
.png)

সারাদেশে বাউল শিল্পীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সম্প্রীতির যাত্রার পূর্ব নির্ধারিত আয়োজন 'গানের আর্তনাদ' অনুষ্ঠানে ‘জুলাই মঞ্চ’ বাধা প্রদান করে ও পাল্টা সমাবেশ করতে শুরু করে। তখন ধস্তাধস্তি ও সম্প্রীতির যাত্রার ব্যানার ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পরে এরা কি নেমে ছিলো রাস্তায়: ফরহাদ মজহার

বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাঁর উপযুক্ত শাস্তি দাবির জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। শনিবার (২৯ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেএ দাবি জানায় দলটি।

মানিকগঞ্জের বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের ঘটনা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সহনশীলতার কফিনে আরও একটি পেরেক ঠুকে দিয়েছে। গত ৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওরে পালাগানের আসরে আল্লাহকে নিয়ে কথিত ‘কটূক্তি’র অভিযোগে ১৯ নভেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাউল আবুল সরকারের ‘আল্লাহদ্রোহী, অবমাননাকর ও ঈমান-বিধ্বংসী’ বক্তব্যের কারণে সৃষ্ট ক্ষোভের জেরে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়াকে আইনের শাসন রক্ষার স্বস্তিদায়ক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।

বাউল শিল্পী মহারাজা আবুল সরকারকে সম্প্রতি ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ—তিনি আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। বাস্তবতা হলো, চার ঘণ্টার দীর্ঘ একটি পালাগান থেকে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ কেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার এবং মানিকগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর দুই স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে ‘গানের আর্তনাদ’ নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ‘সম্প্রীতি যাত্রা’।

মানিকগঞ্জে প্রখ্যাত পালাকার আবুল সরকারকে ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত সারাদেশ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার ঘোষণা দিয়েছেন—আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার মানে তাঁকেই গ্রেপ্তার করা।

বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলে নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি বাউলদের ওপর হামলা, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলার বিচার এবং বাউল আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে ডাকা হয়েছিল প্রতিবাদ সমাবেশ। তবে সেই সমাবেশের আগেই হামলার শিকার হয়েছেন বাউলশিল্পীরা। মারধরে আহত হয়েছেন দুজন।

মানিকগঞ্জে বাউল আবুল সরকারের গ্রেপ্তার এবং ব্লাসফেমি আইনের দাবির নেপথ্য রাজনীতি নিয়ে আজকের আলোচনা। ‘ব্লাসফেমি’ ধারণার ঐতিহাসিক উৎস কী। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে ধর্ম আইনকে ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে, তার বিশ্লেষণ দেখুন এই ভিডিওতে।

চার ঘণ্টার দীর্ঘ গভীর আধ্যাত্মিক পালাগান থেকে ৩০ সেকেন্ডের এডিটেড ভিডিওতে নামিয়ে এনে একজন বাউল আবুল সরকারকে যেভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো, তা কি কেবল ধর্মীয় বিতর্ক? নাকি এটা এক ভয়ানক ‘প্রযুক্তিগত সন্ত্রাস’?

আবুল সরকার পালাগান করেছিলেন। তিন ঘণ্টার এই পালার বিষয় ছিল ‘জীব বনাম পরম’। পালাগান হচ্ছে পাল্টাপাল্টি গান। দুটি চরিত্রের মধ্যে গানে গানে বিতর্ক হয়। জগতের গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক তর্কগুলো লোকায়ত সমাজে আলোচনা করার এটিই পাটাতন। যুগে যুগে।

বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তাঁর অনুসারীরা গতকাল রবিবার মানিকগঞ্জ শহরের প্রেস ক্লাবে সামনে মানববন্ধনের ডাক দেয়। একই স্থানে সভা আহ্বান করে হেফাজতে ইসলাম, ইমাম সমিতি, ইমাম পরিষদ, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি সংগঠন।

মানিকগঞ্জের ঘিওরে বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার ও এ ঘটনায় তাঁর ভক্তদের ওপর হামলা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ‘মব’ রুখতে কেউ কেউ সরকারের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন। আবার অনেকে সরাসরি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সমালোচনা করেছেন।

সরকার লালন উৎসব পালন করে প্রশংসা পেয়েছিল। সেই কৃতিত্ব নষ্ট হলো আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে। শাহ আলী মাজারের গাছ কাটার প্রতিবাদে যখন আমি দাঁড়াই, আমার পাশে ছিলেন আবুল সরকার। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা মানে আমাকে গ্রেপ্তার করা।