ইউনেসকোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের ‘ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ইউনেসকোর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকোর ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়। এই স্বীকৃতি ইউনেসকোর তালিকায় বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক বা নিজস্ব সাংস্কৃতিক নিবন্ধন, যা দেশের মুকুটে যুক্ত করল সাফল্যের নতুন পালক।
এর আগে ২০০৮ সালে বাউল সঙ্গীত, ২০১৩ সালে জামদানি শাড়ি, ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা, ২০১৭ সালে শীতল পাটি এবং ২০২৩ সালে ঢাকার রিকশা ও রিকশা-চিত্রকে ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।
বাংলাদেশের তাঁত শিল্পীদের অভিনন্দন জানিয়ে ইউনেসকোর ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, আমরা অভিনন্দন জানাই সেসব তাঁতশিল্পী ও সম্প্রদায়কে, যারা এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন এবং আগামীর প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এই স্বীকৃতি কেবল একটি কাপড়ের স্বীকৃতি নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার বস্ত্রশিল্পে বাংলাদেশের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও সূক্ষ্ম কারুশৈলীর এক অনবদ্য দলিল।
টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্পীরা বংশপরম্পরায় এই বুননবিদ্যা ধারণ করে আসছেন। পারিবারিক তাঁতে তৈরি সূক্ষ্ম নকশা, নরম বুনন এবং তুলা ও সিল্কের সংমিশ্রণে তৈরি শাড়ি বাঙালি নারীর দৈনন্দিন ব্যবহার থেকে উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
টাঙ্গাইল জেলা ও এর আশেপাশের হাজারো পরিবারের জীবিকা এই তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পরিবারভিত্তিক শিখন ও কর্মশালার মাধ্যমে এই দক্ষতা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বাহিত হয়েছে। টাঙ্গাইল শাড়ির এই অর্জন গ্রামীণ অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য এক বিশাল মাইলফলক।
ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বত্ব (জিআই) দাবির বিপরীতে ইউনেস্কোর এই ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ স্বীকৃতি প্রমাণ করে এই বুনন শিল্পের নাড়ির টান বাংলাদেশের মাটিতেই প্রোথিত।
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে বিতর্ক
২০২৪ সালের শুরুতে টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দাবি করে, পশ্চিমবঙ্গের তাঁতি সমবায় সমিতি ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’র জিআই বা ভৌগোলিক নির্দেশক স্বত্ব পেয়েছে। ভারত সরকার ২০২০ সালেই এই আবেদন করেছিল এবং ২০২৩ সালে তাদের দাবির পক্ষে জার্নাল প্রকাশ করে।
দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নির্ধারিত সময়ে আপত্তি জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে দেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জনগণের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও গণমাধ্যমের সমালোচনার মুখে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। হাইকোর্ট সব জিআই পণ্যের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিলে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন তড়িঘড়ি করে জিআই আবেদন করে।
সেই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় এবং ইউনেসকোর কাছে বলিষ্ঠ উপস্থাপনার কারণে ‘ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ী বুনন শিল্প’ বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল।