আজ ২৯ ডিসেম্বর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিন। জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় বিনির্মাণে যে কয়জন কিংবদন্তী একদম শুরুর দিকে থাকবেন, তাঁদের মধ্যে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন একজন। তিনি তুলি দিয়ে নিজের জনগোষ্ঠীকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।
স্ট্রিম ডেস্ক

১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে নেত্রকোণা) কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল আবেদিন। বাবার চাকরির সুবাদে তাঁর শৈশব ও কৈশোরের বড় একটা সময় কেটেছে ময়মনসিংহে, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে। তাই জয়নুলের দৃষ্টি ছিল ব্রহ্মপুত্র, নদী, বাড়ি, মানুষের দিকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে প্রকৃতির পাঠশালাই তাঁকে বেশি টানত। আর এই প্রকৃতির প্রতি ভালবাসাই তাঁকে ‘শিল্পাচার্য’ বানিয়েছে।
জয়নুলের ‘শিল্পাচার্য’ হয়ে ওঠার পথটা সহজ ছিল না। প্রথম বাধাই আসে পরিবার থেকে। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তিনি চাইতেন ছেলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু জয়নুলের মন পড়ে থাকে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে, যেখানে বসে তিনি মাঝিদের নৌকা চালানো দেখতেন, আর তাঁদের ছবি আঁকতেন।

মেট্রিক পরীক্ষার আগেই জয়নুল ঠিক করে ফেললেন কলকাতায় গিয়ে আর্ট স্কুলে পড়বেন। ১৯৩০-৩১ সালের দিকে ‘বোম্বে ক্রনিকল’ পত্রিকা গলফ খেলার চিত্র-অঙ্কন নিয়ে প্রতিযোগিতা আহবান করলে তাতে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। বাড়ির কাউকে কিছু না বলে কলকাতা গিয়ে আর্ট স্কুল পরিদর্শন করে আসেন। তখন শিল্পচর্চার প্রতি প্রবল আগ্রহ লক্ষ করে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নুলকে আর্ট স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে তাঁর বাবার কাছে সুপারিশ করেছিলেন।
অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর জয়নুল কলকাতায় গিয়ে ভর্তি হলেন ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস’-এ। মেসবাড়ির খরচ আর আর্ট মেটেরিয়ালের দাম মেটাতে তাঁকে হিমশিম খেতে হতো। সে সময় ময়মনসিংহ জেলা বোর্ড থেকে মাসিক ১৫ টাকা হারে বৃত্তি পেতেন। ১৯৩৭ সালে ছাত্র থাকাবস্থায় আর্ট স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক নিযুক্তও হন। ১৯৩৮ সালে আর্ট স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন।
এই রেজাল্ট তাঁকে প্রথমবারের মতো আলোচনায় নিয়ে আসে। এটি ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম ধাপ।

জয়নুল আবেদিন আর্ট কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বের হলেন বটে, কিন্তু বিশ্ব তাঁকে চিনল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে। পৃথিবী তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভারে ম্রিয়মাণ, বাংলায় ভয়াবহ খাদ্যাভাব। জয়নুলের পকেটে ক্যানভাস বা দামি রং কেনার টাকা নেই।
কিন্তু শিল্পী কি চুপ থাকতে পারেন? তিনি তুলে নিলেন বাজারের সস্তা মোড়ক বা প্যাকিং পেপার এবং সাধারণ কালো কালি। শুকনো তুলির টানে তিনি আঁকলেন সেই কালজয়ী ছবি দুর্ভিক্ষ।
জয়নুল আঁকলেন ডাস্টবিনে মানুষ ও কুকুরের ভাতের লড়াই, কঙ্কালসার মা ও শিশুর হাহাকার। তাঁর আঁকা দুর্ভিক্ষের স্কেচ ছাপা হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ও ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায়। দুর্ভিক্ষের চিত্র নিয়ে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে অনুষ্ঠিত হয় প্রদর্শনী। আর এই ছবিগুলোই জয়নুলকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
জয়নুল আবেদীনের আঁকা প্রতিটি ছবিই এক একটি ইতিহাস। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় আঁকেন ‘নবান্ন’ নামের ৬৫ ফুট দীর্ঘ এক স্ক্রল পেইন্টিং। এতে তিনি গ্রামবাংলার সমৃদ্ধি থেকে শুরু করে শোষণ এবং শেষে প্রতিবাদের গল্প বলেছিলেন।

১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর জয়নুল মনপুরায় ছুটে যান। সেখানে লাশের সারি আর ধ্বংসলীলা দেখে আঁকেন বিখ্যায় ‘মনপুরা’ চিত্রকর্মটি। এটিও খুব বিখ্যাত।
দেশভাগের পর জয়নুল ঢাকায় চলে আসেন। তখন তিনি বিশ্বখ্যাত শিল্পী, চাইলে লন্ডনে বা প্যারিসে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজের দেশে ফিরে এলেন। ঢাকায় তখন ছবি আঁকা শেখার কোনো স্কুল ছিল না। তিনি পাকিস্তান সরকারের আমলাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘গর্ভনমেন্ট ইনস্টিটিউট অফ আর্ট’। সেই ইনস্টিটিউটে কোনো আসবাবপত্র ছিল না, জয়নুল নিজে ছাত্রদের নিয়ে ইট সাজিয়ে বসার ব্যবস্থা করতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেই আর্ট ইনস্টিটিউট এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশে চিত্রকলাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলার প্রধান মানুষ ছিলেন জয়নুল আবেদিন। জয়নুল মনে করতেন, সমাজে শুধু দারিদ্র্য নয়, মানুষের চিন্তা ও রুচিরও অভাব আছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, এসব দূর না হলে সমাজ সত্যিকারের সুন্দর হতে পারে না। তিনি বলেছিলেন, ‘এখন তো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটি স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোন ছবি হয়না।’

১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে নেত্রকোণা) কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল আবেদিন। বাবার চাকরির সুবাদে তাঁর শৈশব ও কৈশোরের বড় একটা সময় কেটেছে ময়মনসিংহে, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে। তাই জয়নুলের দৃষ্টি ছিল ব্রহ্মপুত্র, নদী, বাড়ি, মানুষের দিকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে প্রকৃতির পাঠশালাই তাঁকে বেশি টানত। আর এই প্রকৃতির প্রতি ভালবাসাই তাঁকে ‘শিল্পাচার্য’ বানিয়েছে।
জয়নুলের ‘শিল্পাচার্য’ হয়ে ওঠার পথটা সহজ ছিল না। প্রথম বাধাই আসে পরিবার থেকে। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তিনি চাইতেন ছেলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু জয়নুলের মন পড়ে থাকে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে, যেখানে বসে তিনি মাঝিদের নৌকা চালানো দেখতেন, আর তাঁদের ছবি আঁকতেন।

মেট্রিক পরীক্ষার আগেই জয়নুল ঠিক করে ফেললেন কলকাতায় গিয়ে আর্ট স্কুলে পড়বেন। ১৯৩০-৩১ সালের দিকে ‘বোম্বে ক্রনিকল’ পত্রিকা গলফ খেলার চিত্র-অঙ্কন নিয়ে প্রতিযোগিতা আহবান করলে তাতে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। বাড়ির কাউকে কিছু না বলে কলকাতা গিয়ে আর্ট স্কুল পরিদর্শন করে আসেন। তখন শিল্পচর্চার প্রতি প্রবল আগ্রহ লক্ষ করে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নুলকে আর্ট স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে তাঁর বাবার কাছে সুপারিশ করেছিলেন।
অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর জয়নুল কলকাতায় গিয়ে ভর্তি হলেন ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস’-এ। মেসবাড়ির খরচ আর আর্ট মেটেরিয়ালের দাম মেটাতে তাঁকে হিমশিম খেতে হতো। সে সময় ময়মনসিংহ জেলা বোর্ড থেকে মাসিক ১৫ টাকা হারে বৃত্তি পেতেন। ১৯৩৭ সালে ছাত্র থাকাবস্থায় আর্ট স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক নিযুক্তও হন। ১৯৩৮ সালে আর্ট স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন।
এই রেজাল্ট তাঁকে প্রথমবারের মতো আলোচনায় নিয়ে আসে। এটি ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম ধাপ।

জয়নুল আবেদিন আর্ট কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বের হলেন বটে, কিন্তু বিশ্ব তাঁকে চিনল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে। পৃথিবী তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভারে ম্রিয়মাণ, বাংলায় ভয়াবহ খাদ্যাভাব। জয়নুলের পকেটে ক্যানভাস বা দামি রং কেনার টাকা নেই।
কিন্তু শিল্পী কি চুপ থাকতে পারেন? তিনি তুলে নিলেন বাজারের সস্তা মোড়ক বা প্যাকিং পেপার এবং সাধারণ কালো কালি। শুকনো তুলির টানে তিনি আঁকলেন সেই কালজয়ী ছবি দুর্ভিক্ষ।
জয়নুল আঁকলেন ডাস্টবিনে মানুষ ও কুকুরের ভাতের লড়াই, কঙ্কালসার মা ও শিশুর হাহাকার। তাঁর আঁকা দুর্ভিক্ষের স্কেচ ছাপা হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ও ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায়। দুর্ভিক্ষের চিত্র নিয়ে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে অনুষ্ঠিত হয় প্রদর্শনী। আর এই ছবিগুলোই জয়নুলকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
জয়নুল আবেদীনের আঁকা প্রতিটি ছবিই এক একটি ইতিহাস। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় আঁকেন ‘নবান্ন’ নামের ৬৫ ফুট দীর্ঘ এক স্ক্রল পেইন্টিং। এতে তিনি গ্রামবাংলার সমৃদ্ধি থেকে শুরু করে শোষণ এবং শেষে প্রতিবাদের গল্প বলেছিলেন।

১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর জয়নুল মনপুরায় ছুটে যান। সেখানে লাশের সারি আর ধ্বংসলীলা দেখে আঁকেন বিখ্যায় ‘মনপুরা’ চিত্রকর্মটি। এটিও খুব বিখ্যাত।
দেশভাগের পর জয়নুল ঢাকায় চলে আসেন। তখন তিনি বিশ্বখ্যাত শিল্পী, চাইলে লন্ডনে বা প্যারিসে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজের দেশে ফিরে এলেন। ঢাকায় তখন ছবি আঁকা শেখার কোনো স্কুল ছিল না। তিনি পাকিস্তান সরকারের আমলাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘গর্ভনমেন্ট ইনস্টিটিউট অফ আর্ট’। সেই ইনস্টিটিউটে কোনো আসবাবপত্র ছিল না, জয়নুল নিজে ছাত্রদের নিয়ে ইট সাজিয়ে বসার ব্যবস্থা করতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেই আর্ট ইনস্টিটিউট এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশে চিত্রকলাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলার প্রধান মানুষ ছিলেন জয়নুল আবেদিন। জয়নুল মনে করতেন, সমাজে শুধু দারিদ্র্য নয়, মানুষের চিন্তা ও রুচিরও অভাব আছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, এসব দূর না হলে সমাজ সত্যিকারের সুন্দর হতে পারে না। তিনি বলেছিলেন, ‘এখন তো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটি স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোন ছবি হয়না।’

কাগজে দোয়াত-কালির আঁচড়। কয়েকশ বছরের পুরোনো সেই কালির রঙ হয়তো কিছুটা ফিকে হয়েছে, কিন্তু গুরুত্ব কমেনি এতটুকুও। প্রাচীন উপাখ্যান, হাতে লেখা পুঁথি আর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা হাজারো বইয়ের এক বিশাল রাজ্য। বলছিলাম বগুড়ার উডবার্ন সরকারি গণগ্রন্থাগারের কথা।
৩ ঘণ্টা আগে
ট্রেলার ভাইরাল, পোস্টার ঝলমলে আর নামী তারকার সারি। ছিল হাই বাজেট, বড় স্টুডিও আর ‘বছরের সেরা’ হওয়ার আত্মবিশ্বাসও। কিন্তু পর্দায় আলো জ্বলার পর বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। ২০২৫ সালে হলিউডে কিছু সিনেমা আক্ষরিক অর্থেই হাইপের পাহাড় গড়ে তুলেছিল, কিন্তু বক্স অফিসে গিয়ে সেগুলো দাঁড়াতে পারেনি। চলুন দেখে নেওয়
১ দিন আগে
বাংলার ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায়ের নাম মসলিন। একসময় বিশ্বজুড়ে ঢাকাই মসলিনের ছিল একচেটিয়া কদর। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, বিশেষ করে ১৮৫১ সালের লন্ডনের গ্রেট এক্সিবিশনে ঢাকাই মসলিন প্রদর্শিত হয়েছিল।
১ দিন আগে
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আমাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি বা ‘ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং’-এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
১ দিন আগে