leadT1ad

দিল্লি থেকে আগরতলা: বাংলাদেশ ইস্যুতে আজ যা যা ঘটল

ইনস্ক্রিপ্ট প্রতিবেদক
ইনস্ক্রিপ্ট প্রতিবেদক

ভারতে আজকের বিক্ষোভ চলাকালীন চিত্র। সংগৃহীত

দিল্লি থেকে কলকাতা, শিলিগুড়ি থেকে আগরতলা—মঙ্গলবার ভারতের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের সামনে হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর, পুলিশের লাঠিপেটা সব মিলিয়ে এক উত্তেজনাকর দিন পার হয়েছে। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার খবরও ছিল। সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা দেখা গেছে কলকাতায়। এসব ঘটনার চিত্র উঠে এসেছে ঢাকা-নয়াদিল্লির কূটনৈতিক বার্তালাপেও।

এই ব্যাপারে ঢাকার বক্তব্য স্পষ্ট—ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস, উপহাইকমিশন ও ভিসা কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক রীতি-নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কূটনৈতিক মিশনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ভারতের দায়িত্ব। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি সেই দায়িত্ব পালনে ঘাটতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, কূটনৈতিক মিশনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ভারতের দায়িত্ব এবং সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি সেই দায়িত্ব পালনে ঘাটতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

যে প্রতিবাদকে সামনে রেখে বিক্ষোভ

গত কয়েক দিনে ভারতের একাধিক শহরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্থাপনার সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বিক্ষোভের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ। বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রসঙ্গ। আর এমন নির্যাতনের উদাহরণ হিসেবে সামনে রাখা হয়েছে সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা করা দীপু চন্দ্র দাসের ঘটনাকে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ব্যর্থ হয়েছে। আর সেই ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানাতেই তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন।

বিক্ষোভের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি—ভারতের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভের সময় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কূটনৈতিক স্থাপনার সামনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং কোথাও কোথাও ভিসা ও কনস্যুলার পরিষেবা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

এদিকে, এসব ঘটনায় কেবল বাংলাদেশি কূটনীতিক ও কর্মীদের নিরাপত্তাই প্রশ্নের মুখে পড়েনি, বরং সাধারণ নাগরিকদের পরিষেবা পাওয়ার অধিকারও ক্ষুণ্ন হয়েছে। ঢাকা মনে করছে, এই ধরনের পরিস্থিতি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা পারস্পরিক আস্থার ওপর আঘাত হানছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের রাষ্ট্রদূতকে ভিয়েনা কনভেনশনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সেই কনভেনশনে স্পষ্টভাবে বলা আছে—কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের বাধ্যবাধকতা। ঢাকার মতে, শুধু পুলিশ মোতায়েন করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সে জন্য আগাম ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ চায়, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

বাংলাদেশ সরকারের ভাষ্য, এসব ঘটনা কেবল প্রশাসনিক সমস্যা নয়, বরং কূটনৈতিক স্তরে গভীর উদ্বেগের কারণ। তাই শিলিগুড়ির ঘটনার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কলকাতা দপ্তরে কূটনৈতিক চিঠিতে ভিসা কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

শিলিগুড়ির বিক্ষোভ

ভারতের সামগ্রিক উত্তেজনার একটি বড় উদাহরণ গতকাল সোমবারের (২২ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা আবেদন কেন্দ্র ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনা। গতকাল শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও স্থানীয় কয়েকটি সংগঠনের ডাকে জমায়েত হয় কয়েকশো মানুষ।

সংগঠকদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলার প্রতিবাদ জানাতেই এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। তাঁদের বক্তব্যে ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক যুবকের হত্যাকাণ্ড বিশেষভাবে উঠে আসে, যা নিয়ে ভারতের বিভিন্ন অংশেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

জমায়েত শেষে বিক্ষোভকারীরা মিছিল করে শিলিগুড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশের ভিসা আবেদন কেন্দ্রের দিকে যান। শুরুতে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত থাকলেও, ভিসা কেন্দ্রের সামনে পৌঁছানোর পর উত্তেজনা বাড়তে থাকে। স্লোগান, অভিযোগ আর দাবির মধ্যে পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের একাংশের দাবি ছিল, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলতে থাকলে ভারতের মাটিতে বসে বাংলাদেশের ভিসা পরিষেবা চালু রাখা অনৈতিক।

বিক্ষোভের একপর্যায়ে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভিসা কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। তারা সেদিনের জন্য ভিসা সংক্রান্ত সমস্ত কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানায়। প্রতিনিধি দলের বক্তব্য ছিল, যতদিন না বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধ হচ্ছে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে, ততদিন এই কেন্দ্র খোলা রাখা উচিত নয়। পাশাপাশি তাঁরা ভিসা কেন্দ্রের বাইরে থাকা বাংলাদেশ-সংক্রান্ত ব্যানার ও সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়ার দাবিও তোলে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে শিলিগুড়ির ভিসা কেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা ডিইউ ডিজিটাল নিরাপত্তাজনিত কারণে গতকাল দুপুরের আগেই কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়।

কর্তৃপক্ষ জানায়, কর্মী ও আবেদনকারীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভিসা কেন্দ্র পুনরায় চালু করা হবে কি না, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

দিল্লি ও আগরতলায়ও পরিষেবা বন্ধ

একই সময় দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন সব ধরনের কনস্যুলার পরিষেবা ও ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ত্রিপুরার আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের ভিসা ও কনস্যুলার বিভাগও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে। চিকিৎসা, শিক্ষা বা পারিবারিক প্রয়োজনে যাঁরা বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াতের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ করেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মঙ্গলবারের বিক্ষোভ

গতকালের পর আজও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে। এদিন কলকাতা ও আসামের একাধিক জেলায় হিন্দুত্ববাদী ও বাঙালি সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সর্বত্রই এক দাবি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার।

এদিকে, কলকাতায় আজ দুপুরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর মিছিল ও উত্তেজনার ঘটনার পর, সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের অভিমুখে আলাদা কর্মসূচি দেয় বামপন্থি দলগুলি। পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে এই মিছিল উপদূতাবাস থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরেই আটকে যায়। তবে দিনের আগের ঘটনার সঙ্গে এক্ষেত্রে বড় পার্থক্য ছিল, বামপন্থি কর্মী-সমর্থকরা ব্যারিকেড ভাঙা বা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পথে হাঁটেননি। সমাবেশে উপস্থিত বামপন্থি নেতাদের বক্তব্যে মূলত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ উঠে আসে।

তাঁদের ভাষায়, প্রতিবাদের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশে বেড়ে চলা ধর্মীয় উগ্রতা। তাঁরা স্পষ্ট করে জানান, ধর্মীয় মৌলবাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে আরেক ধরনের সাম্প্রদায়িক কট্টরতার জন্ম দেওয়া চলতে পারে না। উগ্রতার মোকাবিলায় যুক্তি, গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধই একমাত্র পথ।

বক্তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগের প্রসঙ্গ তোলেন এবং একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ওপর হামলার ঘটনাগুলোর তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁদের বক্তব্যে বারবার উঠে আসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংস্কৃতির ওপর আঘাতের প্রশ্ন।

বামপন্থি নেতৃত্বের কণ্ঠে শোনা যায়, সমাজকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দেয় এমন রাজনীতি কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না।

এর আগে সকালে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের বিক্ষোভকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ডেপুটি হাইকমিশন এলাকা থেকে প্রায় ২০০ মিটার জুড়ে তিন স্তরের ব্যারিকেড বসিয়েছিল। কিন্তু বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। উত্তেজনার মধ্যে বিক্ষোভকারীরা প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাঁরা দ্বিতীয় ব্যারিকেডের কাছাকাছি পৌঁছনোর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। ঘটনার পর বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে যেহেতু একটা উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সে কারণে আজ পুলিশ কমিশনার লালবাজারে বৈঠক করেন। বৈঠকে কীভাবে নিরাপত্তা দেওয়া যায় তার পরিকল্পনা করা হয়।

কলকাতার পাশাপাশি রাজধানী দিল্লির চানক্যপুরী এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনেও আজ দুপুরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল-সহ একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিক্ষোভে নামে। বিক্ষোভ চলাকালীন ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাইকমিশন ভবন থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয়। পরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ঘিরে সতর্কতা বাড়ানো হয়। হাইকমিশনের সামনে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা সেখানে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছেন এবং একাধিক ব্যারিকেড বসানো হয়েছে।

কলকাতা ও দিল্লি—দু’টি শহরেই বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ঘিরে দিনভর উত্তেজনা, প্রতিবাদ ও কড়া নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসে। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের কর্মসূচির ধরন ও অবস্থানে স্পষ্ট পার্থক্য ছিল।

চাপে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক

ভারতের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের সামনে চলতে থাকা বিক্ষোভ এখন আর কেবল সীমান্তের ওপারের ঘটনাপ্রবাহের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং তা সরাসরি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সংবেদনশীলতায় আঘাত হানছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ, তার প্রতিবাদে আবেগী প্রতিক্রিয়া এবং সেই আবেগের অভিঘাতে কূটনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া— এই ত্রিমুখী চাপ দুই দেশের সম্পর্ককে এক জটিল মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে।

এই পরিস্থিতি কত দ্রুত প্রশমিত হবে, কূটনৈতিক স্তরে কী ধরনের সমাধান বেরিয়ে আসে এবং দুই দেশ কীভাবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর পথ খোঁজে—সেদিকেই এখন নজর রাজনৈতিক মহল, কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং সাধারণ মানুষের।

যা বলছেন হিন্দুত্ববাদী নেতারা

বিক্ষোভের ব্যাপারে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্য সাগ্নিক বিশ্বাস ভাষ্য, ‘দীপু চন্দ্র দাসের মৃত্যুর ঘটনার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করায়, প্রশাসন আমাদের আঘাত করেছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই মিছিল করে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাচ্ছিলাম। বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদে হরগোবিন্দ দাসও সেই জেহাদিদের হাতে মারা গেল। কেন?’

তিনি বলেন, ‘জেহাদিরা আসলে পুলিশ টেবিলের তলায় লুকিয়ে যায়। আর হিন্দুরা রাস্তায় নামলে এই প্রশাসন মারমুখী হয়ে যায়। হিন্দুরা কি সারাজীবন মারই খেয়ে যাবে?’

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যেভাবে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, তা প্রমাণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও একই মানসিকতায় পরিচালিত হচ্ছে।’

তিনি জানান, বেকবাগান এলাকায় পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জে অন্তত আট থেকে দশজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের চিত্তরঞ্জন, পিজি, এনআরএস এবং প্রয়োজনে কল্যাণী এইমস ও বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনজন হিন্দু কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

বিজেপির এ নেতা বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা কোনোভাবেই ডেপুটি হাইকমিশনের সুরক্ষিত ব্যারিকেড ভাঙেননি, তবু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিন্দু পরিচয় ও গেরুয়া পতাকা বহনের কারণে বেছে বেছে লাঠিচার্জ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জলকামান বা ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিকল্প ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পিতভাবে এই বর্বরতা চালানো হয়েছে, যা সরকারের হিন্দু-বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট করে।’

দীপু দাসের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বিজেপি প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি জানান, পরিবারের সঙ্গে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করবেন এবং আইনি ও আর্থিক সহায়তার বিষয়েও উদ্যোগ নেবেন। তিনি দেশ-বিদেশের সমস্ত হিন্দু সমাজকে শান্তিপূর্ণভাবে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত