মানবাধিকারকে সমাজের বিশ্বাসের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। মানবাধিকার দিবস–২০২৫ উপলক্ষ্যে আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। এ বছর ‘মানবাধিকার, আমাদের নিত্যদিনের অপরিহার্য’—প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি মানুষের জীবনের মূল্য মর্যাদার সঙ্গে এবং কোনো বৈষম্য ছাড়াই নিশ্চিত হতে হবে। বাংলাদেশ (এ জন্য) তার জাতীয় মানবাধিকার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে আন্তর্জাতিক অংশীদার ও জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করে যাবে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ড. ইউনূস জানান, মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ও জাতিসংঘ সনদে উল্লেখিত সব মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষায় দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তরুণদের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের দেড় বছর পর দেশ এবার মানবাধিকার দিবস পালন করছে। গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ নিপীড়ন ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটায় এবং জনগণের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করে। সেই উত্তাল সময়ের মধ্য দিয়েই ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর আবির্ভাব ঘটে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান জানান, সরকার এখন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জনগণের বিপুল সমর্থনের ভিত্তিতে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। রায়ে পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
বাণীতে প্রফেসর ইউনূস উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এখন মানবাধিকারসংক্রান্ত জাতিসংঘের নয়টি মূল আন্তর্জাতিক চুক্তির সবগুলোতে যুক্ত। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে গুম প্রতিরোধবিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকল এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সব মূল কনভেনশনেও সই করেছে, যা শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান। সংঘাত, মানবিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করার কথা তুলে ধরেন তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমার এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুত নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চেয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চ–পর্যায়ের সম্মেলনেও তিনি একই অবস্থান তুলে ধরেন।
গাজাসহ বিশ্বের যেকোনো স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে অটল এবং ফিলিস্তিনের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।