রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আলোচিত মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন আসামি গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, আয়েশা নলছিটিতে তার দাদাশ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন দুপুর সোয়া ১টার দিকে স্ট্রিমকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।’
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের বহুতল ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে মা ও মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন, গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) এবং তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। হত্যাকাণ্ডের সময় লায়লা আফরোজের স্বামী, শিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম কর্মস্থলে ছিলেন।
শুরু থেকেই এই ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ছিলেন তাদের বাসায় মাত্র চার দিন আগে কাজে আসা গৃহকর্মী আয়েশা। হত্যাকাণ্ডের দিনের ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া যায়, অভিযুক্ত গৃহকর্মী সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বাসায় প্রবেশ করেন এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে নিহত মেয়ের স্কুল ড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান।
মা-মেয়েকে হত্যার এই ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। নৃশংসতা ও খুনির প্রস্তুতি বিশ্লেষণ করে এমন কথা জানিয়েছেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ডিবির ওই কর্মকর্তা স্ট্রিমকে বলেন, ‘খুনের মোটিভ যাই থাকুক, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ খুন করার জন্য মেয়েটি (গৃহকর্মী) তার আসল নামপরিচয় গোপন করেছে। যতবার ওই বাসায় ঢুকেছে প্রত্যেকবারই বোরকা পরে ছিল। তার ফেস (চেহারা) ভবনের কেউ দেখতে পাননি। তার ফোন নম্বরের সঙ্গে লায়লা আফরোজের (নিহত গৃহকর্ত্রী) কথাবার্তা ছাড়া আর কারও সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়নি।’
মা-মেয়েকে অনেকটা ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, নিহত দুজনের গলায় ও শরীরে গভীর ক্ষত রয়েছে। এ ছাড়া তাদের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজন গৃহকর্মী বাইরে থেকে ছুরি এনেছিলেন। এ ছাড়া দুজনকে হত্যার পর ওই নারী বাথরুমে গোসলও সেরেছেন। পরে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বেরিয়ে যায়।
ভবনটির সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই গৃহকর্মীর পালানোর দৃশ্য দেখে বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। সাধারণ গৃহকর্মীরা যেভাবে হাঁটেন ওই নারীর ভঙ্গি তেমন নয়। তাদের ধারণা, কাজে যোগ দিয়ে প্রথম তিনদিন চারপাশ পর্যবেক্ষণ করেছে, এরপর চতুর্থ দিনে খুন করেছে।
এদিকে এ ঘটনায় সোমবার রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন লায়লা আফরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, কথিত গৃহকর্মী আয়েশা কাজ করতে সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে তাঁর বাসায় ঢোকেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তাঁর মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বের হন। তার কাঁধে ছিল নাফিসার ব্যাগ। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ওই গৃহকর্মী মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, কিছু স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে।
বাসার দামি জিনিসপত্র লুট করতে ওই নারী গৃহকর্মীর ছদ্মবেশ নিতে পারেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।