিসেবে পরিচিত। এই অবস্থান থেকেই আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আরেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মন্টু আলমের নিয়োগ বাতিলের বিষয়টিও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি দাবি করছেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন এবং কোনো আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই।
মো. মন্টু আলম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ আইনজীবী। ওকালতি করে জীবিকা নির্বাহ করি। হঠাৎ করেই কেন আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট কারণ জানতে পারিনি।’ শুরুতে সিভিল শাখা এবং পরে ক্রিমিনাল শাখায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি জানান, তিনি শুধু ব্যারিস্টার নওশাদ জমির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যিনি পঞ্চগড় আসন থেকে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এর বাইরে তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা কিছু পোস্ট তাঁর জন্য কাল হয়েছে কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
মন্টু আলম বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো বিতর্কিত পোস্ট দিইনি। তবে বিদায়ী অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে একটি পোস্ট এবং ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দেখতে চাই—এমন একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলাম।’ একজন নাগরিক হিসেবে অব্যাহতির কারণ জানার অধিকার তাঁর রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া নিয়ে আইন ও বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। বিভাগটির সূত্র জানায়, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে চারজনের নিয়োগপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ভিত্তিতেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বোর্ড মিটিং বা আলাদা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়ার পর সলিসিটর কার্যালয়ের মাধ্যমে ওই নিয়োগ বাতিল করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া ও বাতিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টি জড়িত থাকে। রাষ্ট্রপতির পক্ষে সরকার এ–সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই নিয়োগ বাতিলের কারণ দর্শানো বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা সাধারণত মানা হয় না। অতীত অভিজ্ঞতায়ও এমন কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে আরেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ আগস্ট এক আদেশে ৬৬ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৬১ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। নিয়োগ বাতিল হওয়া কর্মকর্তারা ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

রাজধানীর শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষোভ ও সমাবেশস্থল থেকে ‘পিস্তল’সহ এক যুবককে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সেটি খেলনা পিস্তল।
২৮ মিনিট আগে
প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করা সাহসী ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন দেশের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ ও তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, সরকার একা সমাজের সব প্রান্তে পৌঁছাতে পারে না। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোই সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী সহযোগী।
১ ঘণ্টা আগে
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ২ হাজার ৫৮২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
১ ঘণ্টা আগে
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এপোলো ও লেখক মারুফ মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদনের নিন্দা জানিয়েছেন ৪১ নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, এই উদ্যোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মূল চেতনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
২ ঘণ্টা আগে