leadT1ad

ভোটের আগে আদালতের আশ্রয়ে ঋণখেলাপি প্রার্থীরা, ভাগ্য নির্ধারণ করবে ইসি

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৯
নির্বাচন কমিশন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক ঋণখেলাপি প্রার্থীদের অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করেও উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচনে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এসব প্রার্থীর ক্ষেত্রে ঋণের বর্তমান অবস্থা এবং আদালতের স্থগিতাদেশের বিষয়টি আলাদাভাবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানানো হবে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

আদালতের আদেশে ‘নিয়মিত’ কিন্তু বিশেষ নোট

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যারা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন, সিআইবি রিপোর্টে তাদের ঋণকে ‘নিয়মিত’ দেখানো হবে। তবে সেখানে বিশেষ নোটে লেখা থাকবে—‘ঋণটি নিয়মিত, আদালতের আদেশে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেলাপি স্থগিতাদেশ’।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, আগে নির্বাচনের প্রাক্কালে অনেক সময় খেলাপি প্রার্থীকে ঢালাওভাবে ‘ভালো’ হিসেবে দেখানোর সুযোগ ছিল, তবে এবার সেই সুযোগ বন্ধ। রিপোর্টে আদালতের সুরক্ষার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের অবস্থান

সূত্রমতে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির অনেক ব্যবসায়ীর ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছিল। পরে নীতি শিথিল করে অনেকের ঋণ নিয়মিত করা হলেও কেউ কেউ তাও পারেননি। নির্বাচনে লড়তে তাঁরা এখন আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আসলাম চৌধুরী অন্যতম। চট্টগ্রাম-৪ আসনের এই প্রার্থী ও রাইজিং গ্রুপের কর্ণধারের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। তিনি আদালতের স্থগিতাদেশ পেয়েছেন।

এদিকে, কুমিল্লা-৬ আসনের প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী স্থগিতাদেশ পেলেও ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা শোধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়াও বিএনপির আরও অন্তত এক ডজন প্রার্থী একই ধরনের আইনি সুরক্ষা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে হাইপ্রোফাইল প্রার্থীও রয়েছেন।

অন্যদিকে, বিএনপি জোটের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নামও ঋণখেলাপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে তিনি এই সিদ্ধান্ত ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন চেম্বার আদালত। ফলে তার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে আর কোনো আইনি বাধা নেই।

সিআইবিতে চলছে রাতভর কাজ

তথ্য গোপন ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করছে। ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। এবার প্রায় ৩ হাজার প্রার্থীর ঋণ তথ্য যাচাইয়ের প্রস্তুতি রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা কোনো প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেব না। আমরা প্রার্থীদের ঋণের প্রকৃত অবস্থান জানিয়ে দেব। যারা রিট করে খেলাপি মুক্ত হয়েছেন, তাদের বিষয়ে আদালতের আদেশটিও ইসিকে জানানো হবে। অন্যদের বিষয়ে যা তথ্য পাওয়া যায়, তাই জানিয়ে দেওয়া হবে।’

আরপিও ও গভর্নরের নির্দেশনা

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো ঋণখেলাপি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও যদি মিথ্যা তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে ইসি তার সদস্যপদ বাতিল করতে পারবে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন কোনো ‘গোপন ঋণ’ সিআইবি ডেটাবেজ থেকে বাদ না পড়ে। তবে ক্রেডিট কার্ড বা ছোটখাটো ফির জন্য কাউকে যেন অহেতুক হয়রানি করা না হয়, সেদিকেও নজর দিতে বলেছেন তিনি।

খেলাপি ঋণের চিত্র

দেশের ব্যাংকগুলো যত টাকা ঋণ দিয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশের বেশিই এখন খেলাপি। মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। যার ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ এখন খেলাপি। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠিত হওয়ার সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত। যাছাই-বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে প্রতীক বরাদ্দ করবেন ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। প্রচার চালানো যাবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ ১২ ফেব্রুয়ারি।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত