জেনে অবাক হবেন যে শত বছর আগে বৃহত্তর যশোর (ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ, যশোর) অঞ্চলে বন্যপ্রাণী বাস করত। কোন কোন বন্যপ্রাণী সেখানে ছিল? নদী, জলাভূমি ও পুকুরে কী কী মাছ পাওয়া যেত? ১৯১২ সালে প্রকাশিত এল এস এস ওম্যালি-এর বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার থেকে অনুবাদ করেছেন ভূ-পর্যটক তারেক অণু।
তারেক অণু

ঝিনাইদহে ১৮৬২ সালের দিকেও ইউরোপীয়রা ঘোড়ার পিঠে চেপে বুনো মহিষ শিকার করত। কিন্তু আজ বুনো মহিষের দল সম্পূর্ণরূপে উধাও। বাঘও বিলুপ্ত। পুরোনো রিপোর্টে এই জেলায় নেকড়ের উপস্থিতির কথা বলা হয়ে থাকে, যা এখন আর নেই। তবে চিতাবাঘ জেলার প্রায় সবখানেই আছে। বিশেষ করে বনগাঁ আর (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি শহর) ঝিনাইদহের বনগুলোতে এদের সংখ্যা বেশ ভালো অবস্থায় আছে। বুনো শুয়োর এই জেলার উঁচু ভূমি আর অগম্য জায়গায় বেশ ভালো সংখ্যক আছে। এরা নানা খাদ্যশস্যের বড় ক্ষতির কারণ, বিশেষ করে আখ।
এই এলাকা থেকে ‘ইউরোপিয়ান প্লান্টার’রা চলে যাওয়ার পর বুনো শুয়োর আর তেমন শিকার হয় না। তবে বুনো সম্প্রদায়সহ স্থানীয় নানা গোত্রের মানুষ ফাঁদ পেতে বুনো শুয়োর ধরে। বুনোরা নীল চাষীদের মাধ্যমে ছোটনাগপুর থেকে এই এলাকায় এসেছিল নীল কারখানায় কাজ করার জন্য। তাঁরা এখন শ্রমিক ও কৃষক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত তাঁরা জাল দিয়ে শুয়োর ধরে, বেঁধে জীবিত অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যায়। পরে তা জবাই করে খায়।
শিয়াল প্রায় সব জায়গায় দেখা যায়, আর শিয়াল ও শকুন মিলে মৃত জীবজন্তু খেয়ে পরিষ্কারের কাজ ভালোভাবেই করে থাকে। খ্যাঁকশিয়ালের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ে। সজারু ও খাটাস তুলনামূলক কম। উদবিড়াল (ভোঁদড়) আর বেজি বনে দেখা যায়, তবে এরা সহজেই পোষ মানে। নড়াইল ও মাগুরা অঞ্চলের জেলেরা উদবিড়াল পোষ মানিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করে।
শিকারযোগ্য পাখিদের মধ্যে তিতির এবং বটেরার কথা উল্লেখযোগ্য। বুনোহাঁস, রাজহাঁস, তিলিহাঁস, কাদাখোঁচা ইত্যাদি পাখি এ অঞ্চলের বিল ও বাওড়ে প্রচুর দেখা যায়। শীতকালে এসব বিল ও জলাভূমিতে নানা ধরনের জলচর পাখি ভিড় করে। বিশেষ করে ধূসর রঙের রাজহাঁস আর রঙিন ডানার ছোট হাঁসে পুরো এলাকা ভরে ওঠে।
গাঙ্গেয় শুশুক এখানকার নদীগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়। ভৈরব ও ইছামতী নদীতে বর্ষাকালে কুমির দেখা যায় আর তারা প্রায় প্রতি বছরই এক বা একাধিক মানুষকে টেনে নিয়ে যায়। মধুমতী নদীতেও কুমির থাকে, সেখান থেকে তারা মাঝে মাঝে নবগঙ্গা নদীর দিকে চলে আসে।

নদী, জলাভূমি ও পুকুরে বড় আকারের মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, ভেটকি, বোয়াল আর চিতল সহজেই পাওয়া যায়। ছোট মাছের মধ্যে বাচা, পাবদা, টেংরা, পুঁটি ইত্যাদি মেলে। ইলিশ মাছ ইছামতি, মধুমতি, গড়াই, নবগঙ্গা ও চিত্রা নদীতেও পাওয়া যায়।
এই এলাকার কই মাছ স্বাদের কারণে অত্যন্ত বিখ্যাত, যদিও আরও বড় আকারের কই অন্য জায়গাতে পাওয়া যায়। এই জেলার পূর্ব দিকের বিলে কই মাছের পাশাপাশি মাগুর, শিং, শোল সবকিছুই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যদিও যশোর জেলার সদরে মাছ খুব একটা মেলে না, যার অন্যতম কারণ পলি পড়ে পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া। ফলে এখানে মাছের জন্য ট্রেনযোগে কলকাতা, খুলনা ও গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে আনা মাছের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয়।
বর্ষার সময় নদীতে খুব বেশি মাছ ধরা হয় না। মূলত বন্যার পানি কমতে শুরু করলে, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মাছ ধরা শুরু হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে ব্যস্ত মৌসুম, আর ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতেই সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়ে। সাধারণত সব জাতের আর আকারের আকারের মাছ ধরা হয়, তবে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয় কার্প জাতীয় মাছ, মানে রুই-কাতলা-মৃগেল।
মাছ শুধু প্রধান প্রধান নদীতে ধরা হয় না, বরং বৃষ্টির পর যে ছোট ছোট ডোবা তৈরি হয়, সেখান থেকেও প্রচুর পাওয়া যায়। সত্যি বলতে, অনেক সময় এসব ডোবাতেই মাছ বেশি থাকে। মাগুরা ও নড়াইলের বিল থেকেও যথেষ্ট পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। বৃষ্টির পরে এসব বিলে অনেক মাছ ডিম ছাড়ে এবং শুকনো মৌসুমেও টিকে থাকে।
সাধারণত এসব জলাভূমিতে থাকে প্রচুর জলজ উদ্ভিদ ও ভাসমান খড়–কুটো, যার কারণে মুক্তভাবে জাল দিয়ে মাছ ধরা যায় না। ফলে মাছ ধরে জলাভূমি একেবারে ফাঁকা করে ফেলা সম্ভব নয়।
পানি কিছুটা আবদ্ধ বলে কার্প জাতীয় মাছের জন্য জলাভূমি উৎকৃষ্ট বাসস্থান নয়। তাই অনেক বড় মাছ এখান থেকে নদীতে চলে যায়। কিন্তু এটি কই, মাগুর, শিং এবং অন্যান্য মাছ যেগুলো কিছুটা কালচে ক্ষুদ্র আকারের এবং চট করে দেখা যায় না, তাদের জন্য আদর্শ আবাসস্থল। মানুষের কাছে এদের চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি। অনেক মানুষই এসব মাছ বেশি দাম দিয়ে কিনে থাকে।
এদিকে নদীতে পলি জমে পানি কমে যাওয়া এবং বিলগুলো ক্রমাগত চাষের ভূমিতে পরিণত হওয়ায় মাছের উৎপাদন নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

ঝিনাইদহে ১৮৬২ সালের দিকেও ইউরোপীয়রা ঘোড়ার পিঠে চেপে বুনো মহিষ শিকার করত। কিন্তু আজ বুনো মহিষের দল সম্পূর্ণরূপে উধাও। বাঘও বিলুপ্ত। পুরোনো রিপোর্টে এই জেলায় নেকড়ের উপস্থিতির কথা বলা হয়ে থাকে, যা এখন আর নেই। তবে চিতাবাঘ জেলার প্রায় সবখানেই আছে। বিশেষ করে বনগাঁ আর (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি শহর) ঝিনাইদহের বনগুলোতে এদের সংখ্যা বেশ ভালো অবস্থায় আছে। বুনো শুয়োর এই জেলার উঁচু ভূমি আর অগম্য জায়গায় বেশ ভালো সংখ্যক আছে। এরা নানা খাদ্যশস্যের বড় ক্ষতির কারণ, বিশেষ করে আখ।
এই এলাকা থেকে ‘ইউরোপিয়ান প্লান্টার’রা চলে যাওয়ার পর বুনো শুয়োর আর তেমন শিকার হয় না। তবে বুনো সম্প্রদায়সহ স্থানীয় নানা গোত্রের মানুষ ফাঁদ পেতে বুনো শুয়োর ধরে। বুনোরা নীল চাষীদের মাধ্যমে ছোটনাগপুর থেকে এই এলাকায় এসেছিল নীল কারখানায় কাজ করার জন্য। তাঁরা এখন শ্রমিক ও কৃষক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত তাঁরা জাল দিয়ে শুয়োর ধরে, বেঁধে জীবিত অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যায়। পরে তা জবাই করে খায়।
শিয়াল প্রায় সব জায়গায় দেখা যায়, আর শিয়াল ও শকুন মিলে মৃত জীবজন্তু খেয়ে পরিষ্কারের কাজ ভালোভাবেই করে থাকে। খ্যাঁকশিয়ালের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ে। সজারু ও খাটাস তুলনামূলক কম। উদবিড়াল (ভোঁদড়) আর বেজি বনে দেখা যায়, তবে এরা সহজেই পোষ মানে। নড়াইল ও মাগুরা অঞ্চলের জেলেরা উদবিড়াল পোষ মানিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করে।
শিকারযোগ্য পাখিদের মধ্যে তিতির এবং বটেরার কথা উল্লেখযোগ্য। বুনোহাঁস, রাজহাঁস, তিলিহাঁস, কাদাখোঁচা ইত্যাদি পাখি এ অঞ্চলের বিল ও বাওড়ে প্রচুর দেখা যায়। শীতকালে এসব বিল ও জলাভূমিতে নানা ধরনের জলচর পাখি ভিড় করে। বিশেষ করে ধূসর রঙের রাজহাঁস আর রঙিন ডানার ছোট হাঁসে পুরো এলাকা ভরে ওঠে।
গাঙ্গেয় শুশুক এখানকার নদীগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়। ভৈরব ও ইছামতী নদীতে বর্ষাকালে কুমির দেখা যায় আর তারা প্রায় প্রতি বছরই এক বা একাধিক মানুষকে টেনে নিয়ে যায়। মধুমতী নদীতেও কুমির থাকে, সেখান থেকে তারা মাঝে মাঝে নবগঙ্গা নদীর দিকে চলে আসে।

নদী, জলাভূমি ও পুকুরে বড় আকারের মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, ভেটকি, বোয়াল আর চিতল সহজেই পাওয়া যায়। ছোট মাছের মধ্যে বাচা, পাবদা, টেংরা, পুঁটি ইত্যাদি মেলে। ইলিশ মাছ ইছামতি, মধুমতি, গড়াই, নবগঙ্গা ও চিত্রা নদীতেও পাওয়া যায়।
এই এলাকার কই মাছ স্বাদের কারণে অত্যন্ত বিখ্যাত, যদিও আরও বড় আকারের কই অন্য জায়গাতে পাওয়া যায়। এই জেলার পূর্ব দিকের বিলে কই মাছের পাশাপাশি মাগুর, শিং, শোল সবকিছুই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যদিও যশোর জেলার সদরে মাছ খুব একটা মেলে না, যার অন্যতম কারণ পলি পড়ে পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া। ফলে এখানে মাছের জন্য ট্রেনযোগে কলকাতা, খুলনা ও গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে আনা মাছের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয়।
বর্ষার সময় নদীতে খুব বেশি মাছ ধরা হয় না। মূলত বন্যার পানি কমতে শুরু করলে, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মাছ ধরা শুরু হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে ব্যস্ত মৌসুম, আর ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতেই সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়ে। সাধারণত সব জাতের আর আকারের আকারের মাছ ধরা হয়, তবে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয় কার্প জাতীয় মাছ, মানে রুই-কাতলা-মৃগেল।
মাছ শুধু প্রধান প্রধান নদীতে ধরা হয় না, বরং বৃষ্টির পর যে ছোট ছোট ডোবা তৈরি হয়, সেখান থেকেও প্রচুর পাওয়া যায়। সত্যি বলতে, অনেক সময় এসব ডোবাতেই মাছ বেশি থাকে। মাগুরা ও নড়াইলের বিল থেকেও যথেষ্ট পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। বৃষ্টির পরে এসব বিলে অনেক মাছ ডিম ছাড়ে এবং শুকনো মৌসুমেও টিকে থাকে।
সাধারণত এসব জলাভূমিতে থাকে প্রচুর জলজ উদ্ভিদ ও ভাসমান খড়–কুটো, যার কারণে মুক্তভাবে জাল দিয়ে মাছ ধরা যায় না। ফলে মাছ ধরে জলাভূমি একেবারে ফাঁকা করে ফেলা সম্ভব নয়।
পানি কিছুটা আবদ্ধ বলে কার্প জাতীয় মাছের জন্য জলাভূমি উৎকৃষ্ট বাসস্থান নয়। তাই অনেক বড় মাছ এখান থেকে নদীতে চলে যায়। কিন্তু এটি কই, মাগুর, শিং এবং অন্যান্য মাছ যেগুলো কিছুটা কালচে ক্ষুদ্র আকারের এবং চট করে দেখা যায় না, তাদের জন্য আদর্শ আবাসস্থল। মানুষের কাছে এদের চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি। অনেক মানুষই এসব মাছ বেশি দাম দিয়ে কিনে থাকে।
এদিকে নদীতে পলি জমে পানি কমে যাওয়া এবং বিলগুলো ক্রমাগত চাষের ভূমিতে পরিণত হওয়ায় মাছের উৎপাদন নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

জেনে অবাক হবেন যে রাজশাহীর জঙ্গলে শেষ বাঘটি দেখা যায় ১২৫ বছর আগে। আর কোন কোন বন্যপ্রাণী সেখানে ছিল? নদী, জলাভূমি ও পুকুরে কী কী মাছ পাওয়া যেত? কী কী পাখি দেখা যেত? ১৯১৬ সালে প্রকাশিত এল এস এস ওম্যালি-এর বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার (রাজশাহী) থেকে অনুবাদ করেছেন ভূ-পর্যটক তারেক অণু।
২ ঘণ্টা আগে
আজ এক ‘অগ্নিপুরুষ’-এর জন্মদিন। ইতিহাসের পাতায় যার নাম লেখা আছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে, কিন্তু শোষকের কলিজা কাঁপাতে তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ দাবানল। তিনি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
৭ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক না দিলে দিনটা শুরুই হতে চায় না? খালি পেটে চা পান করা ‘স্বাস্থ্যকর’, এই ধারণা অনেকেরই আছে। কিন্তু বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটা মোটেও এত সরল নয়।
৮ ঘণ্টা আগে
১৯৬৭ সালের কথা। খান আতাউর রহমান তখন অভিনেতা, পরিচালক ও সংগীতজ্ঞ হিসেবে পরিচিত মুখ। ‘অনেক দিনের চেনা’ ও ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’র মতো সিনেমা বানিয়েছেন। সালাহউদ্দিন পরিচালিত ‘সূর্যস্নান’ (১৯৬২) সিনেমায় তৈরি করেছেন ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়ারে’-র মতো গান।
২১ ঘণ্টা আগে