leadT1ad

খুলনায় আদালতে আসা দুজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
খুলনা

খুলনা আদালতের সামনে এই স্থানে দুজনকে গুলি করা হয়। স্ট্রিম ছবি

খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে দুজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন ফজলে রাব্বি রাজন ও হাসিব হাওলাদার। তাদের দুজনের নামেই হত্যাসহ ছয়টি করে মামলা রয়েছে। একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দুজন আদালত থেকে বেরিয়ে ফটকের সামনে মোটরসাইকেল রেখে চা পান করতে দাঁড়ান। এ সময় চার থেকে পাঁচজন হেঁটে এসে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেলে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে সটকে পড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর অবস্থায় অন্যজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসিবের ভাই শাকিল হাওলাদার জানান, কিছুদিন আগে তাঁর ভাইয়ের নামে একটি অস্ত্র মামলা হয়। সেই মামলায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন।

খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার শিহাব করিম বলেন, কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, কেন গুলি করা হয়েছে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

কারা জড়িত থাকতে পারে জানতে চাইলে ওসি বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। নিহত দুজনই ‘সন্ত্রাসী পলাশ গ্রুপের সহযোগী’। তারা দুজনই আড়াই মাস আগে জামিনে কারাগার থেকে বের হন।

এদিকে, আদালতের মতো স্পর্শকাতর স্থানে এমন হত্যাকাণ্ডে পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরাও।

নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি নেই, আতঙ্কে নগরবাসী

খুলনায় কোনোভাবেই উন্নতি হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। নগরবাসী বলছেন, প্রতি রাতেই শহরের কোথাও না কোথাও গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা বা সংঘর্ষে ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা নামলেই নগরীতে ভর করে অজানা আতঙ্ক। দিনের বেলাতেও প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা ঘটছে।

পুলিশের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর জামিনে বের হওয়া অপরাধী ও দীর্ঘদিন ‘আত্মগোপনে’ থাকা সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে সংগঠিত হয়েছে। তারা নির্বিঘ্নে মাদক বেচাকেনা, আধিপত্য বিস্তার, পেশিশক্তির প্রদর্শন, হামলা-চাঁদাবাজিসহ একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের হাতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র।

পুলিশের দেওয়া তথ্যানুসারে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ১৫ মাসে খুলনা নগরেই ৪৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি বছরের নভেম্বরে ছয়, অক্টোবরে চার, সেপ্টেম্বরে এক, আগস্টে পাঁচ, জুলাইয়ে দুই, জুনে তিন, মে মাসে পাঁচ, এপ্রিলে দুই, ফেব্রুয়ারিতে এক এবং জানুয়ারিতে দুজন হত্যার শিকার হন। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে গুলি, ধারালো অস্ত্র ও মারধরে আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ।

উপজেলাগুলোর পরিস্থিতিও একই

খুলনার উপজেলাগুলোতেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে জেলায়ও ৪৫ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জনকেই গুলি করে বা কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা রূপসা উপজেলায়। এখানে গত দুই মাসে ৫ খুনের মধ্যে চার ক্ষেত্রেই গুলি করা হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, শহরে একের পর এক ‘টার্গেট কিলিং’ হচ্ছে। খুন, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অবৈধ অস্ত্রের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পুরো শহর জুড়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়। ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, এমনকি ঘুমের মধ্যেও মানুষ খুন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দিনের আলোতেও মানুষ আতঙ্কে থাকে। কারণ, অপরাধীরা প্রকাশ্যে অপরাধ করলেও পুলিশের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

তবে খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খানের দাবি, বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ১৫ মাসে ৪৫টির মতো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর অধিকাংশই ঘটেছে মাদক ও পারিবারিক রেষারেষিকে কেন্দ্র করে। আসামিরা আদালতে এমন স্বীকারোক্তিই দিয়েছে।

খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (দক্ষিণ) সুদর্শন কুমার রায় বলেন, পুলিশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে হত্যাকাণ্ডগুলো তদন্ত করছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাঁর দাবি, নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সতর্ক হয়ে কাজ করছে পুলিশ। এতে তদন্ত শেষ করতে সময় বেশি লাগছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত