স্ট্রিম প্রতিবেদক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারেক রহমান ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। এরপর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। এর পর থেকে সে দেশেই আছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তারেক রহমান দেশের মাটিতে পা রাখছেন।
দেশ ছাড়ার আাগে তারেক রহমান ২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের ওপর তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন। আদালতে জবানবন্দিতে তারেক রহমান বলেছিলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে চোখ বেঁধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই নিগৃহীত করা হয়েছে। আমি একজন রাজনীতিবিদ, কোনো সন্ত্রাসী নই। আদালত আমার চিকিৎসার নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। এবার রিমান্ডে নিলে আমি আর বাঁচব না।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শারীরিকভাবে এতটাই নির্যাতনের শিকার হয়েছি যে এখন মেরুদণ্ড সোজা করেও দাঁড়াতে পারছি না। চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা মোটা কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে।’
নির্যাতনের বিষয়ে সে সময়ে আদালতে দেওয়া চিকিৎসকদের রিপোর্টেও উঠে আসে ভয়াবহতা। মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, রিমান্ডে নির্মম প্রহার ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে তারেক রহমানের মেরুদণ্ডের ৬ ও ৭ নম্বর হাড় ভেঙে গেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি হাড় স্থানচ্যুত বা বেঁকে গেছে। মেরুদণ্ডের ৩৩টি হাড়ের মাঝে দূরত্ব কমে যাওয়ার মতো জটিলতাও দেখা দেয়। চিকিৎসকরা তখন জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে বিশেষায়িত অর্থোপেডিক চিকিৎসার সুপারিশ করেন।
২০০৬ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে ওঠে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। পর্দার আড়ালে কলকাঠি নেড়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। ক্ষমতায় বসেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সেই সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ছিল মূলত রাজনৈতিক ‘উইচ হান্ট’ বা দমন-পীড়নের একটি মোড়ক। তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করে একটি ‘কিংস পার্টি’ বা অনুগত রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করা। বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি হিসেবে তারেক রহমান ছিলেন সেই সরকারের অন্যতম ‘টার্গেট’। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া মানেই ছিল বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এই লক্ষ্যেই ওই বছরের ৭ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের বাসা থেকে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ মোট ১৭টি মামলা হয়। তারেক রহমানকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়। সে সময় তারেক রহমান বলেছিলেন, রিমান্ডের জন্য তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হয়। সেটি জেআইসি (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) কি না সে প্রশ্ন ওঠেছিল।
এই ১৭ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ঘোষণা করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একে একে সব মামলা থেকে সাজামুক্ত হন তারেক রহমান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলা হলো–
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন মামলা: ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুদকের করা এ মামলায় তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
অর্থ পাচার মামলা: টঙ্গীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দিতে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের নেওয়া ঘুষের টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার এবং সেখান থেকে তারেক রহমানের অর্থ খরচের অভিযোগে ২০০৯ সালে এ মামলা হয়। ২০১৩ সালে বিচারিক আদালত তারেক রহমানকে খালাস দিলেও মামুনকে সাজা দেন। পরে মামুনও সাজামুক্ত হয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা: ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলা (হত্যা ও বিস্ফোরক): ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহতের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। প্রথমে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও, ২০১১ সালের সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ মামলা থেকে তারেক রহমানসহ অন্যরা খালাস পেয়েছেন।
২০০৮ সালের শুরু থেকেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্থবিরতায় জনমনে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেনাসমর্থিত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়। এরপর নির্বাচনমুখী হয় সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ ও ফখরুদ্দীন সরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সে সময়ের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গোপনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যেতে রাজি হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছিলেন অনড়। তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো মুক্তি না পেলে তিনি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না, এমনকি আলোচনায়ও বসবেন না।
দীর্ঘ আইনি লড়াই এবং রাজনৈতিক দরকষাকষির পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান ১৩টি মামলায় জামিন পান। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে সরাসরি তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) নেওয়া হয়। সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন। কিন্তু তারেক তখন হুইলচেয়ার ছাড়া নড়াচড়া করতে পারছিলেন না।
হাসপাতালে আট দিন চিকিৎসার পর, ১১ সেপ্টেম্বর তিনি সপরিবারে লন্ডনের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশেষ নির্বাহী আদেশে তাঁকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেয়। বিমানে ওঠার সময় তারেক রহমানের শারীরিক অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে, তাঁকে স্ট্রেচারে করে কেবিনে তুলতে হয়েছিল।
তারেক রহমান দেশ ছাড়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। এরপর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যাকাণ্ড ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পুরোনো বিভিন্ন মামলা পুনরুজ্জীবিত করা ছাড়াও নতুন করে অসংখ্য মামলা দেয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ একাধিক মামলায় তাঁকে পলাতক দেখিয়ে বিচার কাজ চালানো হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এমনকি মানি লন্ডারিং মামলায় নিম্ন আদালত তাঁকে খালাস দিলেও, উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সেই রায় সাজায় রূপ নেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে না ফেরার প্রধান কারণ ছিল তাঁর জীবনের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের অভাব। শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘আয়নাঘর’ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে সংস্কৃতি চালু ছিল, তাতে তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাঁর পরিণতি কী হতো, তা সহজেই অনুমেয়। বিএনপি সব সময় বলেছে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে মিথ্যা মামলায় সাজা কার্যকর করে তাঁকে রাজনীতি থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম স্ট্রিমকে বলেছেন, আজ এটি স্পষ্ট, তারেক রহমানের দেশত্যাগ কোনো সাধারণ প্রস্থান ছিল না। এটি ছিল এক অসম লড়াই থেকে সাময়িক পশ্চাদপসরণ, যাতে তিনি বেঁচে থেকে দলের হাল ধরতে পারেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আমি ক্যান্টনমেন্টে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তখন তাঁকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেছিলেন– ‘নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে’। অর্থাৎ, এখানে হয়তো তাঁর ছেলেকে বের করে আনা ও দলকে পরে সংগঠিত রাখার একটি দূরদৃষ্টি ছিল। ফলে তারেক রহমানের দেশ ত্যাগের বিষয়টি জিয়া পরিবারের ত্যাগ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সমন্বয়। যে কারণে দলটি এখনও সুসংগঠিত।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারেক রহমান ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। এরপর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। এর পর থেকে সে দেশেই আছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তারেক রহমান দেশের মাটিতে পা রাখছেন।
দেশ ছাড়ার আাগে তারেক রহমান ২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের ওপর তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন। আদালতে জবানবন্দিতে তারেক রহমান বলেছিলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে চোখ বেঁধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই নিগৃহীত করা হয়েছে। আমি একজন রাজনীতিবিদ, কোনো সন্ত্রাসী নই। আদালত আমার চিকিৎসার নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। এবার রিমান্ডে নিলে আমি আর বাঁচব না।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শারীরিকভাবে এতটাই নির্যাতনের শিকার হয়েছি যে এখন মেরুদণ্ড সোজা করেও দাঁড়াতে পারছি না। চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা মোটা কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে।’
নির্যাতনের বিষয়ে সে সময়ে আদালতে দেওয়া চিকিৎসকদের রিপোর্টেও উঠে আসে ভয়াবহতা। মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, রিমান্ডে নির্মম প্রহার ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে তারেক রহমানের মেরুদণ্ডের ৬ ও ৭ নম্বর হাড় ভেঙে গেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি হাড় স্থানচ্যুত বা বেঁকে গেছে। মেরুদণ্ডের ৩৩টি হাড়ের মাঝে দূরত্ব কমে যাওয়ার মতো জটিলতাও দেখা দেয়। চিকিৎসকরা তখন জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে বিশেষায়িত অর্থোপেডিক চিকিৎসার সুপারিশ করেন।
২০০৬ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে ওঠে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। পর্দার আড়ালে কলকাঠি নেড়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। ক্ষমতায় বসেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সেই সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ছিল মূলত রাজনৈতিক ‘উইচ হান্ট’ বা দমন-পীড়নের একটি মোড়ক। তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করে একটি ‘কিংস পার্টি’ বা অনুগত রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করা। বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি হিসেবে তারেক রহমান ছিলেন সেই সরকারের অন্যতম ‘টার্গেট’। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া মানেই ছিল বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এই লক্ষ্যেই ওই বছরের ৭ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের বাসা থেকে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ মোট ১৭টি মামলা হয়। তারেক রহমানকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়। সে সময় তারেক রহমান বলেছিলেন, রিমান্ডের জন্য তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হয়। সেটি জেআইসি (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) কি না সে প্রশ্ন ওঠেছিল।
এই ১৭ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ঘোষণা করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একে একে সব মামলা থেকে সাজামুক্ত হন তারেক রহমান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলা হলো–
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন মামলা: ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুদকের করা এ মামলায় তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
অর্থ পাচার মামলা: টঙ্গীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দিতে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের নেওয়া ঘুষের টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার এবং সেখান থেকে তারেক রহমানের অর্থ খরচের অভিযোগে ২০০৯ সালে এ মামলা হয়। ২০১৩ সালে বিচারিক আদালত তারেক রহমানকে খালাস দিলেও মামুনকে সাজা দেন। পরে মামুনও সাজামুক্ত হয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা: ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলা (হত্যা ও বিস্ফোরক): ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহতের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। প্রথমে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও, ২০১১ সালের সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ মামলা থেকে তারেক রহমানসহ অন্যরা খালাস পেয়েছেন।
২০০৮ সালের শুরু থেকেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্থবিরতায় জনমনে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেনাসমর্থিত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়। এরপর নির্বাচনমুখী হয় সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ ও ফখরুদ্দীন সরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সে সময়ের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গোপনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যেতে রাজি হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছিলেন অনড়। তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো মুক্তি না পেলে তিনি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না, এমনকি আলোচনায়ও বসবেন না।
দীর্ঘ আইনি লড়াই এবং রাজনৈতিক দরকষাকষির পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান ১৩টি মামলায় জামিন পান। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে সরাসরি তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) নেওয়া হয়। সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন। কিন্তু তারেক তখন হুইলচেয়ার ছাড়া নড়াচড়া করতে পারছিলেন না।
হাসপাতালে আট দিন চিকিৎসার পর, ১১ সেপ্টেম্বর তিনি সপরিবারে লন্ডনের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশেষ নির্বাহী আদেশে তাঁকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেয়। বিমানে ওঠার সময় তারেক রহমানের শারীরিক অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে, তাঁকে স্ট্রেচারে করে কেবিনে তুলতে হয়েছিল।
তারেক রহমান দেশ ছাড়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। এরপর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যাকাণ্ড ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পুরোনো বিভিন্ন মামলা পুনরুজ্জীবিত করা ছাড়াও নতুন করে অসংখ্য মামলা দেয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ একাধিক মামলায় তাঁকে পলাতক দেখিয়ে বিচার কাজ চালানো হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এমনকি মানি লন্ডারিং মামলায় নিম্ন আদালত তাঁকে খালাস দিলেও, উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সেই রায় সাজায় রূপ নেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে না ফেরার প্রধান কারণ ছিল তাঁর জীবনের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের অভাব। শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘আয়নাঘর’ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে সংস্কৃতি চালু ছিল, তাতে তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাঁর পরিণতি কী হতো, তা সহজেই অনুমেয়। বিএনপি সব সময় বলেছে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে মিথ্যা মামলায় সাজা কার্যকর করে তাঁকে রাজনীতি থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম স্ট্রিমকে বলেছেন, আজ এটি স্পষ্ট, তারেক রহমানের দেশত্যাগ কোনো সাধারণ প্রস্থান ছিল না। এটি ছিল এক অসম লড়াই থেকে সাময়িক পশ্চাদপসরণ, যাতে তিনি বেঁচে থেকে দলের হাল ধরতে পারেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আমি ক্যান্টনমেন্টে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তখন তাঁকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেছিলেন– ‘নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে’। অর্থাৎ, এখানে হয়তো তাঁর ছেলেকে বের করে আনা ও দলকে পরে সংগঠিত রাখার একটি দূরদৃষ্টি ছিল। ফলে তারেক রহমানের দেশ ত্যাগের বিষয়টি জিয়া পরিবারের ত্যাগ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সমন্বয়। যে কারণে দলটি এখনও সুসংগঠিত।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল গভীর রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে নিয়ে এক আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন।
১৯ মিনিট আগে
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান শরিফ হাদির হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। তারা দাবি করেছে, হামলাকারী ‘অন্য কোনোভাবে মারা গেছে’ এমন কথা শুনতে চান না তারা। তারা চান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলাকারীকে জীবিত গ্রেপ্তার করুক এবং এর পেছনের মূ
৭ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান।
৯ ঘণ্টা আগে
‘মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে না, আসমানে হয়। আমি চলে গেলে আমার সন্তান লড়বে, তার সন্তান লড়বে।’– কথাগুলো চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন শরিফ ওসমান হাদি, যিনি শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে