সুমন সুবহান

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ভারত সফরে যান, যা ছিল ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। এই সফরে দুই দেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে মোট ১৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে ‘রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অব লজিস্টিক সাপোর্ট’ বা ‘রেলোস’ চুক্তিটি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিরক্ষা চুক্তি দুই দেশের সামরিক বাহিনীকে পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের মাধ্যমে রসদ ও জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা দেবে। এর ফলে ভারত যেমন আর্কটিক পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে, তেমনি রাশিয়াও ভারত মহাসাগরে ভারতের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
বর্তমানে বিশ্ব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে, আর ভারত মহাসাগর অঞ্চল হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রস্থল। এ অঞ্চলে চীন তার ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ কৌশল ও ‘ব্লু ওয়াটার নেভি’ নিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে, যা দিল্লির জন্য সরাসরি নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে গঠিত ‘কোয়াড’ জোট চীনের সামরিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে চাইছে। তবে কোয়াডের পশ্চিমা অক্ষের সমান্তরালে ভারত তার দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে রেলোস চুক্তি সই করে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে।
এই চুক্তি কেবল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নয়, বরং ভারত মহাসাগর থেকে আর্কটিক পর্যন্ত বিস্তৃত এক ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের সমীকরণ। রেলোস চুক্তি কোয়াডের পশ্চিমা কৌশল এবং রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি—এই দুই বিপরীতমুখী স্রোতের মধ্যবিন্দুতে দাঁড়িয়ে ভারতকে তার ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ বজায় রাখার এক ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কোয়াড: পশ্চিমা সহযোগিতা ও চীনকে ঘিরে ফেলার কৌশল
‘কোয়াড’ (চতুর্ভুজ নিরাপত্তা সংলাপ) জোটের মাধ্যমে ভারত সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এ জোটের মূল লক্ষ্য হলো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে অবাধ, উন্মুক্ত ও নিয়মভিত্তিক রাখা এবং এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করা। কোয়াড দেশগুলোর মধ্যে একাধিক সামরিক মহড়া ও লজিস্টিকস চুক্তির মাধ্যমে উচ্চমানের ‘আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা’ নিশ্চিত হয়েছে, যা চীনের বিরুদ্ধে সমন্বিত নৌ-নজরদারি ও অভিযানের জন্য কৌশলগতভাবে অপরিহার্য। এই জোটের মূল লক্ষ্য ও সামরিক তাৎপর্যগুলো হলো:
ক. লজিস্টিকস চুক্তি: ভারত কোয়াড জোটের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা কূটনীতিকে এক নতুন স্তরে উন্নীত করেছে। এরই অংশ হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিকস চুক্তি সই করেছে। এসব চুক্তির মূল উদ্দেশ্য পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা বাড়ানো। এর ফলে ভারতীয় সামরিক বাহিনী ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থানগুলো, যেমন—যুক্তরাষ্ট্রের ডিয়েগো গার্সিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার বন্দরগুলোতে জ্বালানি, মেরামত ও রসদ সরবরাহের সুবিধা নিতে পারে। এটি চীনের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দূরপাল্লার নৌ-অভিযানের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
খ. আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা বৃদ্ধি: নিয়মিত ‘মালাবার নৌ-মহড়া’র মাধ্যমে কোয়াড দেশগুলোর সামরিক বাহিনীর মধ্যে উচ্চস্তরের আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। এসব মহড়ায় জটিল সামরিক কৌশল ও প্রযুক্তিগত সমন্বয় অনুশীলন করা হয়, যা চারটি দেশের নৌ, বিমান ও স্থলবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও যোগাযোগের মান উন্নত করে। এর ফলে কোয়াড দেশগুলো যেকোনো যৌথ অভিযান, মানবিক সহায়তা মিশন বা চীনকে মোকাবিলায় সমন্বিত নজরদারি কার্যক্রম সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারে।
গ. ভূ-রাজনৈতিক চাপ: কোয়াড জোট একটি সামরিক মঞ্চের চেয়েও বেশি কিছু; এটি মূলত চীনের ওপর একযোগে সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম। জোটের সম্মিলিত অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বেইজিংকে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে। এই কৌশলগত জোটের কারণে ভারতকে একা চীনের মোকাবিলা করার ঝুঁকি নিতে হয় না, কারণ পাশে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তি রয়েছে।
‘রেলোস’ চুক্তি: আর্কটিক থেকে ভারত মহাসাগরে মস্কোর পা
রাশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া রেলোস চুক্তি ভারতের কূটনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই চুক্তি মস্কোকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভারতীয় নৌঘাঁটিগুলো ব্যবহারের সুযোগ দেবে। এর ফলে একদিকে যেমন আর্কটিক পর্যন্ত ভারতের সামরিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে, তেমনি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে তৃতীয় একটি পরাশক্তির সামরিক উপস্থিতি তৈরি হওয়ায় আঞ্চলিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আসবে। রেলোস চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে স্থাপিত লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক কোয়াড চুক্তির প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করে।
ক. চুক্তির সামরিক ভিত্তি: রেলোস চুক্তির সামরিক ভিত্তি অত্যন্ত সুদৃঢ়। এটি ভারত ও রাশিয়ার সামরিক ইউনিটগুলোর মধ্যে পারস্পরিক লজিস্টিকস সহায়তা আদান-প্রদানের একটি আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উভয় দেশের সামরিক ইউনিট, যুদ্ধজাহাজ, সামরিক বিমান এবং কর্মীরা প্রয়োজনে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি, বন্দর ও বিমানঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবেন। এই সুবিধার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি সরবরাহ, যুদ্ধ সরঞ্জামের মেরামত, খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় রসদ সহায়তা।
খ. আর্কটিক পর্যন্ত প্রসারিত সামরিক শক্তি: রেলোস চুক্তির মাধ্যমে ভারত এক বিশাল কৌশলগত সুবিধা অর্জন করেছে, আর তা হলো রাশিয়ার আর্কটিক ও দূরপ্রাচ্যের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রবেশাধিকার। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীকে আর্কটিক অঞ্চলের ‘নর্দান সি রুট’-এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের দিকে কার্যকরভাবে নজর দিতে সক্ষম করবে। এই নতুন সামুদ্রিক রুট বিশ্ববাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, ভারতের সামরিক উপস্থিতি তার জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খল এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য কৌশলগত স্বার্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।
গ. ভারত মহাসাগরে নতুন অক্ষ: রেলোস চুক্তি মস্কো ও দিল্লির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অক্ষের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরের কৌশলগত ভারতীয় বন্দরগুলোতে প্রবেশাধিকার পেল। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে যখন পশ্চিমা দেশগুলোতে রাশিয়ার সামরিক প্রবেশাধিকার সংকুচিত, তখন ভারত মহাসাগরে লজিস্টিক সুবিধা পাওয়া মস্কোকে বৈশ্বিক সামরিক মানচিত্রে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—এই সামরিক উপস্থিতি ভারত মহাসাগরে চীনের একতরফা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি তৃতীয় শক্তির ভারসাম্য যোগ করবে।
ঘ. সামরিক সরঞ্জামের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ: সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে রেলোস চুক্তি ভারতের জন্য অপরিহার্য। ঐতিহাসিকভাবে ভারতের সামরিক সরঞ্জামের একটি বিশাল অংশ রাশিয়ার তৈরি। এসব সামরিক প্ল্যাটফর্মের কার্যকর সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জামগুলোর দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে।
ভারসাম্যের কূটনীতি: দুই অক্ষের মধ্যে ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন
কোয়াড ও রেলোস—এই দুটি বিপরীতমুখী সামরিক অক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে ভারত তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট। এই দ্বিমুখী নীতি ভারতের কূটনীতির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেখানে দিল্লি কোনো একটি সামরিক ব্লকের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী মিত্র নির্বাচন করে।
ক. চীনের প্রতি কৌশলগত চাপ: ভারতের ভারসাম্যের কূটনীতির মাধ্যমে চীনের ওপর দ্বিমুখী কৌশলগত চাপ সৃষ্টি সম্ভব হয়। ভারত একদিকে কোয়াড জোটের মাধ্যমে চীনের বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা বাড়াতে পারে; অন্যদিকে রেলোস চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্যাক চ্যানেল’ বা বিকল্প সাপ্লাই নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করে। এটি মস্কোর মধ্যস্থতায় চীনের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত সংঘাত এড়াতে কূটনৈতিক বিকল্পের পথ খোলা রাখে।
খ. ব্লক রাজনীতি এড়ানো: রেলোস চুক্তির মাধ্যমে ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা কোনো একটি সামরিক ব্লকের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকবে না। কোয়াডে সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে ভারত পশ্চিমা ব্লকের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বলে যে ধারণা তৈরি হয়েছিল, রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি তা নাকচ করে দিয়েছে।
গ. শক্তিশালী দর-কষাকষির ক্ষমতা: দুটি ভিন্ন অক্ষ—পশ্চিমা কোয়াড জোট এবং রাশিয়ার সঙ্গে রেলোস চুক্তি—দিল্লির জন্য বিশেষ কূটনৈতিক সুবিধা এনে দিয়েছে। দুটি প্রধান সামরিক শক্তির সঙ্গেই কৌশলগত সম্পর্ক রেখে ভারত আন্তর্জাতিক দরবারে দর-কষাকষির ক্ষমতা বাড়িয়েছে। এর ফলে ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া—উভয়ের কাছ থেকেই অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি ও সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়
ভারতের রেলোস চুক্তি এবং কোয়াডে সক্রিয়তা—এই দ্বিমুখী নীতি ওয়াশিংটনের জন্য এক জটিল কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একদিকে চীনকে মোকাবিলায় ভারতের সহযোগিতা অপরিহার্য, অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে দিল্লির সামরিক ঘনিষ্ঠতা মার্কিন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ক. রেলোস চুক্তি ও মার্কিন কৌশলগত জটিলতা: রেলোস চুক্তির মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে মস্কোকে সুবিধা দেওয়াকে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতির পরিপন্থী মনে করে। রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে। এমন পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করতে পারে। তবে তা করলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া ভারতের রুশ অস্ত্রনির্ভরতা ঐতিহাসিক ও কাঠামোগত, যা দ্রুত ছিন্ন করা সম্ভব নয়। অতিরিক্ত চাপ দিলে ভারত আরও বেশি রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে পারে, যা কোয়াড জোটকে দুর্বল করবে।
খ. যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ করণীয়:
১. চাপের পরিবর্তে প্রযুক্তি সহযোগিতা: যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ভারতকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে আরও উদার হওয়া। উচ্চমানের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি দ্রুত সরবরাহ করলে ভারত রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে উৎসাহিত হবে।
২. নমনীয়তা ও স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি: ওয়াশিংটনকে অবশ্যই ভারতের স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানাতে হবে। ভারত মহাসাগরে রাশিয়ার সীমিত লজিস্টিক উপস্থিতিকে চীনের বিশাল প্রভাবের তুলনায় ‘কম ক্ষতিকারক’ হিসেবে দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৩. অ-সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব: কোয়াড জোটকে কেবল সামরিক প্রতিপক্ষ হিসেবে না দেখে অর্থনৈতিক সংযোগ, মানবিক সহায়তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি এখন দ্রুত বহুমেরুকরণের দিকে এগোচ্ছে। ভারতের কোয়াড ও রেলোস চুক্তি একই সঙ্গে বজায় রাখার নীতি দিল্লির ভারসাম্যের কূটনীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এই পদক্ষেপ ভারতকে কেবল চীনকে মোকাবিলায় সক্ষমতা দেয়নি, বরং তাকে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র ও অপরিহার্য খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শেষ পর্যন্ত এটি প্রমাণ করে যে ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণ কোনো একক শক্তি বা ব্লকের হাতে থাকবে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ভারত সফরে যান, যা ছিল ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। এই সফরে দুই দেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে মোট ১৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে ‘রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অব লজিস্টিক সাপোর্ট’ বা ‘রেলোস’ চুক্তিটি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিরক্ষা চুক্তি দুই দেশের সামরিক বাহিনীকে পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের মাধ্যমে রসদ ও জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা দেবে। এর ফলে ভারত যেমন আর্কটিক পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে, তেমনি রাশিয়াও ভারত মহাসাগরে ভারতের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
বর্তমানে বিশ্ব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে, আর ভারত মহাসাগর অঞ্চল হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রস্থল। এ অঞ্চলে চীন তার ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ কৌশল ও ‘ব্লু ওয়াটার নেভি’ নিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে, যা দিল্লির জন্য সরাসরি নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে গঠিত ‘কোয়াড’ জোট চীনের সামরিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে চাইছে। তবে কোয়াডের পশ্চিমা অক্ষের সমান্তরালে ভারত তার দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে রেলোস চুক্তি সই করে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে।
এই চুক্তি কেবল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নয়, বরং ভারত মহাসাগর থেকে আর্কটিক পর্যন্ত বিস্তৃত এক ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের সমীকরণ। রেলোস চুক্তি কোয়াডের পশ্চিমা কৌশল এবং রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি—এই দুই বিপরীতমুখী স্রোতের মধ্যবিন্দুতে দাঁড়িয়ে ভারতকে তার ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ বজায় রাখার এক ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কোয়াড: পশ্চিমা সহযোগিতা ও চীনকে ঘিরে ফেলার কৌশল
‘কোয়াড’ (চতুর্ভুজ নিরাপত্তা সংলাপ) জোটের মাধ্যমে ভারত সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এ জোটের মূল লক্ষ্য হলো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে অবাধ, উন্মুক্ত ও নিয়মভিত্তিক রাখা এবং এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করা। কোয়াড দেশগুলোর মধ্যে একাধিক সামরিক মহড়া ও লজিস্টিকস চুক্তির মাধ্যমে উচ্চমানের ‘আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা’ নিশ্চিত হয়েছে, যা চীনের বিরুদ্ধে সমন্বিত নৌ-নজরদারি ও অভিযানের জন্য কৌশলগতভাবে অপরিহার্য। এই জোটের মূল লক্ষ্য ও সামরিক তাৎপর্যগুলো হলো:
ক. লজিস্টিকস চুক্তি: ভারত কোয়াড জোটের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা কূটনীতিকে এক নতুন স্তরে উন্নীত করেছে। এরই অংশ হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিকস চুক্তি সই করেছে। এসব চুক্তির মূল উদ্দেশ্য পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা বাড়ানো। এর ফলে ভারতীয় সামরিক বাহিনী ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থানগুলো, যেমন—যুক্তরাষ্ট্রের ডিয়েগো গার্সিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার বন্দরগুলোতে জ্বালানি, মেরামত ও রসদ সরবরাহের সুবিধা নিতে পারে। এটি চীনের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দূরপাল্লার নৌ-অভিযানের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
খ. আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা বৃদ্ধি: নিয়মিত ‘মালাবার নৌ-মহড়া’র মাধ্যমে কোয়াড দেশগুলোর সামরিক বাহিনীর মধ্যে উচ্চস্তরের আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। এসব মহড়ায় জটিল সামরিক কৌশল ও প্রযুক্তিগত সমন্বয় অনুশীলন করা হয়, যা চারটি দেশের নৌ, বিমান ও স্থলবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও যোগাযোগের মান উন্নত করে। এর ফলে কোয়াড দেশগুলো যেকোনো যৌথ অভিযান, মানবিক সহায়তা মিশন বা চীনকে মোকাবিলায় সমন্বিত নজরদারি কার্যক্রম সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারে।
গ. ভূ-রাজনৈতিক চাপ: কোয়াড জোট একটি সামরিক মঞ্চের চেয়েও বেশি কিছু; এটি মূলত চীনের ওপর একযোগে সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম। জোটের সম্মিলিত অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বেইজিংকে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে। এই কৌশলগত জোটের কারণে ভারতকে একা চীনের মোকাবিলা করার ঝুঁকি নিতে হয় না, কারণ পাশে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তি রয়েছে।
‘রেলোস’ চুক্তি: আর্কটিক থেকে ভারত মহাসাগরে মস্কোর পা
রাশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া রেলোস চুক্তি ভারতের কূটনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই চুক্তি মস্কোকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভারতীয় নৌঘাঁটিগুলো ব্যবহারের সুযোগ দেবে। এর ফলে একদিকে যেমন আর্কটিক পর্যন্ত ভারতের সামরিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে, তেমনি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে তৃতীয় একটি পরাশক্তির সামরিক উপস্থিতি তৈরি হওয়ায় আঞ্চলিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আসবে। রেলোস চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে স্থাপিত লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক কোয়াড চুক্তির প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করে।
ক. চুক্তির সামরিক ভিত্তি: রেলোস চুক্তির সামরিক ভিত্তি অত্যন্ত সুদৃঢ়। এটি ভারত ও রাশিয়ার সামরিক ইউনিটগুলোর মধ্যে পারস্পরিক লজিস্টিকস সহায়তা আদান-প্রদানের একটি আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উভয় দেশের সামরিক ইউনিট, যুদ্ধজাহাজ, সামরিক বিমান এবং কর্মীরা প্রয়োজনে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি, বন্দর ও বিমানঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবেন। এই সুবিধার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি সরবরাহ, যুদ্ধ সরঞ্জামের মেরামত, খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় রসদ সহায়তা।
খ. আর্কটিক পর্যন্ত প্রসারিত সামরিক শক্তি: রেলোস চুক্তির মাধ্যমে ভারত এক বিশাল কৌশলগত সুবিধা অর্জন করেছে, আর তা হলো রাশিয়ার আর্কটিক ও দূরপ্রাচ্যের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রবেশাধিকার। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীকে আর্কটিক অঞ্চলের ‘নর্দান সি রুট’-এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের দিকে কার্যকরভাবে নজর দিতে সক্ষম করবে। এই নতুন সামুদ্রিক রুট বিশ্ববাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, ভারতের সামরিক উপস্থিতি তার জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খল এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য কৌশলগত স্বার্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।
গ. ভারত মহাসাগরে নতুন অক্ষ: রেলোস চুক্তি মস্কো ও দিল্লির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অক্ষের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরের কৌশলগত ভারতীয় বন্দরগুলোতে প্রবেশাধিকার পেল। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে যখন পশ্চিমা দেশগুলোতে রাশিয়ার সামরিক প্রবেশাধিকার সংকুচিত, তখন ভারত মহাসাগরে লজিস্টিক সুবিধা পাওয়া মস্কোকে বৈশ্বিক সামরিক মানচিত্রে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—এই সামরিক উপস্থিতি ভারত মহাসাগরে চীনের একতরফা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি তৃতীয় শক্তির ভারসাম্য যোগ করবে।
ঘ. সামরিক সরঞ্জামের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ: সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে রেলোস চুক্তি ভারতের জন্য অপরিহার্য। ঐতিহাসিকভাবে ভারতের সামরিক সরঞ্জামের একটি বিশাল অংশ রাশিয়ার তৈরি। এসব সামরিক প্ল্যাটফর্মের কার্যকর সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জামগুলোর দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে।
ভারসাম্যের কূটনীতি: দুই অক্ষের মধ্যে ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন
কোয়াড ও রেলোস—এই দুটি বিপরীতমুখী সামরিক অক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে ভারত তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট। এই দ্বিমুখী নীতি ভারতের কূটনীতির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেখানে দিল্লি কোনো একটি সামরিক ব্লকের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী মিত্র নির্বাচন করে।
ক. চীনের প্রতি কৌশলগত চাপ: ভারতের ভারসাম্যের কূটনীতির মাধ্যমে চীনের ওপর দ্বিমুখী কৌশলগত চাপ সৃষ্টি সম্ভব হয়। ভারত একদিকে কোয়াড জোটের মাধ্যমে চীনের বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা বাড়াতে পারে; অন্যদিকে রেলোস চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্যাক চ্যানেল’ বা বিকল্প সাপ্লাই নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করে। এটি মস্কোর মধ্যস্থতায় চীনের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত সংঘাত এড়াতে কূটনৈতিক বিকল্পের পথ খোলা রাখে।
খ. ব্লক রাজনীতি এড়ানো: রেলোস চুক্তির মাধ্যমে ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা কোনো একটি সামরিক ব্লকের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকবে না। কোয়াডে সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে ভারত পশ্চিমা ব্লকের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বলে যে ধারণা তৈরি হয়েছিল, রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি তা নাকচ করে দিয়েছে।
গ. শক্তিশালী দর-কষাকষির ক্ষমতা: দুটি ভিন্ন অক্ষ—পশ্চিমা কোয়াড জোট এবং রাশিয়ার সঙ্গে রেলোস চুক্তি—দিল্লির জন্য বিশেষ কূটনৈতিক সুবিধা এনে দিয়েছে। দুটি প্রধান সামরিক শক্তির সঙ্গেই কৌশলগত সম্পর্ক রেখে ভারত আন্তর্জাতিক দরবারে দর-কষাকষির ক্ষমতা বাড়িয়েছে। এর ফলে ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া—উভয়ের কাছ থেকেই অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি ও সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়
ভারতের রেলোস চুক্তি এবং কোয়াডে সক্রিয়তা—এই দ্বিমুখী নীতি ওয়াশিংটনের জন্য এক জটিল কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একদিকে চীনকে মোকাবিলায় ভারতের সহযোগিতা অপরিহার্য, অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে দিল্লির সামরিক ঘনিষ্ঠতা মার্কিন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ক. রেলোস চুক্তি ও মার্কিন কৌশলগত জটিলতা: রেলোস চুক্তির মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে মস্কোকে সুবিধা দেওয়াকে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতির পরিপন্থী মনে করে। রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে। এমন পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করতে পারে। তবে তা করলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া ভারতের রুশ অস্ত্রনির্ভরতা ঐতিহাসিক ও কাঠামোগত, যা দ্রুত ছিন্ন করা সম্ভব নয়। অতিরিক্ত চাপ দিলে ভারত আরও বেশি রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে পারে, যা কোয়াড জোটকে দুর্বল করবে।
খ. যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ করণীয়:
১. চাপের পরিবর্তে প্রযুক্তি সহযোগিতা: যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ভারতকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে আরও উদার হওয়া। উচ্চমানের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি দ্রুত সরবরাহ করলে ভারত রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে উৎসাহিত হবে।
২. নমনীয়তা ও স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি: ওয়াশিংটনকে অবশ্যই ভারতের স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানাতে হবে। ভারত মহাসাগরে রাশিয়ার সীমিত লজিস্টিক উপস্থিতিকে চীনের বিশাল প্রভাবের তুলনায় ‘কম ক্ষতিকারক’ হিসেবে দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৩. অ-সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব: কোয়াড জোটকে কেবল সামরিক প্রতিপক্ষ হিসেবে না দেখে অর্থনৈতিক সংযোগ, মানবিক সহায়তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি এখন দ্রুত বহুমেরুকরণের দিকে এগোচ্ছে। ভারতের কোয়াড ও রেলোস চুক্তি একই সঙ্গে বজায় রাখার নীতি দিল্লির ভারসাম্যের কূটনীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এই পদক্ষেপ ভারতকে কেবল চীনকে মোকাবিলায় সক্ষমতা দেয়নি, বরং তাকে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র ও অপরিহার্য খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শেষ পর্যন্ত এটি প্রমাণ করে যে ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণ কোনো একক শক্তি বা ব্লকের হাতে থাকবে না।

বিশ্ব রাজনীতির দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশের পর এ আলোচনা আরও জোরালো হয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) তাদের বহর আধুনিকায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। শক্তিশালী অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ইউরোফাইটার টাইফুন কিনতে ইতালীয় প্রতিষ্ঠান লিওনার্দো এসপিও’র সঙ্গে চুক্তি করেছে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিমানবাহিনী সদর দপ্তরে এই সম্মতিপত্র সই করা হয়।
২ দিন আগে
চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ৩৩ পৃষ্ঠার নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএস) প্রকাশ করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা ‘আমেরিকা সবার আগে’ ধারণাকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে।
৩ দিন আগে
ইসরায়েল গাজাকে নিরাপত্তা সমস্যা হিসেবে দেখছে, আর ফিলিস্তিনিরা একে দেখছে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে। এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির মেরুকরণ যতদিন না কমবে, ততদিন যেকোনো যুদ্ধবিরতিই হবে ক্ষণস্থায়ী।
৩ দিন আগে