ড. জাহিদ হোসেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ডে ১৪ বছরের শিক্ষকতা করছেন। বাংলাদেশের ব্যাংক খাত, উন্নয়ননীতি পর্যালোচনাসহ বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া ও বৈশ্বিক অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেন তিনি। দেশের বর্তমান অর্থনীতির অবস্থা, কাঠামোগত সংস্কারের জটিল পথ এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঢাকা স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। নিচে সাক্ষাৎকারটি দেয়া হলো।
স্ট্রিম ডেস্ক

স্ট্রিম: বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির অবস্থা কেমন দেখছেন?
ড. জাহিদ হোসেন: বর্তমান অর্থনীতির অবস্থাকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। প্রথমটি হলো সামষ্টিক স্থিতিশীলতা, যা ৫ আগস্টের আগে বেশ কয়েক বছর ধরেই একটি সংকটের মধ্যে ছিল। দ্বিতীয়টি হলো অর্থনীতির সার্বিক কর্মচাঞ্চল্য বা গতিশীলতা।
স্থিতিশীলতার দিক থেকে বিবেচনা করলে, গত জুলাই-আগস্টের তুলনায় আমরা এখন অনেকটাই স্বস্তির অবস্থানে পৌঁছেছি। উদাহরণস্বরূপ, মূল্যস্ফীতির সূচক এখনো উচ্চ পর্যায়ে থাকলেও তা আগের মতো প্রতি মাসে বাড়ছে না, বরং এখন নিম্নগামী। বেশ কয়েক মাস ধরেই খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত—উভয় ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতি কমার দিকে। যদিও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনো অনেক উপরে রয়েছে।
স্ট্রিম: সামনে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতে কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এবং উত্তরণের জন্য আমাদের প্রস্তুতি কেমন?
জাহিদ হোসেন: এলডিসি উত্তরণের পর কিছু তাৎক্ষণিক এবং মধ্যমেয়াদী ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো মূলত আসবে ‘মার্কেট অ্যাক্সেস’ বা বাজার প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা এলডিসিভিত্তিক কোনো বাড়তি সুবিধা পেতাম না। কাজেই সেই বড় বাজারে আমাদের উত্তরণ কোনো প্রভাব ফেলবে না। বড় আঘাতটি আসবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে। তবে সেটিও এখনই নয়—তিন বছর পরে, অর্থাৎ ২০২৯ সালের পর।
তাৎক্ষণিক যে চ্যালেঞ্জটি আসবে, সেটি হলো মেধাস্বত্ব বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট’-এর ক্ষেত্রে ফার্মাসিউটিক্যালস বা ওষুধশিল্প যে অব্যাহতি পেত, তা উঠে যাওয়া। এর ফলে আগে পেটেন্ট ফি না দিয়েই পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন করা যেত। যেমন—ইনসুলিন, ক্যানসার এবং এইচআইভি-এইডসের কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়া যেত। এলডিসি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই এই অব্যাহতিগুলো উঠে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু এখানে ‘স্মুথ ট্রানজিশন’ বা মসৃণ উত্তরণের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারিত নেই। তাই নভেম্বরে গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সুবিধা বাতিল হতে পারে। তখন দেশে এসব পণ্য উৎপাদন করতে গেলে রয়্যালটি ও ফি দিতে হবে, যার ফলে ওষুধের দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাই ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিতে এটি একটি বড় এবং তাৎক্ষণিক ঝুঁকি। অবশ্য পুরো শিল্প নয়, ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ২০ শতাংশের মতো ওষুধ এই পেটেন্টজনিত কারণে প্রভাবিত হতে পারে।
স্ট্রিম: এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে কি আমরা সস্তায় বা সহজ শর্তে যে বিদেশি ঋণগুলো পেতাম, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে? অর্থাৎ উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না?
জাহিদ হোসেন: উপরের বিষয়গুলোর বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো তাৎক্ষণিক নয়। অর্থায়ন বা ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে যেসব ঝুঁকির কথা বলা হয়, সেগুলোর পরিমাণ খুব বড় নয়। কারণ বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি কিংবা জাইকার ঋণের শর্ত, সুদের হার বা মেয়াদ এলডিসি স্ট্যাটাসের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় না। এগুলো নির্ধারিত হয় বিশ্বব্যাংকের আয়ের শ্রেণিবিন্যাস (নিম্ন, উচ্চ বা মধ্যম আয়ের দেশ) অনুযায়ী।
তবে কিছু ছোট ছোট তহবিল প্রভাবিত হতে পারে। যেমন—জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য জাতিসংঘের কিছু আর্থিক সহায়তা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডব্লিউটিও-এর অধীনে ‘এইড ফর ট্রেড’ এবং কিছু কারিগরি সহায়তা—এগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
স্ট্রিম: আমাদের রপ্তানির বড় গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানোটা কত বড় ধাক্কা হতে পারে? আর এর বিকল্প হিসেবে 'জিএসপি প্লাস' সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু দেখেন?
জাহিদ হোসেন: ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০২৯ সালের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা (ডিউটি ফ্রি এক্সেস) উঠে যাবে। এটি মোকাবিলার জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে হবে, যেমন—বাণিজ্য চুক্তি বা ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা। তবে জিএসপি প্লাসের ক্ষেত্রে কিছু কারিগরি জটিলতা রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের তৈরি পোশাক খাত এর জন্য যোগ্য হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ জিএসপি প্লাস পাওয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানির একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে, যা অতিক্রম করলে এই সুবিধা পাওয়া যায় না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের রপ্তানি সেই সীমা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। তবে আশার কথা হলো, এগুলো সবই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য।
এখন আমাদের মূল কাজ হলো বাজার প্রবেশাধিকার বা ‘মার্কেট অ্যাক্সেস’ টিকিয়ে রাখা। শুল্কমুক্ত সুবিধা বা ‘ডিউটি ফ্রি অ্যাক্সেস’ বজায় রাখার জন্য যেসব বিকল্প পথ রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এটি করা যে খুব অসম্ভব, তা কিন্তু নয়। কারণ, সাম্প্রতিককালে ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করেছে, এর আগে ভিয়েতনামও করেছে। তারা যদি করতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না?
স্ট্রিম: আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের বাইরে দেশের অভ্যন্তরে কি কোনো নীতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে? বিশেষ করে শুল্ক বা ট্যারিফ পলিসির ক্ষেত্রে ডব্লিউটিওর শর্ত পালনে আমাদের অবস্থান কী?
জাহিদ হোসেন: ডব্লিউটিও কমপ্লায়েন্স বা নীতিমালার শর্ত পালনের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ আসবে। আমদানির ওপর আপনি কী ধরনের শুল্ক আরোপ করতে পারবেন, সে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এলডিসি হিসেবে যেসব ছাড় দেওয়া হতো—যাকে বলা হয় ‘স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট’ (এস&ডি)—উত্তরণের পর সেই বিশেষ সুবিধাগুলো আর থাকবে না। তখন ট্যারিফ পলিসি বা শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন এনে শুল্ক কমানোর প্রয়োজন হবে। গত বাজেটে কিছুটা কমানো হয়েছে, তবে খুব বেশি নয়। কিন্তু বর্তমানে যে শুল্কহার আছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর তা বহাল রাখলে আপনি ডব্লিউটিওর সাথে ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’ বা শর্তভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশ ডব্লিউটিওতে মামলা করতে পারে। মামলা হলে সমস্যা হবে, বিশেষ করে মার্কেট অ্যাক্সেসে বাধার সৃষ্টি হবে।
কাজেই ট্যারিফ পলিসির সংস্কার করতেই হবে। তবে এখানেও মসৃণ উত্তরণের সুযোগ রয়েছে। কিছুটা সময় নিতে চাইলে একটি ‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি’ (এসটিএস) তৈরি করতে পারেন। এ বিষয়ে কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) থেকে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরে তারা দেখতে আসছে যে আমাদের এই স্ট্র্যাটেজি কোন পর্যায়ে আছে। যদি আমরা এমন একটি বিশ্বাসযোগ্য স্ট্র্যাটেজি উপস্থাপন করতে পারি—যা দেখে তারা বুঝবে যে আমরা সংস্কারটি করতে চাই, এটি করা সম্ভব এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হবে—তাহলে বিষয়টি মোটামুটি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
স্ট্রিম: সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা পেছানোর দাবি উঠেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দেওয়া কি যৌক্তিক বা আদৌ সম্ভব?
জাহিদ হোসেন: ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটি দাবি আসছে—এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দিলে কেমন হয়? নভেম্বরেই এটি করার দরকার কী? কিন্তু এটি তো পুরোপুরি সরকারের হাতে নেই। সরকার হয়তো আবেদন করতে পারে। অনেকে একে 'সময় কেনা' বলছেন, কিন্তু আমি বলব এটি আসলে ‘সময় ধার করা’। কারণ পিছিয়ে দেওয়ার মানে হলো, যেসব সংস্কার আমরা দ্রুত করতাম, সেগুলো এখন আস্তেধীরে করব। এই ধীরগতির একটি চড়া মূল্য আছে। এ জন্যই বলছি এটি সময় ধার করা। আর আপনি চাইলেই সেই ধার পাবেন কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
কারণ সূচকগুলোর ক্ষেত্রে আপনি হয়তো বলতে পারেন যে ডেটায় সমস্যা আছে বা অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু ডেটা সংশোধন করার পরেও যে আমরা এলডিসি থেকে বের হওয়ার ন্যূনতম সীমা বা ‘থ্রেশহোল্ড’-এর নিচে চলে আসব, এমন সম্ভাবনা আমি দেখি না। গ্র্যাজুয়েশন আটকাতে হলে তিনটি সূচকের অন্তত দুটিতে নিচে নামতে হবে। তাছাড়া নেপাল ও লাওসও তো গ্র্যাজুয়েট করতে যাচ্ছে; তারা তো এখন পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। অথচ নেপালেও কিন্তু বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা গেছে।
এখন বলা হচ্ছে, জুলাই মাসে দেশে যে অস্থিরতা ও ব্যাঘাত ঘটেছে, সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং রাজপথে অস্থিতিশীলতা ছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও তো আমাদের রপ্তানি ৮-১০ শতাংশ বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৬ শতাংশ এবং কৃষি উৎপাদনও স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ অর্থনীতি তো সচল আছে। তাই এই পরিস্থিতিতে গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দেওয়া বা 'ডেফারমেন্ট'-এর যে প্রস্তাব, সেখান থেকে খুব একটা ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।
স্ট্রিম: এলডিসি উত্তরণ-এর সাথে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতার কোনো সম্পর্ক আছে কি? বিশেষ করে ‘মধ্য আয়ের ফাঁদ’ বা মিডল ইনকাম ট্র্যাপের যে বিষয়টি আলোচনায় আসে, সেখানে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান এবং কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি কেমন?
জাহিদ হোসেন: বাংলাদেশ এখন একটি ‘মধ্য আয়ের ফাঁদে’ (মিডল ইনকাম ট্রাপ) আটকে গেছে। অর্থনীতিতে এই ফাঁদের সবচেয়ে বড় উপসর্গটি হচ্ছে শ্রমবাজার বা এমপ্লয়মেন্টের সমস্যা। কারণ ২০১৬ সালের পর থেকেই এই স্থবিরতা চলছে। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতে নারীদের কর্মসংস্থান বাড়া তো দূরের কথা, বরং কমে গেছে। এরপর হয়তো আর কমেনি, কিন্তু বাড়েওনি। আবার শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্বের হার বরাবরই বেশি ছিল, যা ইদানীং আরও বাড়ছে।
অর্থনীতির কাঠামো অনুযায়ী চিন্তা করলে সমস্যাটি দুই দিক থেকেই আছে। একটি হলো চাহিদাজনিত বা ‘ডিমান্ড সাইড’ সমস্যা, অন্যটি হলো জোগান বা ‘সাপ্লাই সাইড’ সমস্যা।
স্ট্রিম: চাহিদাজনিত বা ‘ডিমান্ড সাইড’-এর সমস্যাটি আসলে কী? আমাদের দেশে তো নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে, তবুও কাঙ্ক্ষিত হারে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না কেন? এখানে নীতিগত কোনো দুর্বলতা আছে কি?
জাহিদ হোসেন: ডিমান্ড সাইডের সমস্যা হলো, গত চার-পাঁচ বছরে আমাদের শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হলেও শ্রম শোষণের বা ‘লেবার অ্যাবজর্ব’ করার মতো প্রসার ঘটেনি। এখানে আমাদের নীতিমালার বা পলিসির একটি বড় ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশে কোন ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছে? যেমন ধরুন—ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি), মোবাইল ফোন উৎপাদন, টেলিভিশন অ্যাসেম্বলি বা মোটরসাইকেল শিল্প।
প্রশ্ন হলো, এসব শিল্প হওয়া সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বাড়ল না কেন? এর প্রধান উত্তর হচ্ছে, এগুলো দেশীয় বাজারমুখী শিল্প এবং প্রতিটা বাজেটে উচ্চ শুল্ক বা ‘হাই ট্যারিফ’-এর মাধ্যমে এদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এগুলো সবই মূলত ‘পুঁজি নিবিড়’ বা ক্যাপিটাল ইন্টেনসিভ ইন্ডাস্ট্রি। অর্থাৎ, এখানে বিনিয়োগের তুলনায় শ্রমিকের চাহিদা খুব একটা তৈরি হয় না। অন্যদিকে, তৈরি পোশাক বা ফুটওয়্যার শিল্প হলো ‘শ্রম নিবিড়’ বা লেবার ইন্টেনসিভ। কিন্তু এফএমসিজিগুলো সবই ক্যাপিটাল ইন্টেনসিভ।
এখানে ডিমান্ড সাইডের যে সমস্যার কথা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ, বিশেষ করে ড. জাইদি সাত্তার দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, তা হলো—আমাদের পলিসিতে একটি ‘অ্যান্টি এক্সপোর্ট বায়াস’ বা রপ্তানিবিমুখ প্রবণতা রয়েছে। আমাদের এই রক্ষণশীল বা প্রোটেকশনিস্ট পলিসি রপ্তানিমুখী শ্রম নিবিড় শিল্পকে নিরুৎসাহিত করে এবং পুঁজি নিবিড় শিল্পকে উৎসাহিত করে। ইদানীং এই অ্যান্টি এক্সপোর্ট প্রবণতাটি আরও বেড়েছে, যার ফলে শ্রমের চাহিদা সেভাবে গড়ে ওঠেনি।
স্ট্রিম: এবার জোগান বা ‘সাপ্লাই সাইড’-এর কথায় আসা যাক। দেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণের সংখ্যা বাড়ছে, অথচ বেকারত্বের হারও তাদের মধ্যেই বেশি। এই পরিস্থিতির উত্তোরণ হচ্ছেনা কেন?
জাহিদ হোসেন: আমি বলব যে, সাপ্লাই সাইডের সমস্যাটি বেশি প্রকট। ইদানীং পত্রপত্রিকায় যেসব প্রতিবেদন আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। এর কারণ কী? দেখা যাচ্ছে, ইতিহাস, বাংলা বা সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করা একজন শিক্ষার্থী দুই বছর ধরে কোনো চাকরি পাচ্ছে না।
প্রথমত, এসব বিষয়ের বা সাবজেক্টের বাজারে খুব একটা ব্যাপক চাহিদা নেই। ধরুন, আপনি সমাজবিজ্ঞান বা বাংলায় ভালো ফলাফল করলেন, হয়তো কলেজে শিক্ষকতার দিকে যেতে পারবেন। কিন্তু অন্য কোনো জায়গায়—যেমন শিল্প, সেবা বা প্রযুক্তি খাতে যদি আপনাকে যেতে হয়, তবে নিয়োগকারীকে আপনার ওপর নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে। আপনার অর্জিত বিদ্যা হয়তো কাজে লাগত যদি আপনি ভালো শিক্ষা পেতেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কি বাংলাতেও মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারছে?
এটি মূলত শিক্ষার গুণগত মানের সমস্যা। এখানে দুটি বিষয় কাজ করছে। একটি হলো ‘মিসম্যাচ’ বা অসামঞ্জস্য; অর্থাৎ যে হারে বাংলা বা সমাজবিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে, বাজারে সেই হারে চাহিদা নেই। ফলে ভালো গ্রাজুয়েটরাও চাকরি পাচ্ছে না। আরেকটি সমস্যা হলো দক্ষতা। চাহিদাও যদি থাকে, দেখা যায় একজন গ্রাজুয়েটকে দিয়ে বাংলায় একটি চিঠিও ঠিকমতো লেখানো যাচ্ছে না।
কিন্তু সমস্যার মূল আসলে অন্য জায়গায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একক কোনো ক্যাম্পাস নয়, বরং সারা দেশের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজ এর অধিভুক্ত। শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয় একেবারে শেষ উপায় হিসেবে, যখন অন্য কোথাও সুযোগ পায় না। তারা কেন ভালো প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারল না? সেই কারণটি যদি সমাধান না করা যায়, তবে আমরা এমন শ্রমশক্তি বা ‘ট্রেইন্ড লেবার’ তৈরি করতে থাকব, যা বাজারে কোনো কাজে আসছে না। এমনকি যে বিষয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেখানেও সে দক্ষ হচ্ছে না।
এটি আসলে আমাদের মৌলিক শিক্ষার বা ‘বেসিক এডুকেশন’-এর সংকট। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে আমরা কী শিক্ষা পাচ্ছি? অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর যদি কেউ ঠিকমতো যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ করতে না পারে কিংবা ব্যাংকে গিয়ে একটি ফর্ম পূরণ করতে না পারে, তবে তার অবস্থানটি কোথায়? এ কারণেই বলছি, এর কোনো স্বল্পমেয়াদী সমাধান পাওয়া খুব কঠিন।
স্ট্রিম: শিক্ষার মান উন্নয়ন তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে যে বিশাল সংখ্যক তরুণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়েছে বা বেকার হয়ে বসে আছে, তাদের জন্য তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান বা সফল কোনো মডেল কি আমাদের সামনে আছে?
জাহিদ হোসেন: কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেমন—‘ইউসেপ’ বস্তির শিশুদের নিয়ে যে কাজটি করত। যারা হয়তো অষ্টম শ্রেণি পাস করেছে, তাদের নিয়ে এসে দশ মাসের একটি ‘রেমিডিয়াল প্রোগ্রাম’ করানো হতো। সেখানে তাদের গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, ইতিহাস—অর্থাৎ যে মৌলিক শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছিল, তা শেখানো হতো। এরপর শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী তাদের ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হতো। এদের মধ্যে বেকারত্বের হার কিন্তু খুবই কম। ইউসেপ এটি করে দেখিয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ বড় পরিসরে বা ‘স্কেলিং আপ’ করা না হলে জাতীয় পর্যায়ের তথ্যে বা ডেটায় এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাবে না।
এখন সমস্যা মূলত দুই ধরনের। প্রথমত, যারা ইতিমধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে গেছে, তারা কী করবে? এই সংখ্যাটি তো কম নয়, প্রায় চার-পাঁচ কোটি। দ্বিতীয়ত, নতুন করে যেন কেউ এই তালিকায় যুক্ত না হয়, সেজন্য মৌলিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ঠিক করা। অর্থাৎ, একদিকে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা এবং অন্যদিকে যারা ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে তাদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া।
যারা বেরিয়ে গেছে, তাদের জন্য একটি উপায় হতে পারে বিদেশে অভিবাসন বা মাইগ্রেশন। বর্তমান সরকার জাপানে এক লাখ শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা করছে, যার জন্য ভাষা শেখানো ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। বিদ্যমান বিশাল জনগোষ্ঠী বা ‘স্টক’-এর সমস্যা সমাধানের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সত্যি বলতে, এখানে একেবারে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ বা দ্রুত কোনো সমাধান পাওয়াটা খুবই কঠিন।
স্ট্রিম: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
জাহিদ হোসেন: ধন্যবাদ ঢাকা স্ট্রিম ও ঢাকা স্ট্রিমের পাঠকদেরও।
শ্রুতিলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম

স্ট্রিম: বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির অবস্থা কেমন দেখছেন?
ড. জাহিদ হোসেন: বর্তমান অর্থনীতির অবস্থাকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। প্রথমটি হলো সামষ্টিক স্থিতিশীলতা, যা ৫ আগস্টের আগে বেশ কয়েক বছর ধরেই একটি সংকটের মধ্যে ছিল। দ্বিতীয়টি হলো অর্থনীতির সার্বিক কর্মচাঞ্চল্য বা গতিশীলতা।
স্থিতিশীলতার দিক থেকে বিবেচনা করলে, গত জুলাই-আগস্টের তুলনায় আমরা এখন অনেকটাই স্বস্তির অবস্থানে পৌঁছেছি। উদাহরণস্বরূপ, মূল্যস্ফীতির সূচক এখনো উচ্চ পর্যায়ে থাকলেও তা আগের মতো প্রতি মাসে বাড়ছে না, বরং এখন নিম্নগামী। বেশ কয়েক মাস ধরেই খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত—উভয় ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতি কমার দিকে। যদিও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনো অনেক উপরে রয়েছে।
স্ট্রিম: সামনে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতে কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এবং উত্তরণের জন্য আমাদের প্রস্তুতি কেমন?
জাহিদ হোসেন: এলডিসি উত্তরণের পর কিছু তাৎক্ষণিক এবং মধ্যমেয়াদী ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো মূলত আসবে ‘মার্কেট অ্যাক্সেস’ বা বাজার প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা এলডিসিভিত্তিক কোনো বাড়তি সুবিধা পেতাম না। কাজেই সেই বড় বাজারে আমাদের উত্তরণ কোনো প্রভাব ফেলবে না। বড় আঘাতটি আসবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে। তবে সেটিও এখনই নয়—তিন বছর পরে, অর্থাৎ ২০২৯ সালের পর।
তাৎক্ষণিক যে চ্যালেঞ্জটি আসবে, সেটি হলো মেধাস্বত্ব বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট’-এর ক্ষেত্রে ফার্মাসিউটিক্যালস বা ওষুধশিল্প যে অব্যাহতি পেত, তা উঠে যাওয়া। এর ফলে আগে পেটেন্ট ফি না দিয়েই পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন করা যেত। যেমন—ইনসুলিন, ক্যানসার এবং এইচআইভি-এইডসের কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়া যেত। এলডিসি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই এই অব্যাহতিগুলো উঠে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু এখানে ‘স্মুথ ট্রানজিশন’ বা মসৃণ উত্তরণের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারিত নেই। তাই নভেম্বরে গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সুবিধা বাতিল হতে পারে। তখন দেশে এসব পণ্য উৎপাদন করতে গেলে রয়্যালটি ও ফি দিতে হবে, যার ফলে ওষুধের দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাই ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিতে এটি একটি বড় এবং তাৎক্ষণিক ঝুঁকি। অবশ্য পুরো শিল্প নয়, ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ২০ শতাংশের মতো ওষুধ এই পেটেন্টজনিত কারণে প্রভাবিত হতে পারে।
স্ট্রিম: এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে কি আমরা সস্তায় বা সহজ শর্তে যে বিদেশি ঋণগুলো পেতাম, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে? অর্থাৎ উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না?
জাহিদ হোসেন: উপরের বিষয়গুলোর বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো তাৎক্ষণিক নয়। অর্থায়ন বা ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে যেসব ঝুঁকির কথা বলা হয়, সেগুলোর পরিমাণ খুব বড় নয়। কারণ বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি কিংবা জাইকার ঋণের শর্ত, সুদের হার বা মেয়াদ এলডিসি স্ট্যাটাসের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় না। এগুলো নির্ধারিত হয় বিশ্বব্যাংকের আয়ের শ্রেণিবিন্যাস (নিম্ন, উচ্চ বা মধ্যম আয়ের দেশ) অনুযায়ী।
তবে কিছু ছোট ছোট তহবিল প্রভাবিত হতে পারে। যেমন—জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য জাতিসংঘের কিছু আর্থিক সহায়তা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডব্লিউটিও-এর অধীনে ‘এইড ফর ট্রেড’ এবং কিছু কারিগরি সহায়তা—এগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
স্ট্রিম: আমাদের রপ্তানির বড় গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানোটা কত বড় ধাক্কা হতে পারে? আর এর বিকল্প হিসেবে 'জিএসপি প্লাস' সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু দেখেন?
জাহিদ হোসেন: ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০২৯ সালের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা (ডিউটি ফ্রি এক্সেস) উঠে যাবে। এটি মোকাবিলার জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে হবে, যেমন—বাণিজ্য চুক্তি বা ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা। তবে জিএসপি প্লাসের ক্ষেত্রে কিছু কারিগরি জটিলতা রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের তৈরি পোশাক খাত এর জন্য যোগ্য হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ জিএসপি প্লাস পাওয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানির একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে, যা অতিক্রম করলে এই সুবিধা পাওয়া যায় না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের রপ্তানি সেই সীমা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। তবে আশার কথা হলো, এগুলো সবই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য।
এখন আমাদের মূল কাজ হলো বাজার প্রবেশাধিকার বা ‘মার্কেট অ্যাক্সেস’ টিকিয়ে রাখা। শুল্কমুক্ত সুবিধা বা ‘ডিউটি ফ্রি অ্যাক্সেস’ বজায় রাখার জন্য যেসব বিকল্প পথ রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এটি করা যে খুব অসম্ভব, তা কিন্তু নয়। কারণ, সাম্প্রতিককালে ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করেছে, এর আগে ভিয়েতনামও করেছে। তারা যদি করতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না?
স্ট্রিম: আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের বাইরে দেশের অভ্যন্তরে কি কোনো নীতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে? বিশেষ করে শুল্ক বা ট্যারিফ পলিসির ক্ষেত্রে ডব্লিউটিওর শর্ত পালনে আমাদের অবস্থান কী?
জাহিদ হোসেন: ডব্লিউটিও কমপ্লায়েন্স বা নীতিমালার শর্ত পালনের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ আসবে। আমদানির ওপর আপনি কী ধরনের শুল্ক আরোপ করতে পারবেন, সে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এলডিসি হিসেবে যেসব ছাড় দেওয়া হতো—যাকে বলা হয় ‘স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট’ (এস&ডি)—উত্তরণের পর সেই বিশেষ সুবিধাগুলো আর থাকবে না। তখন ট্যারিফ পলিসি বা শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন এনে শুল্ক কমানোর প্রয়োজন হবে। গত বাজেটে কিছুটা কমানো হয়েছে, তবে খুব বেশি নয়। কিন্তু বর্তমানে যে শুল্কহার আছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর তা বহাল রাখলে আপনি ডব্লিউটিওর সাথে ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’ বা শর্তভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশ ডব্লিউটিওতে মামলা করতে পারে। মামলা হলে সমস্যা হবে, বিশেষ করে মার্কেট অ্যাক্সেসে বাধার সৃষ্টি হবে।
কাজেই ট্যারিফ পলিসির সংস্কার করতেই হবে। তবে এখানেও মসৃণ উত্তরণের সুযোগ রয়েছে। কিছুটা সময় নিতে চাইলে একটি ‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি’ (এসটিএস) তৈরি করতে পারেন। এ বিষয়ে কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) থেকে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরে তারা দেখতে আসছে যে আমাদের এই স্ট্র্যাটেজি কোন পর্যায়ে আছে। যদি আমরা এমন একটি বিশ্বাসযোগ্য স্ট্র্যাটেজি উপস্থাপন করতে পারি—যা দেখে তারা বুঝবে যে আমরা সংস্কারটি করতে চাই, এটি করা সম্ভব এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হবে—তাহলে বিষয়টি মোটামুটি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
স্ট্রিম: সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা পেছানোর দাবি উঠেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দেওয়া কি যৌক্তিক বা আদৌ সম্ভব?
জাহিদ হোসেন: ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটি দাবি আসছে—এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দিলে কেমন হয়? নভেম্বরেই এটি করার দরকার কী? কিন্তু এটি তো পুরোপুরি সরকারের হাতে নেই। সরকার হয়তো আবেদন করতে পারে। অনেকে একে 'সময় কেনা' বলছেন, কিন্তু আমি বলব এটি আসলে ‘সময় ধার করা’। কারণ পিছিয়ে দেওয়ার মানে হলো, যেসব সংস্কার আমরা দ্রুত করতাম, সেগুলো এখন আস্তেধীরে করব। এই ধীরগতির একটি চড়া মূল্য আছে। এ জন্যই বলছি এটি সময় ধার করা। আর আপনি চাইলেই সেই ধার পাবেন কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
কারণ সূচকগুলোর ক্ষেত্রে আপনি হয়তো বলতে পারেন যে ডেটায় সমস্যা আছে বা অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু ডেটা সংশোধন করার পরেও যে আমরা এলডিসি থেকে বের হওয়ার ন্যূনতম সীমা বা ‘থ্রেশহোল্ড’-এর নিচে চলে আসব, এমন সম্ভাবনা আমি দেখি না। গ্র্যাজুয়েশন আটকাতে হলে তিনটি সূচকের অন্তত দুটিতে নিচে নামতে হবে। তাছাড়া নেপাল ও লাওসও তো গ্র্যাজুয়েট করতে যাচ্ছে; তারা তো এখন পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। অথচ নেপালেও কিন্তু বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা গেছে।
এখন বলা হচ্ছে, জুলাই মাসে দেশে যে অস্থিরতা ও ব্যাঘাত ঘটেছে, সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং রাজপথে অস্থিতিশীলতা ছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও তো আমাদের রপ্তানি ৮-১০ শতাংশ বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৬ শতাংশ এবং কৃষি উৎপাদনও স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ অর্থনীতি তো সচল আছে। তাই এই পরিস্থিতিতে গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দেওয়া বা 'ডেফারমেন্ট'-এর যে প্রস্তাব, সেখান থেকে খুব একটা ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।
স্ট্রিম: এলডিসি উত্তরণ-এর সাথে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতার কোনো সম্পর্ক আছে কি? বিশেষ করে ‘মধ্য আয়ের ফাঁদ’ বা মিডল ইনকাম ট্র্যাপের যে বিষয়টি আলোচনায় আসে, সেখানে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান এবং কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি কেমন?
জাহিদ হোসেন: বাংলাদেশ এখন একটি ‘মধ্য আয়ের ফাঁদে’ (মিডল ইনকাম ট্রাপ) আটকে গেছে। অর্থনীতিতে এই ফাঁদের সবচেয়ে বড় উপসর্গটি হচ্ছে শ্রমবাজার বা এমপ্লয়মেন্টের সমস্যা। কারণ ২০১৬ সালের পর থেকেই এই স্থবিরতা চলছে। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতে নারীদের কর্মসংস্থান বাড়া তো দূরের কথা, বরং কমে গেছে। এরপর হয়তো আর কমেনি, কিন্তু বাড়েওনি। আবার শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্বের হার বরাবরই বেশি ছিল, যা ইদানীং আরও বাড়ছে।
অর্থনীতির কাঠামো অনুযায়ী চিন্তা করলে সমস্যাটি দুই দিক থেকেই আছে। একটি হলো চাহিদাজনিত বা ‘ডিমান্ড সাইড’ সমস্যা, অন্যটি হলো জোগান বা ‘সাপ্লাই সাইড’ সমস্যা।
স্ট্রিম: চাহিদাজনিত বা ‘ডিমান্ড সাইড’-এর সমস্যাটি আসলে কী? আমাদের দেশে তো নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে, তবুও কাঙ্ক্ষিত হারে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না কেন? এখানে নীতিগত কোনো দুর্বলতা আছে কি?
জাহিদ হোসেন: ডিমান্ড সাইডের সমস্যা হলো, গত চার-পাঁচ বছরে আমাদের শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হলেও শ্রম শোষণের বা ‘লেবার অ্যাবজর্ব’ করার মতো প্রসার ঘটেনি। এখানে আমাদের নীতিমালার বা পলিসির একটি বড় ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশে কোন ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছে? যেমন ধরুন—ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি), মোবাইল ফোন উৎপাদন, টেলিভিশন অ্যাসেম্বলি বা মোটরসাইকেল শিল্প।
প্রশ্ন হলো, এসব শিল্প হওয়া সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বাড়ল না কেন? এর প্রধান উত্তর হচ্ছে, এগুলো দেশীয় বাজারমুখী শিল্প এবং প্রতিটা বাজেটে উচ্চ শুল্ক বা ‘হাই ট্যারিফ’-এর মাধ্যমে এদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এগুলো সবই মূলত ‘পুঁজি নিবিড়’ বা ক্যাপিটাল ইন্টেনসিভ ইন্ডাস্ট্রি। অর্থাৎ, এখানে বিনিয়োগের তুলনায় শ্রমিকের চাহিদা খুব একটা তৈরি হয় না। অন্যদিকে, তৈরি পোশাক বা ফুটওয়্যার শিল্প হলো ‘শ্রম নিবিড়’ বা লেবার ইন্টেনসিভ। কিন্তু এফএমসিজিগুলো সবই ক্যাপিটাল ইন্টেনসিভ।
এখানে ডিমান্ড সাইডের যে সমস্যার কথা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ, বিশেষ করে ড. জাইদি সাত্তার দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, তা হলো—আমাদের পলিসিতে একটি ‘অ্যান্টি এক্সপোর্ট বায়াস’ বা রপ্তানিবিমুখ প্রবণতা রয়েছে। আমাদের এই রক্ষণশীল বা প্রোটেকশনিস্ট পলিসি রপ্তানিমুখী শ্রম নিবিড় শিল্পকে নিরুৎসাহিত করে এবং পুঁজি নিবিড় শিল্পকে উৎসাহিত করে। ইদানীং এই অ্যান্টি এক্সপোর্ট প্রবণতাটি আরও বেড়েছে, যার ফলে শ্রমের চাহিদা সেভাবে গড়ে ওঠেনি।
স্ট্রিম: এবার জোগান বা ‘সাপ্লাই সাইড’-এর কথায় আসা যাক। দেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণের সংখ্যা বাড়ছে, অথচ বেকারত্বের হারও তাদের মধ্যেই বেশি। এই পরিস্থিতির উত্তোরণ হচ্ছেনা কেন?
জাহিদ হোসেন: আমি বলব যে, সাপ্লাই সাইডের সমস্যাটি বেশি প্রকট। ইদানীং পত্রপত্রিকায় যেসব প্রতিবেদন আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। এর কারণ কী? দেখা যাচ্ছে, ইতিহাস, বাংলা বা সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করা একজন শিক্ষার্থী দুই বছর ধরে কোনো চাকরি পাচ্ছে না।
প্রথমত, এসব বিষয়ের বা সাবজেক্টের বাজারে খুব একটা ব্যাপক চাহিদা নেই। ধরুন, আপনি সমাজবিজ্ঞান বা বাংলায় ভালো ফলাফল করলেন, হয়তো কলেজে শিক্ষকতার দিকে যেতে পারবেন। কিন্তু অন্য কোনো জায়গায়—যেমন শিল্প, সেবা বা প্রযুক্তি খাতে যদি আপনাকে যেতে হয়, তবে নিয়োগকারীকে আপনার ওপর নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে। আপনার অর্জিত বিদ্যা হয়তো কাজে লাগত যদি আপনি ভালো শিক্ষা পেতেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কি বাংলাতেও মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারছে?
এটি মূলত শিক্ষার গুণগত মানের সমস্যা। এখানে দুটি বিষয় কাজ করছে। একটি হলো ‘মিসম্যাচ’ বা অসামঞ্জস্য; অর্থাৎ যে হারে বাংলা বা সমাজবিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে, বাজারে সেই হারে চাহিদা নেই। ফলে ভালো গ্রাজুয়েটরাও চাকরি পাচ্ছে না। আরেকটি সমস্যা হলো দক্ষতা। চাহিদাও যদি থাকে, দেখা যায় একজন গ্রাজুয়েটকে দিয়ে বাংলায় একটি চিঠিও ঠিকমতো লেখানো যাচ্ছে না।
কিন্তু সমস্যার মূল আসলে অন্য জায়গায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একক কোনো ক্যাম্পাস নয়, বরং সারা দেশের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজ এর অধিভুক্ত। শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয় একেবারে শেষ উপায় হিসেবে, যখন অন্য কোথাও সুযোগ পায় না। তারা কেন ভালো প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারল না? সেই কারণটি যদি সমাধান না করা যায়, তবে আমরা এমন শ্রমশক্তি বা ‘ট্রেইন্ড লেবার’ তৈরি করতে থাকব, যা বাজারে কোনো কাজে আসছে না। এমনকি যে বিষয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেখানেও সে দক্ষ হচ্ছে না।
এটি আসলে আমাদের মৌলিক শিক্ষার বা ‘বেসিক এডুকেশন’-এর সংকট। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে আমরা কী শিক্ষা পাচ্ছি? অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর যদি কেউ ঠিকমতো যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ করতে না পারে কিংবা ব্যাংকে গিয়ে একটি ফর্ম পূরণ করতে না পারে, তবে তার অবস্থানটি কোথায়? এ কারণেই বলছি, এর কোনো স্বল্পমেয়াদী সমাধান পাওয়া খুব কঠিন।
স্ট্রিম: শিক্ষার মান উন্নয়ন তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে যে বিশাল সংখ্যক তরুণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়েছে বা বেকার হয়ে বসে আছে, তাদের জন্য তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান বা সফল কোনো মডেল কি আমাদের সামনে আছে?
জাহিদ হোসেন: কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেমন—‘ইউসেপ’ বস্তির শিশুদের নিয়ে যে কাজটি করত। যারা হয়তো অষ্টম শ্রেণি পাস করেছে, তাদের নিয়ে এসে দশ মাসের একটি ‘রেমিডিয়াল প্রোগ্রাম’ করানো হতো। সেখানে তাদের গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, ইতিহাস—অর্থাৎ যে মৌলিক শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছিল, তা শেখানো হতো। এরপর শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী তাদের ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হতো। এদের মধ্যে বেকারত্বের হার কিন্তু খুবই কম। ইউসেপ এটি করে দেখিয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ বড় পরিসরে বা ‘স্কেলিং আপ’ করা না হলে জাতীয় পর্যায়ের তথ্যে বা ডেটায় এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাবে না।
এখন সমস্যা মূলত দুই ধরনের। প্রথমত, যারা ইতিমধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে গেছে, তারা কী করবে? এই সংখ্যাটি তো কম নয়, প্রায় চার-পাঁচ কোটি। দ্বিতীয়ত, নতুন করে যেন কেউ এই তালিকায় যুক্ত না হয়, সেজন্য মৌলিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ঠিক করা। অর্থাৎ, একদিকে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা এবং অন্যদিকে যারা ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে তাদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া।
যারা বেরিয়ে গেছে, তাদের জন্য একটি উপায় হতে পারে বিদেশে অভিবাসন বা মাইগ্রেশন। বর্তমান সরকার জাপানে এক লাখ শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা করছে, যার জন্য ভাষা শেখানো ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। বিদ্যমান বিশাল জনগোষ্ঠী বা ‘স্টক’-এর সমস্যা সমাধানের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সত্যি বলতে, এখানে একেবারে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ বা দ্রুত কোনো সমাধান পাওয়াটা খুবই কঠিন।
স্ট্রিম: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
জাহিদ হোসেন: ধন্যবাদ ঢাকা স্ট্রিম ও ঢাকা স্ট্রিমের পাঠকদেরও।
শ্রুতিলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম

২০০৭ সালের ‘ওয়ান-ইলেভেন’ থেকে ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং তৎপরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রার একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ এই লেখা। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের অভাব, আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতার সংকট এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফলে সৃষ্ট সামাজিক ক্ষত ত
৪ ঘণ্টা আগে
ঢাকার ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভিন্ন আবহে পালিত হয় ৫৪তম মৈত্রী দিবস। এতে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায়।
১ দিন আগেবাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্সের এবারের আলোচনার শিরোনাম ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা সবাই এখন এই বিষয়টি নিয়েই ভাবছি।
১ দিন আগে
পেরুর বিচারক লুজ দেল কারমেন ইবানিয়েজ কারাঞ্জর ওপর গত জুনে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, তিনি ২০০৩ সালের পর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের অপরাধ তদন্তের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে গত এক বছরে ছয়জন আইসিসি বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১ দিন আগে